৭০ হাজার টাকার ক্যামেরা সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায় কিনে ফেঁসে গেছেন শিক্ষার একটি প্রকল্পের কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কলেজের বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের সাবেক পরিচালক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের ওএসডি কর্মকর্তা নূরুল হুদা র্যাংগস ইলেকট্রনিক্সের কাছ থেকে ডিজিটাল ক্যামেরা ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কিনেছেন। ক্যামেরা ক্রয় প্রক্রিয়া বাতিল করতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও তাকে ভুল বুঝিয়ে এসব ক্যামেরা কেনা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ক্যামেরা কেনার টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিলের নির্দেশনা থাকলেও তা মানেননি নূরুল হুদা। প্রতিটি ডিজিটাল ক্যামেরার দাম পড়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। যদিও বাজারে ডিজিটাল ক্যামেরা ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যে কেনাবেচা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষামন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে ২০০টি সরকারি কলেজের জন্য প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যামেরা কেনায় ওই প্রকল্প পরিচালককে ইতোমধ্যে ওএসডি করা হয়েছে। তাকে ‘অদক্ষতা’ ও ‘অসদাচরণের’ অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করেছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। শাস্তির প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে নূরুল হুদাকে শোকজ করা হয়। শোকজে তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার দশ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত শোকজ নোটিশটি তার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকারি কলেজগুলোয় বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের সাবেক পরিচালক নূরুল হুদা (বর্তমানে ওএসডি) ২০০টি সরকারি কলেজের জন্য ১০ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল ক্যামেরা ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ই-জিপি সিস্টেম পোর্টালে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ২ মার্চ র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের সঙ্গে ক্যামেরা কেনার চুক্তি সম্পাদন করেন। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী
২৯ জুন এসব মালামাল গ্রহণের সর্বশেষ সময় ছিল। তবে গত বছরের ১৫ জুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতির সভায় সম্ভব হলে ক্যামেরা কেনার প্রক্রিয়া বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
মন্ত্রণালয় আরও বলছে, শিক্ষামন্ত্রীকে যথাযথভাবে তথ্য না দিয়ে নূরুল হুদা তা গোপন করেছেন এবং ক্যামেরা কেনার চুক্তিটি বাতিল করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন। যে কোনো সময় ক্রয় কার্যক্রম বাতিল করার এখতিয়ার থাকা সত্ত্বেও এবং পর্যাপ্ত সময় পেয়েও তিনি তা বাতিল করেননি। এ ছাড়া তিনি প্রকল্পের আওতাধীন বিভিন্ন প্রশিক্ষণের প্রকৃত তথ্য গোপন করেছেন। শোকজে আরও বলা হয়, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নূরুল হুদা প্রজাতন্ত্রের একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এ ধরনের কাজ সরকারি চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি পরিপন্থী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩-এর (ক) ও ৩ (২) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কমকর্তা জানান, ওই প্রকল্প পরিচালকের সাড়ে ৫ লাখ টাকায় ক্যামেরার দাম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। ক্যামেরার দাম ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় প্রফেশনাল ক্যামেরা পাওয়া যায়।