চার বছরে মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এক সময় পড়াশোনার খরচ চালাতে বাসের টিকিট বিক্রি করা রেজাউল করিমের (৩২) বিরুদ্ধে। তিনি একাধারে গাজীপুরের টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক। রাজধানী–সংলগ্ন শিল্পনগরী টঙ্গীর ব্যবসায়ীরা রেজাউলকে এক নামেই চেনেন। পুলিশের সঙ্গেও সম্পর্ক বেশ ভালো। আগে থেকেই ফুটপাত ও ঝুট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিতেন বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও টঙ্গীর মাদক ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন তারই দখলে।
টঙ্গীর ব্যাংকের মাঠ বস্তি ও কেরানীর টেক বস্তি এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন সাঈদা বেগম। সম্প্রতি তিনি ইয়াবাসহ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনাকে ঘিরেই রেজাউলের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত বলে জানা গেছে। সাঈদা বেগম বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। এরপরই সাঈদার সঙ্গে রেজাউলের কথোপকথনটি প্রকাশ্যে আসে। ওই কথোপকথনে কক্সবাজার থেকে আনা রেজাউলের এক লাখ ইয়াবা বেহাত হওয়ার জন্য সাঈদাকেই দায়ী করেন এ ছাত্রলীগ নেতা।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার ছাত্রলীগের নেতা রেজাউল করিমের মুঠোফোনে কল করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে রেজাউলের রাজনৈতিক সতীর্থরা বলছেন, ছাত্রলীগের টঙ্গী কলেজের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুবাদে পুলিশ ও নেতাদের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে রেজাউলকে বলতে শোনা যায়, টঙ্গী পূর্ব থানার সাবেক ওসিকে দিয়ে তিনি যা খুশি তা–ই করাতেন। যাকে খুশি তাকেই গ্রেপ্তার করাতেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতার মাদক ব্যবসার ফোনালাপের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে এবং আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা এবং তথ্য সংগ্রহ করার জন্য একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
রেজাউল করিম গাজীপুরের টঙ্গীর হিমারদিঘী নোয়াগাঁও এলাকার হোসেন আলীর ছেলে। হিমারদিঘী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেজাউলের বাবা আগে টঙ্গী রেলস্টেশনের পাশে কাপড় সেলাইয়ের কাজ করতেন। চার ভাই–বোনের মধ্যে সবার ছোট রেজাউল পুবাইল আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০০৭ সালে টঙ্গী সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার পর পড়ালেখার খরচ জোগাতে রেজাউল করিম বাস কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করতেন তিনি। তখনই মাদক ব্যবসায় যুক্ত হন। টিকিট বিক্রির পাশাপাশি ফেনসিডিলও বিক্রি শুরু করেন। তাঁর বিরুদ্ধে সাবেক টঙ্গী মডেল থানায় ফেনসিডিল ব্যবসার অভিযোগে মামলাও হয়েছে। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। হাতে টাকা আসতে থাকলে একের পর এক দরজা খুলতে শুরু করে। গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে টঙ্গী সরকারি কলেজের সাধারণ সম্পাদক হন। টিকিট বেচা বাদ দিয়ে কেবলই মাদক বিক্রি শুরু করেন। খুচরা মাদক বিক্রেতা থেকে এখন তিনি টঙ্গী এলাকার ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রক বলে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে।
পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেন। একটি মেয়েও রয়েছে। ছাত্রত্ব নেই অনেক দিন। তবু ছাত্রলীগের পদ ধরে রেখেছেন। দত্তপাড়া এলাকায় আড়াই কাঠা জমির ওপর গড়েছেন অট্টালিকা। এ ছাড়া পরিবহন ও ঝুট ব্যবসায়ও রয়েছে তার বিনিয়োগ। চাঁদাবাজিতেও সিদ্ধহস্ত ছাত্রলীগের এই নেতা। সর্বশেষ গত ১ এপ্রিল রেজাউল স্থানীয় ব্যবসায়ী সাজ্জাদুল ইসলাম মনিরের কাছে দাবি করে বসেন পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা। এ ঘটনায় ব্যবসায়ীর স্ত্রী শিল্পী আক্তার বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তবে শিল্পীর অভিযোগ, ‘পুলিশ কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি।’
টঙ্গী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, তাঁদের কমিটি অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। একসঙ্গে রাজনীতি করলেও রেজাউলের মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ছাত্রলীগে মাদক কারবারিদের স্থান নেই। তার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তদন্ত করে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎসঃ দা ডেইলি ক্যাম্পাস