স্কটল্যান্ডে প্রথম বাঙালির পদচারণা ঠিক কখন হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানার উপায় নেই। বিলেতের সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের সম্পর্ক কয়েক শত বছরের।
সংগত কারণে ভারতীয় উপমহাদেশীয়দের বিলেত ভ্রমণের অনেক বিবরণ পাওয়া যায়। এরমধ্যে প্রথম বাঙালি হিসাবে স্কটল্যান্ডে কিছুদিন ছিলেন এমন একজনের নাম সর্বাগ্রে আসে, ইতেশাম উদ্দিন। তিনি ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর মুর্শিদাবাদের নবাব মীরজাফরের কর্মচারী।
সময়ের পরিক্রমায় ইতিশাম উদ্দিনের পথ ধরে অসংখ্য বাঙালি এসেছেন স্কটল্যান্ডে। ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকাকালে যেমন অসংখ্য স্কটিশ গিয়েছেন তৎকালীন পরাধীন বাংলায়, স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন ব্যবসা কিংবা কর্মস্থল সূত্রে। তেমনি বাংলাদেশ থেকেও স্কটল্যান্ডে এসেছেন অনেক অভিবাসী।
অতীতে স্কটল্যান্ডের শহর ডান্ডির পাটকলে কাজ করেছেন অসংখ্য বাঙালি। যখন পাট ছিল স্বর্ণালী আঁশ। বিশ্বজুড়ে ছিল পাটজাত সামগ্রীর চাহিদা।
ভৌগোলিক দূরত্ব সত্ত্বেও সুদূর অতীত থেকেই বাংলাদেশ ও স্কটল্যান্ডের মধ্যে যে নিবিড় সম্পর্ক বিরাজমান তা এক প্রকার বিরল। দুই জাতিরই রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।
স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন জাদুঘরে আছে বাংলাদেশের অনেক নিদর্শন। সেসব নিদর্শন সর্বদা প্রদর্শন করছে দুই দেশের সাংস্কৃতিক ঘনিষ্টতার অভিন্ন ছবি।
অভিবাসী বাঙ্গালিরাও এখানে পিছিয়ে নেই। সগৌরবে এগিয়ে যাচ্ছেন মূলধারার রাজনীতিতে। প্রমাণ করছেন তাদের সামর্থ্য, তাদের কৃতিত্ব।
ইংল্যান্ডে এই ধারায় অভিবাসী বাঙালিরা ইতিমধ্যেই অনেক এগিয়ে গেছেন। এখন স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টের দিকেও পা বাড়িয়েছেন একজন অভিবাসী বাংলাদেশি। তিনি সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার সন্তান ফয়সল আহমদ চৌধুরী।
ফয়সল চৌধুরী ছোটবেলায় বিলেতে এসেছিলেন বাবা-মায়ের সঙ্গে। পারিবারিক ব্যবসার কারণে স্থায়ী হয়ে যান স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরায়। এখানেই পড়ালেখা শেষ করে জড়িত হন ব্যবসার সঙ্গে। এক সময় নিজ আগ্রহেই যুক্ত হন রাজনীতিতে। যোগদান করেন বিলেতের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল লেবার পার্টিতে।
সেই ধারাবাহিকতায় স্কটিশ লেবার পার্টির প্রার্থিতা পেয়েছেন আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনে। মে মাসের ৬ তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফয়সাল চৌধুরী লড়বেন এডিনবরার লোদিয়ান পশ্চিম আসন থেকে।
অবশ্য এর আগেও ফয়সাল চৌধুরী যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন লেবারপার্টি থেকে। ২০১৭ সালের জাতীয় নির্বাচনে একই আসন থেকে নির্বাচন করে তিনি জয়ী হতে না পারলেও ভালো ফলাফল অর্জন করেছিলেন। ১৩২১৩ ভোট পেয়ে তিনি হয়েছিলেন তৃতীয়।
ফয়সাল চৌধুরী মনে করেন, অভিবাসী বাঙালিদের মূলধারার রাজনীতিতে আসা উচিত। তার মতে, নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে না যেতে পারলে আমাদের কমিউনিটির জন্য সত্যিকারের কল্যাণ বয়ে আনা সম্ভব হবে না। সে জন্য সবাইকে সেই লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
স্কটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী ফয়সাল চৌধুরী। তিনি স্কটল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের কাছে দলমত নির্বিশেষে সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছেন। স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্ট নির্বাচনে জিতে এখানকার সংখ্যালঘু অভিবাসীদের কণ্ঠ সরকারের নীতি-নির্ধারণী ফোরামে জোরালোভাবে তুলে ধরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।