নিজেকে হিন্দু দাবি করার পরেও সে ‘হেফাজতে ইসলামের কর্মী’ না সেটা প্রমাণের জন্য পায়জামা খুলতে বলেছে পুলিশ- এমনটা দাবি করে ফেইসবুকে স্টাট্যাস দিয়েছেন অভিক শীল অর্ক নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ইতোমধ্যেই স্টাট্যাসটি ভাইরাল হয়েছে। ছড়িয়েছে পরেছে বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ ও গ্রুপে।
ইংরেজিতে দেয়া অভিক শীল অর্কের বঙ্গানুবাদ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো, “আজ আমি একটা টিউশনি করতে গিয়েছিলাম। আমি জানি এখন লকডাউন, কিন্তু সে আমার সবচেয়ে পুরনো ছাত্র এবং আমি সেই ছাত্রের দায়িত্ব নিয়েছি, তাই আমাকে যেতে হল। আমি সেখানে গিয়েছিলাম। এদিকে টিউশন শেষে বাসায় ফিরছিলাম, একটা রাইড খুঁজতেছিলাম। এবং তখন প্রায় দশটা বাজে। এবং সেখানে গভীর অন্ধকার এবং নীরবতা পূর্ণ ছিল। আমি মেইন রোডে দাঁড়িয়ে আমার রাইডের জন্য অপেক্ষা করছি।
হঠাৎ একদল লোক এসে নিজেদের পুলিশ অফিসার পরিচয় দিল (সিভিল পোশাকে ছিল, সব সদস্যের হাত ওয়াকি টকি)। তারা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, আমি বাইরে কেন? তাই আমি ভদ্রভাবে তাদের বলেছিলাম, আমি ছাত্র এবং ছাত্র পড়াই, তাই টিউশনি করতে গিয়েছিলাম এবং এখন আমি রাইডের জন্য অপেক্ষা করছি।
এরপর তারা সরাসরি জিজ্ঞেস করলো, ‘Are you a member of ‘হেফাজতে ইসলাম?’
আমি হতবাক হয়ে গেলাম, তারপর তাদের উত্তর দিলাম কেন তারা আমাকে এমন প্রশ্ন করছে। আর তখন তাদের একজন আমাকে বলল, তুমি পাঞ্জাবী-পাজামা পরে আছো। আর আপনার চুল ও দাড়ি বেশ লম্বা এবং এটা প্রমাণ করে যে, তুমি সেই দলের সদস্য। তারপর আমি তাদের বললাম, তাদের অবশ্যই কিছুটা মিসআন্ডারস্টান্ডিং হচ্ছে। প্রথমত আমি মুসলিম নই। আমার ধর্ম হিন্দু। তাহলে আমি কীভাবে ঐ গ্রুপের সদস্য হবো?
তারা আমার কথা বিশ্বাস করেনি। তাই তারা আমাকে আমার পায়জামা খুলতে বলেছে এবং আমার ব্যক্তিগত অঙ্গ দেখিয়ে প্রমাণ করতে যে, আমি মুসলিম লোক নই।
তাই আমি জোরে চিৎকার করে বললাম কীভাবে প্রকাশ্যে কাউকে বলে পায়জামা খুলতে!!!
ওরা আমার কথা শুনেনি আর বলেছিলো আমি যদি ওদের কথা না মেনে চলি তাহলে আমাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করবে। হঠাৎ মনে পড়লো আমার সাথে আমার ভার্সিটির আইডি কার্ডটা আমার ওয়ালেটে আছে । তাই আমি এটা বের করে তাদের বললাম যে, এটা আমার ভার্সিটির পরিচয়পত্র ।
তারা এটা দেখেছে। তারা সেখানে আমার নাম দেখে এবং টাইটেলসহ নাম-ছবি দেখে বুঝতে পেরেছে, আমি মুসলিম লোক নই এবং আমি ‘হেফাজতে ইসলাম’ এর সদস্য নই। তারপর তারা আমাকে যেতে দিল।
আর এদিকে আমার রাইড আসলো এবং আমি আমার জায়গায় ফিরে গেলাম। এরা পুলিশ ছিল কি না জানি না । আর যদি তারা হয়, তাহলে আমরা এখন কোথায় বাস করছি? অনেক প্রশ্ন অব্যক্ত থেকে যায়……………”
যদিও পরবর্তীতে তিনি স্টাট্যাসটি সরিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু ইতোমধ্যে ভাইরাল হওয়া এই স্টাট্যাসের স্ক্রিনশর্ট ও লেখাগুলো শেয়ার করে ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা।
অর্কের ছবি ও স্টাট্যাসের স্ক্রিনশর্ট শেয়ার করে আসাদুর জামান চৌধুরী বাবু তার ফেইসবুক ওয়ালে লিখেন, ‘এই ছেলেটির নাম অভিক শীল অর্ক। টিউশনি করে রাতে বাসায় ফিরছিল। পথেই পুলিশ ধরে জিজ্ঞেস করে- তুই কি হেফাজতের লোক? সে বলে আমি হিন্দু। পুলিশের সেটা বিশ্বাস হয় না। তারা বলে তোর গায়ে পাঞ্জাবি ও পরনে পায়জামা, তোরে দেখতে হেফাজতের মত লাগে। এবার পুলিশ তাকে তার কাপড় খুলতে বলে তার হিন্দুত্ব প্রমাণ করার জন্য! তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি ছিল। তাই সে যাত্রায় বেঁচে গেছে। এবং এটি পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা নয়, এটি স্বাধীন বাংলাদেশের কাহিনি।’
‘খুব লজ্জা লাগছে, খুব অসহায়।’ – অর্কের স্টাট্যাসের নীচে ইউসুফ ফরহাদের মন্তব্য।
তামান্না তাবাস্সুম ইরানী লিখেন, ‘অযোগ্যদের হাতে পড়ে দেশ টা আজ রসাতলে গেলো।’
শীর্ষনিউজ