সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি না হওয়া ভারতের রাজনৈতিক অজুহাত। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনের পর তিস্তা ইস্যুতে অগ্রগতি হবে এমন নিশ্চয়তা নেই।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অজুহাত চিরদিন থেকে যাবে। সেই অজুহাতের শিকল থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আর এ জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের মানসিকতা গুরুত্বপূর্ণ। সেই মানের নেতৃত্ব ভারতের রয়েছে কিনা আমি জানি না। ভবিষ্যতে কি হয় আমাদের সে দিকটা লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা অব্যাহতভাবে আশা করে যাব।
ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের সাম্প্রতিক ঢাকা সফর সম্পর্কে গতকাল নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে তৌহিদ হোসেন এ সব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালায় যোগ দিতে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও ভারতের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা গত ১৭ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেছেন। এ সব সফরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের সাথে শীর্ষ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও হয়েছে। এ সব বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ইস্যু, বিশেষ করে কানেকটিভিটি গুরুত্ব পেয়েছে। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে শীর্ষ বৈঠকে কানেকটিভিটির পাশাপাশি তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বন্টন ইস্যুটি এসেছে। যৌথ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার ওপর বাংলাদেশের অলঙ্ঘনীয় অধিকারের বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তিস্তার পানিবন্টনের অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের জোর দাবী জানান। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বরাবরের মতই জানিয়েছেন, চুক্তিটি দ্রুত স্বাক্ষরে ভারত আন্তরিকভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং এ বিষয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
মোদির সফরে সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়টি শীর্ষ পর্যায় থেকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, কথার কোনো গুরুত্ব নেই। গুরুত্ব হচ্ছে কাজের। সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়টি বাংলাদেশ ও ভারত খুবই গুরুত্বের সাথে বহু বছর ধরেই দেখে আসছে। কিন্তু তাতে এই হত্যাকান্ড বন্ধ হয়নি। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসে বলেছেন, অপরাধ বন্ধ না হলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে না। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যেও এ ধরনের ইঙ্গিত পেয়েছি। এটা দু:খজনক। কারণ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলতে পারেন না যে অপরাধীরাই সীমান্তে মারা যায়। কেননা অপরাধীরাও বাংলাদেশের নাগরিক, তাদের গুলি করে মেরে ফেলার অধিকার কারো নেই।
দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের সফরে কানেকটিভিটিকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়ার বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, কানেকটিভিটি বাড়ানোর অনেক সুফল আছে। এর ফলে অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার হয়। তবে এ জন্য রাজনৈতিক সমর্থনটাও গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়লে আমাদের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে, প্রতিযোগিতার সক্ষমতা তৈরী হবে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালায় দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অতিথি হিসাবে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এ রকম উদযাপনের সুযোগ আমাদের সব সময় আসে না। আমাদের উদযাপনে দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের যোগ দিতে আসা প্রমাণ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভাল আছে। তারা আমাদের শুভ কামনা জানিয়েছে। তবে তার মনে এই না যে, তারা আমাদের সব ইস্যুতে সমর্থন যোগাবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালদ্বীপ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ সরাসরি সমর্থন পায়নি।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উদযাপনে পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কিন্তু আফগানিস্তানকে আমন্ত্রণ জানানোর পরও এতে যোগ দেয়নি। এর পেছনে কি কারণ থাকতে পারে – জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, সার্কভুক্ত দেশ হলেও আফগানিস্তানের সাথে আমাদের যোগাযোগ অপেক্ষাকৃতভাবে কম। আফগানিস্তানের ওপর আমাদের কোনো নির্ভরশীলতাও নেই। তাই আমাদের উদযাপনে তাদের যোগ না দেয়ার বিষয়টার খুব একটা গুরুত্ব আছে বলে আমি মনে করি না।উৎসঃ নয়া দিগন্ত