বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ। এ নিয়েই বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক আয়োজন ‘বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ’। আজ থাকছে রাজধানীর বিখ্যাত সাত গম্বুজ মসজিদ।
দেশের অনন্য এক ঐতিহাসিক স্থাপনা সাত গম্বুজ মসজিদ। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও। বর্তমানে মসজিদটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে আছে। তবে পরিচালনা ও দেখভাল করেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। আছে একটি পরিচালনা কমিটিও।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মসজিদটি স্থাপিত হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন শ’ বছর আগে। মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে কয়েক কদম এগোলেই এ মসজিদ।
মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। অন্য এক তথ্যে জানা যায়, নবাব শায়েস্তা খাঁর বড় ছেলে বুজুর্গ উদ্দিন (উমিদ) খাঁ এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। স্থানীয় প্রবীণরা জানিয়েছেন, মসজিদের গা ঘেঁষে নদী ছিল। মসজিদের ঘাটেই ভেড়ানো হতো লঞ্চ ও নৌকা। ঢাকা জেলার ওয়েবসাইটেও নদী থাকার কথাটি উল্লেখ আছে। তবে স্থাপত্য হিসেবে মসজিদটি এখনও কোনও রকম রক্ষা পেলেও মসজিদের পাশের নদী বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে। এখন নদী তো দূরে থাক আশপাশে খালও নেই। আছে বহুতল ভবন ও পশ্চিম পাশে একটি বড় মাদ্রাসা।
১৬ শতকে প্রতিষ্ঠিত মোগল শাসনামলের ধারাবাহিকতায় মসজিদের যে স্থাপত্যরীতি প্রচলিত হয়েছিল এই সাত গম্বুজ মসজিদ তারই চমৎকার উদাহরণ। মসজিদের ছাদে তিনটি গম্বুজ এবং প্রতি কোনায় একটি করে অনুঃগম্বুজ সম্বলিত বুরুজ রয়েছে। এজন্যই এর নাম সাত গম্বুজ মসজিদ।
মসজিদটির নামাজ ঘরের বাইরের দিকের দৈর্ঘ্য ১৭ দশমিক ৬৮ মিটার ও প্রস্থ ৮ দশমিক ২৩ মিটার। পূর্বদিকের দেওয়ালে ভাঁজ বিশিষ্ট তিনটি খিলান মসজিদটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
পশ্চিম দেওয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। এ ছাড়া বাইরের দিকের দেয়ালজুড়ে রয়েছে অলংকরণ।
প্রথম দর্শনেই মসজিদটি নজর কাড়বে। ভেতরে তিনটি কাতারে ৯০ জনের মতো মুসুল্লি নামাজ পড়তে পারে।
মসজিদের পূর্বপাশে এরই অবিচ্ছেদ্য অংশে হয়ে রয়েছে একটি সমাধি। গা ঘেঁষেই রয়েছে ছোট একটি কবরস্থান। অনেক পুরনো এ কবরস্থানে ২০-২৫টি কবর রয়েছে। নতুন করে এখানে কাউকে দাফন করা হয় না বলে জানা গেছে।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সামছুল হক স্থানীয় এক প্রবীণ বাসিন্দা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মসজিদটি ছাড়া এর আশপাশের অনেক স্মৃতিই এখন আর নাই। সেসব বলে কাউকে বিশ্বাস করানোও কঠিন। আস্ত নদীই তো হারিয়ে গেছে। মসজিদ পরিচালিত হয় স্থানীয়দের দানের টাকায়। সরকার থেকে কোনও সহযোগিতা আসে না। তাছাড়া সংস্কার করতেও আবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অনুমতি নিতে হয়।
মসজিদটির খাদেম হিসেবে পাঁচ বছর ধরে আছেন রবিউল ইসলাম। তিনি জানান, খাদেম আরও তিন জন আছেন। পেশ ইমাম আছেন দু’জন। একজন মুয়াজ্জিন। সবার বেতন ভাতা মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়।উৎসঃ banglatribune