আবার বৃটিশ মিডিয়ার সংবাদ শিরোনামে সেই আইএস বধুখ্যাত শামীমা বেগম। এবার পাল্টে যাওয়া শামীমাকে উপস্থাপন করেছে ডেইলি মেইল। অনলাইনে শনিবার সকালে তাদের প্রধান সংবাদ শামীমাকে নিয়ে। তাতে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে শামীমা অধ্যায়। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই যুবতীকে নিয়ে তারা লিখেছে- নৈমিত্তিক যে পোশাক পরে মানুষ, তেমন পোশাক পরেছেন শামীমা। লন্ডনে ২০ উত্তীর্ণ যুবতীরা যেমন পোশাক পরেন, তার পরনে তেমনই পোশাক। তিনি পরেছেন গায়ের সঙ্গে আঁটোসাটো জিন্স। নাইকি’র বেসবল ক্যাপ।
গায়ে টিশার্ট। তার চুল ডাই করা। তার প্রজন্মের মেয়েরা যেমন চুল সোজা করান, তেমনি চুল সোজা করিয়েছেন তিনি। তাকে দেখে লন্ডনের যেকোন যুবতীর মতো মনে হতে পারে। তবে এই যুবতী শুধুই একজন যুবতী নন। তিনি শামীমা বেগম, যিনি ২০১৫ সালে বৃটেন থেকে পালিয়েছিলেন এবং একজন আইএস যোদ্ধাকে বিয়ে করেছিলেন। এখন তার বয়স ২১ বছর। তার সামনে যখন শিরñেদ করেছিল আইএসরা তখন তিনি ছিলেন নির্বিকার। এমনকি ম্যানচেস্টার এরিনাতে যখন বোমা হামলা করে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল, তিনি তার পক্ষে কথা বলেছিলেন। কিন্তু এই সপ্তাহে তার নতুন যেসব ছবি প্রকাশ পেয়েছে তা দেখে হতবিহ্বল হতে হয়। অনেকে, এমনকি তার পরিবারের অনেকে তাকে প্রথম দেখায় চিনতে পারবে না। সেই কালো পোশাক, পুরো শরীর ঢেকে রাখা চাদর, বোরকা, কালো হিজাব সবই তার কাছে এখন অতীত।
সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আল রোজ বন্দিশিবিরে দু’বছর ধরে নতুন এক জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। তার ঘনিষ্ঠজনরা বলেছেন, শামীমা বেগম এখন তার দিনের বেশির ভাগ সময় বন্দিশিবিরের তাঁবুতে বসে দেখেন আইটিভিতে প্রচারিত ‘গুড মর্নিং বৃটেন’ অনুষ্ঠান। কখনো খেয়ালখুশি মতো খেলা করেন। ক্যাম্পে বন্দি পশ্চিমা যুবতীদের ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা সঙ্গীতশিল্পী শাকিরার গানের সঙ্গে নাচেন। দেখেন ‘স্পাইডার ম্যান’ এবং ‘মেন ইন ব্লাক’ ছবি। শামীমা বেগমের দাবি তিনি পাল্টে গেছেন। তিনি বলেন, আমি আর আগের সেই আমি নেই। আমি বৃটেনের জনগণকে বলতে চাই, আমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিন। কারণ, আমি যখন বৃটেন ছেড়েছিলাম, তখন আমার বয়স ছিল খুব কম। তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন একটি ডকুমেন্টারি ‘ইন দ্য রিটার্ন: লাইফ আফটার আইসিস’। তাতে শামীমা এসব কথা বলেছেন।
এরই মধ্যে ইসলামিক ধ্যানধারণার পোশাক ত্যাগ করেছেন তিনি। তাই কেউ কেউ বলেন, তিনি অতীতের ভুলের জন্য নিজের কাছে অনুতপ্ত। তার পোশাক পরিবর্তনই সেই প্রমাণ দেয়। তবে অন্যরা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, তার আইনজীবী যখন বৃটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করছেন তখন বৃটিশদের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য শামীমা তার আচরণ পাল্টেছেন।
গত মাসে বৃটেনের সুপ্রিম কোর্ট একটি রায় দিয়েছে যে, নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে শামীমা বৃটেনে ফিরতে পারবেন না জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে। ওদিকে শামীমার নতুন ছবিগুলো সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সিরিয়ায় বন্দিশিবিরে তিনি ৫০ জন বৃটিশ নারী ও শিশুর সঙ্গে অবস্থান করছেন। ওই শিবিরে মোট প্রায় ৮০০ পরিবার বন্দি আছে এখন। সেখানে শামীমার মতো আরো বেশ কিছু নারী বা যুবতী স্বেচ্ছায় তাদের ইসলামিক পোশাক ত্যাগ করেছেন। এই গ্রুপের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী হোদা মুথানা (২৬), কানাডার কিমবারলি পোলম্যান। দ্বিতীয় নারীর রয়েছে পূর্ণবয়স্ক তিনটি সন্তান। তারা তিনজনই আইসিসের বধু হিসেবে পরিচিত।
শামীমা বেগম ২০১৫ সালে পালিয়ে সিরিয়া গিয়ে বিয়ে করেছিলেন ডাচ এক জিহাদিকে। তার সঙ্গে তিনি তিনটি সন্তানের মা হয়েছেন। কিন্তু জন্মের পর পরই অপুষ্টিতে তিনটি বাচ্চাই মারা গেছে। তারপর আল রোজ বন্দিশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে। ধারণা করা হয়, তার স্বামী সিরিয়ায় কুর্দিদের পরিচালিত কোনো এক জেলে বন্দি আছে। তার সঙ্গে ২০১৯ সালের পর আর দেখা হয়নি শামীমার।উৎসঃ mzamin