বাংলাদেশে বিশেষ বাহিনী র্যাবে কর্মরত ৫০ জনের বেশি পুলিশ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
পুলিশের সাবেক একজন কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে বর্ননা করেছেন।
তারা বলেছেন, র্যাবে পুলিশ এবং সেনা বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী থেকে আসা কর্মকর্তাদের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন বা দ্বন্দ্ব বেড়েছে কীনা- একসাথে অনেক কর্মকর্তাকে এভাবে বদলির কারণে সেই প্রশ্ন উঠতে পারে।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, র্যাবে কোন টানাপোড়েন বা সমস্যা নাই।
র্যাবে কর্মরত পুলিশের ৫১ জন কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করে তাদের বর্তমান কর্মস্থলের দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য সময় দেয়া হয়েছে ৩রা জুন পর্যন্ত।
গত বৃহস্পতিবার পুলিশের সদর দপ্তর থেকে দেয়া বদলির আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, এই কর্মকর্তারা নিধারিত সময়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর না করলে পরদিন তারা স্ট্যান্ড রিলিজের আওতায় পড়বেন।
এই বদলির তালিকায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারি পুলিশ সুপার পদের কর্মকর্তারা রয়েছেন।
পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেছুর রহমান বলেছেন, একটি সংস্থা থেকে আরেকটি সংস্থায় একসাথে এত কর্মকর্তাকে ফেরত নেয়ার নজির না থাকায় নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
“খবরটি মিডিয়াতে শোনার পরে আমার নিজের কাছেই মনে হয়েছিল যে, এটা একটি অদ্ভূত ঘটনা হয়েছে। এবং এ ধরনের বড় একটি বদলি, আবার ফেরত নিয়ে আসা-এ রকম অতীতে দেখা যায়নি। এটা শোনার পরই মনে হচ্ছিল, ভেতরে কিছু একটা হয়তো আছে” বলেন মি: রহমান।
একইসাথে তিনি বলেছেন, “তবে বাইরে থেকে যেটা মনে হচ্ছে, একটি ইনফরমেশন গ্যাপ বা তথ্যগত কোন ফাঁকফোকর এখানে ছিল। যেকারণে পুলিশ থেকে র্যাবে কিছু লোককে পোস্টিং দেয়ার পরে তাদের অনেকেই হয়তো সেখানে পদের হিসাবের বেশি বা অতিরিক্ত হয়েছেন।”
র্যাব গঠন করা হয়েছিল সেনা, বিমান, নৌবাহিনী এবং পুলিশসহ সাতটি বাহিনী থেকে কর্মকর্তা বা লোকবল নিয়ে।
বাহিনীটির নীতিমালাতেই বলা আছে যে, সেনাবাহিনী এবং পুলিশ থেকে সমান সমান ৪৪ শতাংশ করে কর্মকর্তা র্যাবে থাকবে।
বাকি ১২ শতাংশ কর্মকর্তা নেয়া অন্যান্য বাহিনী থেকে।
তবে বিভিন্ন সময় র্যাবে কর্মকর্তা এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা টানাপোড়েনের খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিভিন্ন সময় দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত লিখিত নানা অভিযোগের সমাধান করেছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, “একসাথে এতজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে, এটাকে অভূতপূর্ব বলা যায়।”
“এটার দু’টো কারণ হতে পারে, প্রথমত যদি পুরোটা রিঅর্গানাইজ (পুনর্গঠন) করতে যায়, তখনও ঠিক এভাবে হয় না, ফেজআউট (পর্যায়ক্রমে) হয়। আর ভেতরে যদি কোন অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকে, সেটা যদি প্রতিষ্ঠানকে এফেক্ট (প্রভাবিত) করে, সেটা হতে পারে। কারণ সেখানে বিভিন্ন বাহিনী থেকে লোক যাচ্ছে,” বলেন ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেছেন, “আন্ত:সংস্থার মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন এখানে তো আছেই। শুরু থেকেই এটা আছে, এটা অস্বীকার করলে করা যায়। কিন্তু সত্যটা যদি স্বীকার করে নেই যে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন এখানে আছে।”
“এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে কোন একটা ডিপার্টমেন্টে যদি বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের মানুষকে একসাথে করা হয়- তাদের টেমপারমেন্ট, তাদের ট্রেনিং বা দৃষ্টিভঙ্গি এক ট্র্যাকে নেয়া সময়সাপেক্ষ, দীর্ঘ মেয়াদী বিষয়,” তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেছেন, “ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিবিসিকে বলেছেন, “বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা র্যাবে থাকলেও তাদের মধ্যে সম্পর্কের কোন টানাপোড়েন বা সমস্যা নেই।
এই বদলির ঘটনা নিয়ে পুলিশের বর্তমান উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, র্যাবে এতদিন এসপি পদের পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়নি। এবার ৪৭ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে এসপি পদে পদন্নোতি দিয়ে তাদের র্যাবে পাঠানো হয়েছে। ফলে র্যাবে পুলিশ থেকে ৪৪ শতাংশ কর্মকর্তা নিয়োগের যে বিধান আছে, সেখানে পুলিশ কর্মকর্তার সংখ্যা অতিরিক্ত বা বেশি হয়ে গেছে। সেজন্য র্যাবে আগে থেকে কর্মরত কিছু কর্মকর্তাকে সেখান থেকে বদলি করা হয়েছে।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, “আমরা সাতটি বাহিনীর সংমিশ্রণে র্যাব। আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি। যারা এসপি আমাদের এখানে বদলি এসেছেন, তারা যাচ্ছেন না। তাদের এখনও পদায়ন হয়নি।”
“যারা যাচ্ছেন, তারা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং সহকারি পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার। তাদের এখানে দু’বছর চাকরি হয়েছে। তারা তাদের নিজ বাহিনী পুলিশে ফেরত যাচ্ছেন,” জানান কমান্ডার মঈন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান একযোগে বদলির ঘটনাকে রুটিন বদলি হিসাবে দাবি করেছেন।উৎসঃ bbc