মঙ্গলের আকাশে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সফলভাবে হেলিকপ্টার উড়িয়েছে। এর মাধ্যমে এই প্রথম অন্য কোনো গ্রহে মানুষ প্রথমবারের মতো কোনো উড়োযান ওড়ালো। এই ঘটনাকে বিজ্ঞানীরা ‘রাইট সহোদরদের মুহূর্ত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, নাসা বলেছে, গ্রিনিচ সময় সোমবার ভোররাত ৩টা ৩৪ মিনিটে প্রায় দুই কেজি ওজনের হেলিকপ্টারটি মঙ্গলের আকাশে ডানা মেলে। সৌরজগতের লাল গ্রহটির কম ঘনত্বের বাতাসে উড়োযানটি উড়তে পারবে কি না, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা ছিল। তবে সে আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে মঙ্গলপৃষ্ঠের ১০ ফুট ওপর দিয়ে ৩৯ দশমিক ১ সেকেন্ড উড়ে বেড়ায় ইনজেনুইটি নামের হেলিকপ্টারটি।
গত বছরের ৩০ জুলাই পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় নাসার মঙ্গলযান পারসেভারেন্স। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পারসেভারেন্স সফলভাবে মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণ করে। এই মঙ্গলযানের পেটে সংযুক্ত ছিল হেলিকপ্টার ইনজেনুইটি। মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণের দুই মাস পর গতকাল ডানা মেলল হেলিকপ্টারটি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড়াল দেওয়ার পর উড়োযানটি পৃথিবীতে তথ্য ও ছবিও পাঠিয়েছে। ২৭ কোটি ৮০ লাখ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে সে তথ্য ধরা দেয় পৃথিবীর বুকে নাসার অ্যান্টেনায়। এরপর সেসব তথ্য তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায় প্রক্রিয়াকরণ করতে।
ইনজেনুইটি যখন মঙ্গলের আকাশে ডানা মেলে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে যেন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। ইনজেনুইটি উড়ে আবার উড্ডয়নের জায়গায় এসে সফলভাবে অবতরণের পর ঘোষণা আসে, ‘ইনজেনুইটি প্রথমবারের মতো সফলভাবে উড়েছে। ভিনগ্রহে এই প্রথম মানুষের কোনো উড়োযান উড়ল।’ এরপরই করতালি আর উল্লাসে ফেটে পড়েন ল্যাবরেটরির সবাই। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি পারসেভারেন্সের অবতরণের সময়।
ইনজেনুইটির গবেষক দলের প্রধান প্রকৌশলী মিমি অং সহকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই মঙ্গলের বুকে রাইট সহোদরদের মুহূর্তের কথা বলছি। আজ সে মুহূর্ত উপস্থিত।’
এই জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতেই ছয় বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই অভিযানের পরিকল্পনা ও সার্বিক বিষয় এগিয়ে নিয়েছেন গবেষকেরা। ইনজেনুইটির সফল উড়ালে তাঁদের সেই পরিশ্রম যেন প্রায় শতভাগই ফলপ্রসূ হলো। এবার পারসেভারেন্সের পুরো অভিযান সফল হওয়ার অপেক্ষা।
উল্লেখ্য, মার্কিন সহোদর অরভিল রাইট ও উইলবার রাইট ১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো উড়োজাহাজ উড়িয়ে ইতিহাসের সৃষ্টি করেন। তাঁদের আবিষ্কারের পথ ধরেই বিশ্বটা যেন একেবারেই ছোট হয়ে আসে, হাজার মাইলের পথ যেন মাত্র কয়েক ঘণ্টার যাত্রাপথে পরিণত হয়।
সূত্র : প্রথম আলো