আহমাদ ইশতিয়াক,বিশ্বখ্যাত রুশ সাহিত্যিক ফিওদর দস্তয়েভস্কি বিশ্বখ্যাত “ওভারকোট” গল্প সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই গোগলের ওভারকোট থেকেই বের হয়ে এসেছি।’
তাকে বলা হয় আধুনিক রুশ সাহিত্যের জনক। “দ্য নোজ”, “দ্য ওভারকোট”, “ডায়েরি অব আ ম্যাড ম্যান”, “মিসট্রিয়াস পোট্রেট” এর মতো গল্পের জন্ম তার হাতে। কিংবা বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস “ডেড সোল”, “ইভনিং অন আ ফার্ম নিয়ার দিকানকা”, বিখ্যাত ব্যঙ্গাত্মক রচনা “দ্য ইন্সপেক্টর জেনারেল” এর মতো বিশ্বখ্যাত সাহিত্যের জন্ম তার হাতে। রুশ সাহিত্য তো বটেই বিশ্বসাহিত্যের এক দিগন্ত বিজয়ী প্রদর্শকের নাম নিকোলাই গোগল।
নিকোলাই গোগলের জন্ম ইউক্রেনের পোলতাভা রাজ্যের গ্রেট সোরোচিন্টি গ্রামে ১৮০৯ সালের পহেলা এপ্রিল। পারিবারিক নাম নিকোলাই ভাসিলয়িএভিচ গোগল ইয়ানোভস্কি। নাম রেখেছিলেন তার দাদা। গোগলের বাবা ভাসিলি গোগল ইয়ানভস্কি ছিলেন ইউক্রেনের বিখ্যাত কোসাক বংশের বংশধর। কবিতা লিখতেন রুশ ভাষায়। মা লুবনি রেজিমেন্টের কর্মকর্তা লিওন্টি কোসিয়ারোভস্কির বংশধর।
ছোটবেলার গোগল ছিলেন সম্পূর্ণ অন্য ধাঁচের৷ একেবারেই মিশুক নন। দুই তিন জন বন্ধু ছিল তার। বন্ধুরা খ্যাপাতো, অনেকে ডাকতো ‘রহস্যময় বামন’ বলে। এক রহস্যের চাদরে মোড়া ছিলেন তিনি। এক ধরনের পরিপক্কতার ছাপ ছিল তখন থেকেই।
ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে ইউক্রেনীয় জেন্ট্রির বাম-তীরের অধিবাসী হিসেবে গোগলের পরিবার ইউক্রেনীয় ও রুশ দুই ভাষাই জানতো। শৈশব থেকেই ইউক্রেনীয় ভাষার নাটকগুলোকে মঞ্চস্থ করার কাজে গোগল তার চাচাকে বাড়ির নাট্যশালায় সাহায্য করতেন। তাদের পারিবারিক নাট্যদল ছিল। একসময় আকণ্ঠ নাটকের প্রেমে মজে গেলেন গোগল। শুরুর দিনগুলো থেকেই গোগলের মধ্যে আঁধার ও গোপনীয়তার প্রতি তীব্র টান ছিল, এর সঙ্গে ছিল তার যন্ত্রণাময় আত্ম-সচেতনতা এবং অপরিসীম উচ্চাকাঙ্ক্ষা। পাশাপাশি খুব শিগগিরই তার অনুকরণ করবার একটা ক্ষমতা গড়ে ওঠে যা পরে তাকে তার নিজের সাহিত্যকর্ম পাঠের অতুলনীয় একজন পাঠক হিসেবে গড়ে তুলেছিল। এর ফলেই অভিনেতা হওয়ার প্রতি তীব্র আকর্ষিত হয়েছিলেন গোগল।
স্কুলের পালা শেষ করার পর গোগল চলে গেলেন সেন্ট পিটার্সবার্গে, সঙ্গে জার্মানির বিখ্যাত রোমান্টিক কবিতা সংকলন ‘হান্স কুচেলগার্টেন’। এটিই প্রকাশ করলেন গাঁটের টাকা খরচ করে।
নোভোডেভিচি সমাধিক্ষেত্রে গোগলের সমাধি। ছবি: সংগৃহীত
এবার সেই কবিতার বই পত্রিকা অফিসে বিলি করলেন। কিন্তু প্রায় সব পত্রিকা অফিসে প্রচণ্ড সমালোচনা ও ভয়ংকর বাজে প্রতিক্রিয়া ছাপানো হয়। অনেকে লিখেছেন এগুলো কোন কবিতাই হয়নি৷ কবিতার জাতের মধ্যেই পড়ে না এগুলো। কবিতা লিখতে জানেন না লেখেন কেন?
ভীষণ রাগ হলো গোগলের। বইয়ের দোকান থেকে নিজের কবিতার সব বই কিনে তিনি নষ্ট করে ফেললেন এবং প্রতিজ্ঞা করলেন আর জীবনে কোনো দিন কবিতা লিখবেন না।
তবে সাহিত্যিকদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট হয়নি কখনোই। তখন তিনি অনুভব করেন তার পরিধি বাড়ানোর। বহু বিখ্যাত সাহিত্যিদের সাথে তার পরিচয় হয় তখন।
আন্তন দেলভিগের “নর্দার্ন ফ্লাওয়ার্স” পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়।
এই লেখার পরই কিংবদন্তি দুই সাহিত্যিক ভাসিলি ঝুকোফস্কি ও পিওতর প্লেতনিয়ভ তার লেখার প্রশংসা করেন এবং পরামর্শ দেন। কয়েক বছরের মধ্যে তার সঙ্গে পরিচয় হয় প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিক পুশকিনের।
১৮৩১ সালে গোগল তার ইউক্রেনীয় গল্পের প্রথম খণ্ড “ইভনিংস অন আ ফার্ম নিয়ার ডিকানকা” প্রকাশ করেন। এই গল্পগ্রন্থ বেশ ভালো সাফল্যের মুখ দেখেছিল। এরপরের বছর প্রকাশ পেল এর দ্বিতীয় খণ্ড এবং ১৮৩৫ সালে দুটি খণ্ডই মিরগোরোদ নামে প্রকাশ করেছিলেন গোগল। এর সাথে গোগলের বিভিন্ন গদ্যরচনার দুটি খণ্ড আরাবেস্কিউস নামে প্রকাশ করেছিলেন গোগল।
এইসময়ে নিকোলাই পোলেভয় এবং নিকোলাই নাডেঝডিনের মতো রুশ পত্রিকার ক্ষুরধার সম্পাদক এবং সাহিত্য সমালোচকরা গোগলের মধ্যে রুশ থেকেও বেশি একজন ইউক্রেনীয় লেখকের প্রস্ফুরণ দেখতে পেয়েছিলেন। এ জন্যই তারা মূলত রাশিয়ান এবং ইউক্রেনের জাতীয় চরিত্রাবলীর অনুমিত তফাৎ করবার জন্যে তার সাহিত্যকর্ম ব্যবহার করতেন।
গোগলের প্রথমদিকের গদ্যরচনার বিষয়বস্তু, শৈলী এবং তার পরবর্তীকালের নাটকগুলোও হ্রিহোরি ভিটকা-ওস্নোভিয়ানেঙ্কো এবং ভাসিলি নারেঝনির মতো তার সমসাময়িক বন্ধু ও ইউক্রেনীয় লেখক ও নাট্যকারদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যদিও গোগলের ব্যঙ্গাত্মক রচনা ছিল আরও বেশি পরিশীলিত ও রীতিবর্জিত। ঠিক এমন সময় নিজের জন্মভূমি ইউক্রেনের ইতিহাসের প্রতি নিজের প্রচণ্ড টান অনুভব করলেন গোগল। চেষ্টা করলেন কিয়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু কিয়েভের এক আমলা তার ভর্তি কার্যক্রম বাতিল করে দেন, স্পষ্ট বলে দেন গোগল অযোগ্য। অথচ তৎকালীন রুশ শিক্ষা মন্ত্রী সের্গেই উভারভের তার প্রতি দারুণ সমর্থন ছিল।
কেন হঠাৎ এতো বছর পরে এসে গোগলের ইউক্রেনের ইতিহাসের প্রতি তীব্র আকর্ষণ জন্মালো? আসলে বিষয়টি হলো ইউক্রেনীয় কোসাকদের ইতিহাস নিয়ে তিনি লিখেছিলেন “তারাস বুলবা”। মূলত তারাস বুলবা লেখার পরিপ্রেক্ষিতেই ইউক্রেনের ইতিহাস নিয়ে তার মধ্যে গভীর আগ্রহের জন্ম নেয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলেও ইউক্রেনের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মিখাইল ম্যাক্সিমোভিচের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।
শিক্ষক হিসেবে নিকোলাই গোগল কাজ করেছিলেন দেড় বছর। এই সময়টাকে তিনি ঠাট্টা করে বলতেন আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ! কেন তা বলতেন? মজার বিষয় হলো ১৮৩৪ সালে গোগোল সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যযুগীয় ইতিহাসের অধ্যাপকের চাকরি পান। তিনি নিজেই বলেছিলেন, এই চাকরির জন্য আমার কোন যোগ্যতাই ছিল না। সেই চাকরির কথা তিনি নিজের লেখা একটি গল্পেই ব্যঙ্গ করে লিখেছিলেন। অনেকসময় তিনি ক্লাসের আগে মুখস্ত করে ক্লাসে যেতেন এবং গড়গড় করে বলতেন যেন তিনি বমি করছেন। বেশ কয়েকটা ক্লাসে অনুপস্থিত ছিলেন এই কারণে যে তিনি এই বিষয়ে জানতেন না। শেষ পরীক্ষার দিন রুমালে মুখ ঢেকে দাঁত ব্যথার ভান করে বসেছিলেন যেন শিক্ষার্থীরা তাকে প্রশ্ন না করে। অন্য আরেক অধ্যাপক শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন সেই পরিস্থিতিতে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ১৮৩৫ সালে পদত্যাগ করেন গোগল। মাঝের চার বছর ১৮৩২ থেকে ১৮৩৬ সালের মধ্যে দারুণ পরিশ্রম করেছিলেন গোগল। বিশেষ করে পুশকিনের সঙ্গে এই সময়টাতে প্রচুর যোগাযোগ হয়েছিল তার। এই সময়টাতে পুশকিনের প্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল গোগলের মধ্যে।
২০০৯ সাল পরবর্তী রাশিয়ার মস্কোতে নোভোডেভিচি সমাধিক্ষেত্রে গোগলের সমাধি। ছবি: সংগৃহীত
রুশ সমালোচক স্টিফান শেভিরেভ এবং ভিসারিও বেলিনস্কি, আগেকার সমালোচকদের বিরোধীতা করে গোগলকে ইউক্রেনীয় লেখক বাদ দিয়ে রাশিয়ান লেখক বলেন কয়েকটি আলোচনায়। ১৮৩৬ সালের ১৯ এপ্রিল সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট থিয়েটারে তার কমেডি নাটক “দি গভর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর”(রুশ নাম রেভিজর) মঞ্চস্থ হওয়ার পর আলোচনায় আসেন গোগল। এটিই মূলত গোগলকে স্থায়ী আসন দিয়ে দেয় সাহিত্যে। রাশিয়ার প্রাদেশিক আমলাতন্ত্রকে নিয়ে চরম এই প্রহসনটি শুধুমাত্র সম্রাট নিকোলাসের হস্তক্ষেপেই মঞ্চস্থ হয়েছিল।
১৮৩৬ থেকে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত গোগল বিদেশে থেকে জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ড ঘুরে বেড়িয়েছেন যাযাবরের মতো। ১৮৩৬-৩৭ সালের শীতে প্যারিসে রাশিয়ান প্রবাসী এবং পোল্যান্ডের নির্বাসিতদের সাথে তার কাটানো জীবন এবং পোল্যান্ডের কবি অ্যাডাম মিকিউইচ এবং বোহদান জালেস্কির সাথে দেখা হওয়া যেন তার সাহিত্যের মোড় পাল্টে দিলো।
এরপর তো তিনি রোমে গিয়ে বসবাস শুরু করলেন। ১৮৩৬ সাল থেকে পরবর্তী বারো বছরের বেশিরভাগ সময়েই তিনি ইতালিতে কাটিয়েছেন। সে সময় রোমের প্রতি তার নিরন্তর ভালোবাসা তৈরি হয়। এই সময়টাতে তিনি শিল্প নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন, ইতালীয় সাহিত্য পড়েছেন এবং অপেরার প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ জন্ম নেয়।
পুশকিনের মৃত্যু গোগলকে মারাত্মক ঘা দিয়েছিল। পুশকিনের মৃত্যুর পর থেকে পরবর্তী বছরগুলোতে তার কাজের মধ্যে প্রধানতম কাজ হলো ব্যঙ্গাত্মক মহাকাব্য “ডেড সোলস”। এর পাশাপাশি তিনি অন্যান্য কাজেও যুক্ত ছিলেন, যেমন- “তারাস বুলবা”এবং “দ্য পোর্টেট”এর পরিমার্জন করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় কমেডি নাটক “ম্যারেজ” সৃষ্টির কাজ শেষ হয়েছিল। এই সময়েই বিশ্বখ্যাত ছোটগল্প “দ্য ওভারকোট”লিখেছিলেন গোগল।
১৮৪১ সালে গোগলের “ডেড সোলস” এর প্রথম অংশ সমাপ্ত হয় এবং তিনি এটি ছাপানোর জন্য রাশিয়া গেলেন এবং সেন্সরশিপ হওয়ায় এটি “দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ চিচিকোভ”নামে ১৮৪২ সালে মস্কো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। “ডেড সোলস”উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পরেই সাড়া পড়ে গিয়েছিল। এই একটি উপন্যাসই বলা চলে একজন সাহিত্যিককে চেনার জন্য যথেষ্ট।
“ডেড সোলস”এর চূড়ান্ত সাফল্যের পর, গোগলের সমসাময়িকরা তাকে একজন মহান প্রহসন লেখক হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন যিনি রাশিয়ার রাজতন্ত্রের অন্যায় দিকগুলো নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন তৎকালীন সময়ে।
১৮৪৮ সালের এপ্রিলে গোগল জেরুজালেমে তীর্থ ভ্রমণ করে রাশিয়ায় ফিরে এলেন। তার শেষ কয়েক বছরে তিনি সারা ইউক্রেন জুড়ে অবিশ্রান্তভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এই সময়ে তিনি ম্যাক্সিমোভিচ এবং ওসিপ বোদিয়ানস্কির মতো ইউক্রেনীয় পুরোনো বন্ধুদের সাথেও সময় কাটিয়েছেন। স্টারেটস বা আধ্যাত্মিক গুরু মাটভেই কনস্টান্টিনোভস্কির সাথে তার সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল। কনস্টান্টিনোভস্কির প্রভাবেই এরপর সম্ভবত গোগলের মধ্যে ভীতি জন্মায় যে তার সমস্ত কাল্পনিক কাজের পাপস্বরূপ তাকে আজীবন নরক বাস করতে হবে। এর ফলে তিনি ভীষণ অনুশোচনায় ভুগতেন। এক পর্যায়ে অত্যধিক আধ্যাত্মিক চর্চার ফলে তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে এবং তিনি গভীর অবসাদে ডুবে যেতেন। ১৮৫২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির এক রাতে গোগল তার অনেকগুলো পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলেন যার মধ্যে অধিকাংশই ছিল “ডেড সোলস” এর দ্বিতীয় খণ্ড। কেন তিনি পুড়িয়েছিলেন পাণ্ডুলিপি?
তিনি বলেছিলেন, শয়তান তার সাথে বাজে আচরণ করছে৷ তাকে অনুসরণ করছে প্রতিনিয়ত। এর কয়েকদিন পরেই তিনি বিছানায় পড়ে ছিলেন। খাওয়া-দাওয়া সব বাদ। বহু চেষ্টা করেও কেউ তাকে খাওয়াতে পারতো না। ৯ দিনের মাথায় নিকোলাই গোগল ঢলে পড়লেন চির প্রশান্তির ঘুমে।
তার মৃত্যুর পর তার সমাধিস্থল নিয়ে বহু কিছু ঘটেছে। গোগলকে ১৮৫৬ সালের ৫ মার্চ সমাধিস্থ করার আগে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট টাটিয়ানা গির্জায় গোগলের শোকস্তব পাঠ করে দানিলোভ মনাস্ট্রিতে তার বন্ধু স্লাভোফাইল আলেক্সি খোমিয়াকোভের কাছেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। তার সমাধি একটা বড় প্রস্তরখণ্ড দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল যার শীর্ষে ছিল একটা রাশিয়ান অর্থোডক্স ক্রুশচিহ্ন। ১৯৩১ সালে মস্কো কর্তৃপক্ষ এই মনাস্ট্রিটি ধ্বংস করেছিল এবং গোগলের দেহাবশেষ নোভোডেভিচি সমাধিক্ষেত্রে স্থানান্তরিত করেছিল।
মজার বিষয় হলো তার দেহ উপুড় করে শোয়ানো অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়েছে। তাই এই কথাও মনে করা হয় যে গোগলকে জীবন্ত সমাধি দেওয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য মস্কো কর্তৃপক্ষ গোলগোথা প্রস্তরখণ্ডটিকে নতুন সমাধিস্থলে নিয়ে যায়, কিন্তু ক্রুশচিহ্ন সরিয়ে দেয়। ১৯৫২ সালে সোভিয়েতরা প্রস্তরখণ্ডটিকে গোগলের আবক্ষ মূর্তির সাথে পুনঃস্থাপিত করে। প্রস্তরখণ্ডটি পরবর্তীকালে গোগলের প্রশংসাকারী মিখাইল বুল্গাকভের সমাধিস্তম্ভে পুনঃব্যবহৃত হয়েছিল। তারপর ২০০৯ সালে, গোগলের জন্মের ২০০ বছর উপলক্ষে তার আবক্ষ মূর্তিটিকে নোভোডেভিচি সমাধিক্ষেত্রের যাদুঘরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আসল গোলগোথা প্রস্তরখণ্ডটিকে আসল অর্থোডক্স ক্রুশের নকলসহ ফিরিয়ে আনা হয়।
ফিওদর দস্তয়ভস্কির “পুওর হাউস”এবং “ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট”এর মতো মাস্টারক্লাস উপন্যাসে গোগলের কথা উল্লেখ আছে। আজ পর্যন্ত গোগলের লেখা গল্প ও উপন্যাসের উপর নির্মিত হয়েছে প্রায় ১৫০টি চলচ্চিত্র৷
প্রখ্যাত রুশ সাহিত্যিক নিকোলাই চার্নিশেভস্কির মতে, ‘রুশ সাহিত্য এবং বিশ্বসাহিত্যের ওপরে গোগলের প্রচুর প্রভাব আছে।’
মিখাইল বুলগাকভ, ফিওদোর দস্তয়েভ্স্কি, রুনোসুকে আকুটাগাওয়া, ফ্ল্যানারি ও’কন্নর, ফ্রান্স কাফকার মতো বিখ্যাত সাহিত্যিকরাও তাদের সাহিত্যে গোগলের প্রভাবের কথা স্বীকার করেছেন।
আজ কিংবদন্তি রুশ সাহিত্যিক নিকোলাই গোগলের জন্মদিন। বিনম্র শ্রদ্ধা তার প্রতি।
তথ্য সূত্র:
গোগল/ রবার্ট মাগুইরি, ১৯৮৯। প্রকাশক- ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস।
রাইটার্স অ্যান্ড সোসাইটি ডিউরিং দ্য রাইজ অব রাশিয়ান রিয়েলিজম/ জো এন্ড্রু, প্রকাশক- দ্য ম্যাকমিলান প্রেস।
গোগল নিকোলাই/ এনসাইক্লোপিডিয়া।
নিকোলাই গোগল: বিটউইন ইউক্রেনিয়ান অ্যান্ড রাশিয়ান ন্যাশনালিজম/ এডিটা বজনোভস্কা, প্রকাশক- হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস।
দ্য ক্রিয়েশন অব নিকোলাই গোগল/ ডোনাল্ড ফ্যাঞ্জার, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস।
আহমাদ ইশতিয়াক