চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে ডাকা সমাবেশে পুলিশের গুলিতে পাঁচ শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাকে আইনের শাসন পরিপন্থি, গর্হিত অপরাধ ও গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য লজ্জাকর বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছেন লেখক, শিক্ষক, আইনজীবী, অধিকারকর্মীসহ ৬৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
এই ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার-বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে দোষী পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তারা।
শনিবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষে বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোটের (বিডাব্লিউজিইডি) সদস্য সচিব হাসান মেহেদীর সই করা বিবৃতিটি গণমাধ্যমের কাছে আসে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বকেয়া মজুরির দাবিতে সমাবেশরত নিরীহ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ একটি গর্হিত অপরাধ ও গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য লজ্জাকর। শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা আইনের শাসনের পরিপন্থী। যেখানে জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের কাজ সেখানে এমন নির্মম ও অবিবেচনাপ্রসূত হত্যাকাণ্ড ক্ষমতার অপপ্রয়োগ এবং চরম অনাচারের শামিল।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন অনুসারে পুলিশ কোনো অবস্থাতেই নিরীহ শ্রমিকদের উপর গুলি চালানোর অনুমতি পেতে পারে না। পুলিশ প্রবিধান ১৯৪৩-এর বিধান অনুসারে নিরাপত্তার জন্য হুমকিমূলক সমাবেশ অন্য কোনোভাবে ছত্রভঙ্গ না করা গেলে সর্বশেষ পন্থা হিসেবে নূন্যতমভাবে শক্তি প্রয়োগের বিধান রয়েছে এবং সেক্ষেত্রে গুলি চালানোর আগে বার বার সাবধান করতে হবে এবং তা চালাতে হবে কাউকে হত্যা করা না বরং সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্য থেকে। আমরা এই আইনি বিধান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানতে দেখিনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আইন অমান্য করার দায় সাধারণ নাগরিকদের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
বিবৃতিদাতারা এই হত্যাকাণ্ড ও গুলিবর্ষণের ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার-বিভাগীয় তদন্ত দাবি এবং দোষী পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
তারা বলেন, বাঁশখালি বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে এর আগে ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং সেসব ঘটনায় কমপক্ষে ৬ জন নিহত ও শতাধিক আহত হলেও ওই হত্যাকাণ্ডের কোন সুষ্ঠু বিচার হয়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, করোনা মহামারির এই দুর্যোগে শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা যেখানে এমনিতেই দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে, সেখানে মজুরি না দেয়া শ্রম আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এস আলম গ্রুপের মতো ধনী শিল্পগোষ্ঠী কেন শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেনি তার যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
সকল শ্রমিকের বকেয়া মজুরি দ্রুত পরিশোধের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, শ্রমিকদের মজুরি প্রদানে অবহেলা করার কারণে এস. আলম গ্রুপের সঙ্গে কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সরকারের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তা বাতিলের দাবি জানাই।
বিবৃতিতে সই করেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী ড. হামিদা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আকমল হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আনু মুহাম্মদ, নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশি কবীর, ব্র্যাকের নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, আলোকচিত্রী শহিদুল আলাম, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, সেন্ট্রাল উইমেনস্ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পারভীন হাসান, নারী অধিকার কর্মী ফরিদা আখতার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে ব্যারিস্টার সারা হোসেন, লেখক রেহনুমা আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান, নারী অধিকার কর্মী শিরীন হক, অ্যাক্টিভিস্ট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইউম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. জাহেদ ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ফেরদৌস আজিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রোবায়েত ফেরদৌস, প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, লেখক ও গবেষক মোবাশ্বার হাসান, গবেষক এবং অধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জোবায়দা নাসরিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাদাফ নূর-এ ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, এনজিও ফোরাম অন এডিবির নির্বাহী পরিচালক রায়ান হাসান, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহনাজ হুদা, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তানজিম ওয়াহাব, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের ডা. নাইলা জেড খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, লেখক ও অনুবাদক ওমর তারেক চৌধুরী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেইট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আজফার হোসেন, গবেষক ও অধিকারকর্মী মাহা মির্জা, ব্যঙ্গচিত্র-শিল্পী আহমেদ কবির কিশোর, মানবাধিকার কর্মী নাসিরুদ্দিন এলান, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসরীন খন্দকার, সঙ্গীত শিল্পী ও লেখক অরূপ রাহী, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক এম. জাকির হোসেন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সারওয়াত শামীন, আলোকচিত্রী ও শিক্ষক জান্নাতুল মাওয়া, মংলা নাগরিক সমাজের শেখ নূর আলম, প্রান্তজনের নির্বাহী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম শাহজাদা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম, আর্টিস্ট ডিরেক্টর লুবনা মরিয়ম, আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক রেবেকা সুলতানা, শিক্ষক ও গবেষক কাজী ওমর ফয়সাল, সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সেকান্দার আলী মিনা সুমন, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তানজিম ওয়াহাব, সংশপ্তকের সমন্বয়কারী অগ্রদূত দাশগুপ্ত, পরিবর্তন-রাজশাহীর নির্বাহী পরিচালক রাশেদ রিপন, শিল্পী ও সংগঠক অমল আকাশ, নারী অধিকার জোটের মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী, মানবাধিকার কর্মী তাসাফি হোসেন, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী বীথি ঘোষ, চলচ্চিত্র নির্মাতা অপরাজিতা সংগীতা, গবেষক রোজিনা বেগম, অধিকারকর্মী মারজিয়া প্রভা এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোটের (বিডাব্লিউজিইডি) হাসান মেহেদী।