ভালোবাসা নয়, সঙ্গীর নজর কি শুধু সম্পদের দিকে? বোঝার রয়েছে উপায়।
উত্তরাধিকার সুত্রে হোক কিংবা নিজের যোগ্যতায়, একজন বিত্তবান ব্যক্তির বন্ধুর অভাব হয়ত কখনই হয় না। এদের মধ্যে কিছু মানুষ থাকতেই পারে যারা আপনার সঙ্গ পেতে আগ্রহী নয় বরং সম্পদের প্রতিই আগ্রহী। আর এমন মন মানসিকতার কেউ যদি আপনার জীবনসঙ্গী হয়ে যায় তবে জীবন দুর্বিসহ হতে খুব বেশি সময় লাগে না।
সম্পদ লোভী এমন অনেক নারী কিংবা পুরুষ আছেন যাদের বিত্তবান নারী কিংবা পুরুষের জীবনসঙ্গী হয়ে ওঠার চেষ্টা থাকে অদম্য। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে আপনার প্রতি ভালোবাসার টানেই আপনি তাদের নয়নমনি, ফলে তার জন্য নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতেও আপনি প্রস্তুত হয়ে যান।
তবে সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার পরই বোঝা যায় বরাবরই ওই মানুষের নজর ছিল সম্পদের ওপর, আপনার ভালোবাসায় পাওয়ায় নয়।
সম্পর্কবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল এমন মানুষ চেনার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে।
খরচ ভাগাভাগি করায় আগ্রহ কমে যাওয়া: প্রেমের সম্পর্কে খরচ নেহাত কম নয়। বেড়ানো, রেস্তোরাঁয় খাওয়া, উপহার আদান-প্রদান ইত্যাদি নানান দিকে দুই পক্ষেরই অনেক খরচ হয়। তবে এই খরচ যোগাতে যত সমস্যাই হোক না কেনো, সত্যিই কাউকে ভালোবাসলে কখনই তার হিসেব করার কথা মাথায় আসে না। বিশেষত, পুরুষই খরচের দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। তবে এই খরচগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়ার প্রবণতা প্রথমদিকে দুজনের মধ্যে থাকলেও একপক্ষ যদি ক্রমেই সেই দায়িত্ব থেকে পিছপা হতে থাকে তবে অপরপক্ষের বিষয়টা নিয়ে ভাবা উচিত।
কারণ সম্পদ লোভী নারী কিংবা পুরুষ প্রথমদিকে খরচ ভাগাভাগি করার প্রবল চেষ্টা করে অপরপক্ষের আস্থা অর্জনের জন্য। আর একবার সেই আস্থা অর্জন করে ফেলতে পারলে তারা খরচের চেষ্টা তো বন্ধ করেই, বরং কৌশলে খরচের দায়িত্বটা অপরপক্ষের কাঁধে চাপিয়ে দেয় সবসময়।
অর্থকষ্ট তাদের প্রিয় আলোচ্য বিষয়: হবু জীবনসঙ্গীদের মাঝে পরস্পরের আর্থিক ভালোমন্দ বিষয়গুলো খোলামেলা আলোচনা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। বিপদে দুজনার মধ্যে আর্থিক সাহায্যের সুষ্ঠু আদান প্রদান একটি পরিণত সম্পর্কের লক্ষণ বলা যায়।
তবে হবু সঙ্গীর অর্থকষ্টের গল্পগুলো যদি নিত্যদিনের ঘটনা হয় তাহলে সেখানেও ভাবনার বিষয় আছে। এই গল্পগুলো নেপথ্যে লুকিয়ে থাকে সাহায্যের আবেদন। তবে সেই আবেদন তারা কখনই মুখে জানায় না, বরং তাদের করুণ পরিস্থিতির বর্ণনা শুনতে শুনতে একসময় আপনি নিজেই তার দায়িত্ব নিয়ে নেবেন নিঃস্বার্থভাবে। আর সেখানেই হবে সর্বনাশের শুরু।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন আছে কিন্তু আর্থিক পরিকল্পনা নেই: আপনার সঙ্গী হয়ত ভবিষ্যত সংসারজীবন নিয়ে বিলাশবহুল স্বপ্নে বিভোর, যেই স্বপ্নের মধ্যমনিও আপনি। তবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে অর্থ প্রয়োজন সেটার যোগান নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। তার নিজের কোনো উপার্জন না থাকার বিষয়টিকে সবসময় এড়িয়ে যায়। বরং দুজনার জন্য সুখী জীবনের পরিকল্পনা করাকেই সে নিজের মুখ্য কাজ হিসেবে তুলে ধরবে। আর ভালোবাসা মোহে সেই স্বপ্নের জন্য খেটে মরবেন শুধুই আপনি।
সহযোগিতা চাইলে তালবাহানা: একজন মানুষ কখনই সবসময় স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারে না। জীবনের কোনো না কোনো সময় তার সাহায্যের প্রয়োজন হয়েই যায়, বিশেষত আর্থিক। আর আপনার হবু সঙ্গী যদি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসে তবে সেই সাহায্যটুকু আপনাকে করা উচিত বিনা বাক্য ব্যয়ে। হ্যাঁ, দুজনের একই সময়ে আর্থিক টানাপোড়ন থাকতেই পারে। তবে আপনি সাহায্য চেয়ে যদি বারবার নানান অজুহাতের মুখোমুখি হন, আপনার অর্থকষ্টের চাইতে সঙ্গীর অর্থকষ্ট যদি প্রত্যেকবার বড় হয় তবে বিষয়টা স্বাভাবিক নয়। সঙ্গী যদি কখনই আপনার অর্থকষ্টে সাহায্যের হাত বাড়াতে না পারে তবে এমন সঙ্গী থেকেই বা কী লাভ?
খরচ আর কাজ নিয়ে যাদের বদনাম আছে: মানুষটাকে যতই ভালোবাসুন না কেনো, এই বিষয়টাকে কখনই অবহেলা করা উচিত নয়। আপনার হবু সঙ্গীর খরচের হাত কেমন, আর্থিক বিষয়ে সে কতটা দায়িত্ববান সেটা সবসময়ই খতিয়ে দেখা উচিত। কর্মক্ষেত্রে আপনার হবু সঙ্গী কতটা দায়িত্ববান সেটাও আপনার বুঝতে হবে। যদি সম্পদ আর কাজ নিয়ে সে দায়িত্ববান না হয়, তবে বুঝে নিতে হবে একসময় তার খরচের বোঝাটা আপনার কাঁধেই চাপবে পুরোপুরি।
আপনার সম্পদে হবু সঙ্গীর নিয়ন্ত্রণ: নিজের পয়সা কোথায় খরচ হয় সেটা নিয়ে আপনার কথা বলা তার অপছন্দ। তবে আপনার খরচ নিয়ে তার মন্তব্য আছে সবসময়ই। সম্পদ লোভী মানুষগুলো অপরকে আর্থিক উপদেশ দিতে ভালোবাসে সবসময়। আর এভাবেই আপনার সম্পদটুকুর ওপর একসময় তারই আধিপত্য হয় আপনার চাইতেও বেশি। আপনার প্রয়োজন, শখ, আবেগ চরিতার্থ করার খরচ তাদের কাছে অপচয়। আর নিজের পয়সা সে কোথায় খরচ করছে সেটা জানতে চাইলে শুরু হয় রাজ্যের ঝগড়া।
ছবি: রয়টার্স।