কাগুজে প্রতিষ্ঠান ঢাকা ট্রেডিং হাউসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ী টিপু সুলতান। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদিকে বিডিবিএল ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় টিপু সুলতান ও ব্যাংকের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান তদন্তকালে দেখেন, ঢাকা ট্রেডিং হাউসের মালিক টিপু সুলতান স্থানীয় বাজার থেকে ১৫ হাজার টন গম সংগ্রহ করে খাদ্য অধিদপ্তরে দেওয়া হবে- এমন একটি এমইইউ সম্পাদন হয়েছে দেখিয়ে বিডিবিএলে ঋণের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু এমইইউটি ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া। কাগজপত্র যাচাই না করেই ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা ঋণ মঞ্জুর করেন এবং গ্রাহক টিপু সুলতানের অনুকূলে ছাড় করান। সেই ভুয়া এমইইউর মাধ্যমে বিডিবিএল থেকে ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। এ ঘটনায় টিপু সুলতান ও ব্যাংকের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদক একটি মামলা করে। মামলাটি তদন্তকালে নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। তদন্ত কর্মকর্তা ইতোমধ্যে আদালতে চার্জশিটের জন্য সুপারিশ তুলে ধরে কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। কমিশনের অনুমোদনের পর পরই আদালতে মামলাটির চার্জশিট দাখিল করা হবে।
দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করে ঢাকা ট্রেডিং হাউসকে মালামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসপিএস করপোরেশনের ঠিকানায় কোনো অফিস খুঁজে পায়নি। যে ট্রাক দিয়ে ১৫ হাজার টন গম একদিনেই পরিবহন দেখানো হয়েছে সে ট্রাকের অফিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। হিলি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি নামের কোনো পরিবহন সংস্থা কখনই হিলিতে ছিল না মর্মে সেখানকার পৌরসভা মেয়র লিখিতভাবে জানান। বিডিবিএল ব্যাংকের তিন সদস্যবিশিষ্ট টিম ‘এসপিএস করপোরেশন ও হিলি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির’ অফিস সরেজমিন পরিদর্শন করে এর অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। ওই ঋণের বিপরীতে কোনো মর্টগেজ নেই। জালিয়াতি করে নেওয়া ঋণটি কোনোভাবেই পরিশোধ হবে না।
দুদক সূত্র জানায়, শুধু বিডিবিএলই নয়, একইভাবে জনতা ব্যাংক থেকে টিপু সুলতান ঢাকা ট্রেডিং হাউসের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকার জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন, যা সুদাসলে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। দুদকের উপপরিচালক সামসুল হক ওই ঋণের বিপরীতে মামলা করেছেন এবং টিপু সুলতানকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, টিপু সুলতান ঢাকা ট্রেডিং হাউসসহ কয়েকটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারি ব্যাংক ছাড়াও বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাংকে প্রায় হাজার কোটি টাকা ভুয়া ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন।উৎসঃ আমাদের সময়