প্রফেসর ডঃ জসীম উদ্দিন আহমদ
সাবেক উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা, বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, ২৬ মার্চ, ২০২১। আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর
পূর্ণ হলো। সারাদেশে এবং বিদেশেও এবারের স্বাধীনতা দিবস বেশ সাড়ম্বরে পালিত
হচ্ছে। যে আশা আকাঙ্খা নিয়ে আবাল বৃদ্ধ জনতা এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও
মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলো, তার কতটুকু পূরণ হয়েছে, সে প্রশ্ন জাগা খুবই
স্বাভাবিক।
রক্তের দামে কেনা আমাদের এ প্রিয় স্বাধীনতা: তা কেবলমাত্র কয়েক মাসের
মুক্তিযুদ্ধেরই ফসল তা ভাবা মোটেই সঠিক নয়। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ষাটের দশকের
বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯র ছাত্র-গণ আন্দোলনের শানিত
চেতনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত রচনা করেছে। শোষণ আর
বঞ্চনার বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের জনগণ যুগযুগ ধরে সংগ্রাম করে আসছে।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা ছিলো শোষণমুক্ত, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার
অঙ্গীকার। প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রধান শর্তগুলো হচ্ছে মৌলিক অধিকারসমূহের
স্বীকৃতি, বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা এবং নাগরিকদের পারস্পরিক সৌহার্দ ও
সহনশীলতা। এগুলো পূরণে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হতে পারিনি।
বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা অর্থাৎ মুক্ত চিন্তার আবহ দেশে এখন অনুপস্থিত। ‘ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক, আইনজীবী ও
অন্যান্য শ্রেণী পেশার মানুষ আন্দোলন করছে। এই আইনে গ্রেপ্তাররকৃৎ সাংবাদিক
মোস্তাক আহমদের জেলে থাকার সময় মারা যাওয়ার ঘটনায়, বিক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়
উঠেছে। মুক্ত চিন্তা, যা স্বাধীনতার অন্যতম চেতনা, তা অব্যাহত রাখার জন্য এই আইন
বাতিল এখন গণ-দাবীতে পরিণত হয়েছে।
ইউ এন ডি পি’ র মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ মধ্যম সারির দেশে উন্নত হয়েছে।
জাতিসংঘের সূচকে অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। নিঃসন্দেহে
এটি একটি বিরাট সাফল্য।
গণতান্ত্রিক চর্চা বাংলাদেশে দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেখানে
অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন হওয়ার কথা, এর পরিবর্তে বর্তমানে বাংলাদেশে নির্বাচন একটি
প্রহসনে পরিণত করেছে।
বিশ্ব মহামারী করোনার থাবায় বাংলাদেশও বিপর্যস্ত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব
অনুযায়ী ১৪ মার্চ পর্যন্ত দেশে ৫,৫৯,১৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং ৮,৫৭১ জনের
মৃত্যু হয়েছে। এসব হিসাবের বাইরে পরিচিত অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন,
এমনকি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সাবেক সহকর্মী। আবার নতুন করে দেশে
সংক্রমন বাড়ছে। ব্যাপক জনগোষ্টিকে টিকা প্রদান এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি
অনুসরণই এই মহামারি থেকে বাংলাদেশের জনগণকে সুরক্ষা দিতে পারে।
এখানে, বিগত ৫০ বছরে বিভিন্ন সেক্টরে অগ্রগতি ও ব্যর্থতা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত
করতে চাই –
পানি সমস্যা ও চুক্তি
প্রথমেই ভাটির দেশ বাংলাদেশের পানি সমস্যা এবং এই সম্পর্কিত চুক্তি নিয়ে ৫০
বছরের পর্যালোচনা করতে চাই। দেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী।
বাংলাদেশ একটি ভাটির দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদনদী ভারত
থেকে বাংলাদেশে এসে অবশেষে বঙ্গোপসাগরে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী
বাংলাদেশের মোট পানির প্রায় ৯৩% আসে উজান থেকে।আর ৭% এর মত বৃষ্টির পানি।
কিন্তু ভারত আন্তর্জাতিক রীতি-নীতির উপেক্ষা করে উজানে বাঁধ ও ড্যাম নির্মাণের
মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করছে। এর ফলে বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে মরুকরণ
প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
প্রথমেই, গঙ্গার(পদ্মার)উজানে ফারাক্কা বাঁধ।১৯৭৪ সাল থেকে ভারত একটি এডহক
চুক্তির ভিত্তিতে পানি প্রত্যাহার শুরু করেছে। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর
ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চের পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ে ১৯৭৭
সালে ১ম ফারাক্কা চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তিতে গ্যারান্টি ও আরবিট্রেশন ক্লজ
ছিল। ১৯৯৬ সালে ভারতের সাথে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এই
চুক্তিতে কোন গ্যারান্টি ও আরবিট্রেশন ক্লজ নেই। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে চুক্তির
শর্ত অনুযায়ী ১০% এর কম পানি বাংলাদেশ পায়না।
ইতোমধ্যে, ফারাক্কার উজানে গঙ্গায় ভারত আরো বেশ কয়েকটি বাঁধ ও ব্যারাজের
মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করছে। ভারতের আন্তঃবেসিন নদী-সংযোগ প্রকল্প নামক
একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ
ভবিষ্যতে পানির অভাবে ধীরে ধীরে এক বিরাট মরুভূমিতে পরিণত হবে, বলে বিশেষজ্ঞদের
আশংকা। ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। বাংলাদেশকে
জাতি সংঘ, বিশ্ব ব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় ভারতের
সঙ্গে গ্যারান্টি ও আরবিট্রেশন ক্লজযুক্ত দেশের স্বার্থ রক্ষাকারী একটি চুক্তিতে
উপনীত হওয়া সৰ্বাত্মক প্রচেষ্টা এখন থেকেই গ্রহন করতে হবে।
তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে ভারত দীর্ঘ দিন যাবৎ তাল বাহানা করছে। শুস্ক
মৌসুমে পানির অভাবে তিস্তা বাঁধের নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার একর জমির কৃষিকাজ
দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে, বস্তুতঃ ঐ অঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অবিলম্বে
পরিবেশ ভারসাম্য ভিত্তিক পানি বন্টনের কার্য্যক্রম গ্রহন করতে হবে। প্রয়োজনে
জাতি সংঘের ৬ষ্ঠ কমিটিতে বাংলাদেশকে তিস্তা, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য
অভিন্ন(আন্তর্জাতিক)নদীর পানির হিস্যার ব্যাপারটি উপস্থাপন করতে হবে।
ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্ৰ মোদী বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে
রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে আসছেন। দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশকে ভারতের কাছ থেকে
পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবী জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে, এটি সবার
প্রত্য্যশা। বৰ্তমানে, তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের টালবাহানার প্রেক্ষিতে, এই
বেসিনে প্রতি বছরের বন্যা, ভাঙন ও খরার কারনে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যে
বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়, তা মোকাবেলা করে, পাশাপাশি এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের
জন্য, বাংলাদেশ ও গণ চীনের পাওয়ার চায়না কোম্পানি প্রায় ৮০০ কোটি টাকার এক মহা
পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এতে নীলফামারীর ডালিয়ার তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্ট থেকে
মহিপুর ও কাউনিয়া হয়ে তিস্তার মোহনা পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার এলাকার টেকসই
উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র অনুযায়ী এই মহা-পরিকল্পনায়
চীনের ঋণ সহায়তার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।
বিস্তারিত প্রকল্প বর্ণনায় রয়েছে, ড্রেজিং এর মাধ্যমে নদীর নাব্যতা বাড়ানোর
পাশাপাশি ১৭০ বর্গ কিলোমিটার জমি উদ্ধার এবং নদীর মূল স্রোত স্থিতিশীল করে নদীর
উভয় তীরে স্যাটেলাইট শহর নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। সাথে থাকবে উচ্চ আয়ের শিল্প ও
কৃষি উন্নয়নের ব্যবস্থা। সোলার পার্ক, স্কুল, হেলথ কমপ্লেক্স, মসজিদ ও সাধারণ
ব্যবহারের সুযোগ সুবিধা। নদীর দুই তীরের তৈরি বাঁধ এবং তার সঙ্গে সংযুক্ত সড়ক পথে
যান চলাচল এবং নদীতে নৌ চলাচল এই অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। সমীক্ষার
পর নদীর বাম তীরে ২৭টি গ্রোয়েন, ক্রসবার ও ৪৬ কিলোমিটার লেভি এবং ডান তীরে
২৩টি গ্রোয়েন, ক্রসবার ও ৭৮ কিলোমিটার লেভি নির্মাণের মাধ্যমে মধ্যখানে মূল
স্রোত সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হয়েছে। মূল স্রোত উপরের অংশে ৭০০ মিটার এবং নিচের
দিকে ১ কিলোমিটার প্রশস্ত হবে। খননের ফলে তিস্তার পানি পরিবহন ক্ষমতা বেড়ে
যাবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত দেয়া
হয়েছে। এই সংবাদে তিস্তা অঞ্চলের জনগণ দারুন উদ্বেলিত। আন্তর্জাতিক ফারাক্কা
কমিটি ও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত
জানিয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে ভারত এই
প্রকল্পের ব্যাপারে অখুশি এবং কি ভাবে এটি বন্ধ করা যায়, সে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
জাতীয় স্বার্থে বাংলাদেশ সরকারকে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদন
স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ৭০ মিলিয়ন, বর্তমানে প্রায় ১৬৫.৮৪
মিলিয়ন। গত ৫০ বছরে এ দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ২.৩৭ গুণ। তবে আশার কথা, ১৯৭০
সালে যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৩.০১, আর বর্তমানে কমে ০.৯৮% হয়েছে। তবে
এই হারেও জনসংখ্যা বাড়লে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০৩০ সালে ১৯৩.৩ মিলিয়ন হবে
বলে অভিক্ষেপ করা হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বর্গমাইলে ৩২৭৭ জন মানুষ বসবাস করে। বিশ্বের অষ্টম ঘন
বসতিপূর্ণ দেশ, বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২.১১% লোকের বাস।
অন্যদিকে, শহর অঞ্চলের জনসংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের
নগরবাসি জনসংখ্যা ৩৬.৫ মিলিয়ন, যা মোট জনসংখ্যার ২২%।গত দুই দশকে নগরবাসি
প্রায় ২৮ মিলিয়ন বেড়েছে।পৃথিবীর কোথাও নগর অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এত উচ্চ হার
দেখা যায়না।
জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্য অন্যতম। আশার কথা হচ্ছে, ১৯৭০ সালের
তুলনায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২.৩৭ গুন বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশ এখন খাদ্যে অনেকটা
স্বয়ংসম্পুর্ন। ১৯৭৪ সালে খাদ্যাভাবে বাংলাদেশ যে স্মরনাতীত কালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ
হয়েছিল– তাতে দু’ লক্ষের অধিক লোকের প্রাণহানি হয়। বিগত বছরগুলোতে খাদ্য
উৎপাদনের বৃদ্ধি সত্যি আশাব্যাঞ্জক। তবে এর সূচনা হয়েছিলো শহীদ প্রেসিডেন্ট
জিয়াউর রহমানের সময় থেকে।
বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে দেশের কৃষকদের অবদান সবচেয়ে বেশী।পূর্বে যেখানে
জমিতে এক ফসল ফলানো হতো, সেগুলো এখন তিন বা চার ফসলী জমি। উন্নত জাতের ইরি
এবং বোরো ফসলের উদ্ভাবন এবং একই সাথে কৃষি জমিতে সার ও কীটনাশকের প্রয়োগ
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক।
একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে ভবিষ্যতে
মোকাবেলা করতে পারবেনা। ২০৩০ সালে দেশের হ্রাসকৃত আবাদযোগ্য
জমিতে(বর্তমানের প্রায় ৬০%) বাড়তি প্রায় ২৭ মিলিয়ন লোকের খাদ্য উৎপাদন দুরূহ
হয়ে পড়বে।
এ বছর প্রায় ৩৫.৮ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদনের অভিক্ষেপ করা হয়েছে।উৎপাদন
বৃদ্ধিতে জমিতে বেশি করে সার(বিশেষ করে ইউরিয়া)ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।
১৯৭০ দশকের তুলনায় বাংলাদেশে কীটনাশকের ব্যবহার প্রায় ৫০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সার ও কীটনাশকের অপরিকল্পিত ব্যবহারের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা
দিচ্ছে।এ ব্যাপারে আমাদেরকে যথেষ্ট সজাগ হতে হবে।
শিক্ষা
ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের শিক্ষিতের হার ৭২.৮৯%, যা গত ৫০ বছরের
ঈর্ষণীয় অগ্রগতি। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষতঃ নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার গতিও বেশ আশাব্যাঞ্জক। স্বাধীনতার সময়ে যেখানে ৬টি মাত্র পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে ৫৩টি হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশে রয়েছে ২টি
আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়।
২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী
বাংলাদেশে অনুমোদিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৩টি। ১৯৯২ সালে নর্থ
সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। ১৯৯২
সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে
বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বি এন পি সরকার গঠন করে। ওই সরকারের একটি
যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান।
বর্তমানে প্রায় একশত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া
বাকিগুলোর মান নিয়ে আতংকিত হওয়ার যথেষ্ঠ কারণ আছে। এদের বেশির ভাগই
টিউটোরিয়াল হোমের মতো, কয়েকটির নামে সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগও রয়েছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও ইমেজ সংকটে ভুগছে। এদের বেশির ভাগেই মানসম্মত
গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই–নতুনগুলোতে একেবারেই নেই। শিক্ষার মান অধোমুখী।
গবেষণা, শিক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিশ্ব-
রাঙ্কিং এবং এশিয়া ভিত্তিক রাঙ্কিং করা হয়। সাম্প্রতিক রাঙ্কিংএ এক কালের
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার ১৩৪তম ও
বাংলাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯তম (ঢাকা ট্রিবিউন, ২৬ নভেম্বর ২০২০)।
এবং বিশ্ব রাঙ্কিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৬৪০ এবং বুয়েট ১৭০৮। কোন
বিশ্ববিদ্যালয়ই বিশ্বের ১০০০ এর মাঝে স্থান করতে পারছেনা।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন শিক্ষক নিয়োগ মেধা ও যোগ্যতার পরিবর্তে দলীয়
আনুগত্যের ভিত্তিতে হচ্ছে।এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগ বাণিজ্যেরও অভিযোগ
উঠেছে।
সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হচ্ছে বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের
দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি নিয়ে তদন্তের খবর। রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তদন্ত
হচ্ছে।উপাচার্যদের যেখানে নীতি নৈতিকতার রোল মডেল হওয়া উচিত, তাদের এই
ধরনের কর্মকান্ড খুবই নিন্দনীয় এবং তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে, তাদের বিরুদ্ধে
দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ইউনেস্কো(UNESCO) র তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে ৬০ হাজারের বেশি বাংলাদেশী ছাত্র-
ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যায়। এর মধ্যে, অর্ধেকেরও
বেশি মালয়েশিয়ায় যায়, অথচ ১৯৬০ দশকে মালয়েশিয়ার ছাত্র-ছাত্রীদের পছন্দের
তালিকায় ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান। মালয়েশিয়ার পরই ভারতে যাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, ভারতে শুধু যে
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা যাচ্ছে তাই নয়, বহু অভিভাবক
তাদের সন্তানদেরকে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার জন্য ভারত পাঠাচ্ছে। প্রতি বছর
বাংলাদেশের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার বেশ কিছু অংশ দেশের বাইরে ছাত্র-ছাত্রীদের
পড়ার জন্য ব্যয় হয়।
১৯৬০-৭০ ও ৮০ দশকে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের গণতান্ত্র প্রতিষ্ঠার
আন্দোলন, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে
গৌরবোজ্জল ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল।
বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির অবক্ষয় ঘটেছে। ছাত্র নেতারা টেন্ডার বাজি, চাঁদা বাজি,
অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে টর্চার সেল
স্থাপনের অভিযোগ উঠছে। গত বছর বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে ফেনী নদীর পানি
চুক্তির বিরোধিতা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার কারণে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
লীগের কিছু কর্মী(গুন্ডা) নিষ্ঠূরভাবে হত্যা করেছে।
শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখতে হলে এ ধরণের অপ-ছাত্ররাজনীতি
কঠোর হস্তে দমন করতে হবে এবং ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল অতীত ফিরিয়ে
আনতে হবে।
স্বাস্থ্য সেবা
বাংলাদেশে বর্তমানে ৫ টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ৩৬টি পাবলিক ও ৭০ টি প্রাইভেট
মেডিকেল কলেজ আছে। এছাড়াও প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী
পরিচালিত ৬টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষাদানের পাশাপাশি
স্বাস্থ্য সেবাও দিয়ে আসছে।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ছোট বড় মিলিয়ে ৫৮১৬টি
হাসপাতাল ছিল। বর্তমানে আরও কয়েকটি হাসপাতাল যুক্ত হয়েছে। তবে এদের
সিংহভাগের সেবা খুব মানসম্মত নয়। বেসরকারি আধুনিক কয়েকটি হাসপাতালের
চিকিৎসা ব্যয় মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও সাধারণ জনগণের নাগালের বাইরে। তাই
স্বাধীনতার অন্যতম প্রত্যাশা “সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা” দিন দিনই দূরে সরে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্ণীতি, এ খাতকে বিপর্যস্থ করে
তুলেছে।বিশেষ করে করোনা সংক্রমনের প্ৰথম দিকে শাহেদ, ড. সাবরিনা ও অন্যান্যদের
ব্যাপক দুর্নীতি, ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদান, চিকিৎসার নামে প্রতারণা অনেক প্রাইভেট
মেডিক্যাল হসপিটালের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণার সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার প্রবণতা দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও
মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যবৃন্দ তুলনামূলক কম ব্যয় ও উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত
যায়। ২০১৫ সালে ১২০,৩৮৮ জন এবং ২০১৭ সালে ২২১,৭৫১ জন চিকিৎসার জন্য ভারত
গিয়েছে। উচ্চ মধ্যবিত্ত, অঢেল বিত্তশালী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ব্যাংকক ও
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য যায়। এতে বাংলাদেশের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার একটি
বিরাট অংশ ব্যয় হয়।
দারিদ্র বিমোচন
স্বাধীনতার অন্যতম প্রত্যাশা ছিল এ দেশ থেকে দারিদ্র বিমোচন। কিন্তু ৫০ বছরেও তা
সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যার ২০.৫
শতাংশ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দারিদ্র সীমার নিচে বাস করতো। তবে বিশ্ব মহামারী
করোনার কারনে গত বছরের জুন মাসে তা ২৯.৫ এ উঠে এসেছে।
বিশ্ব ব্যাংকের সংজ্ঞায় যাদের প্রতিদিনের আয় ১.৯ মার্কিন ডলার বা ১৬১ টাকার কম
(১$ = ৮৪.৮২ টাকা), তাদেরই বাংলাদেশে দারিদ্র সীমার নিচে অবস্থান।
অন্যদিকে, পাকিস্তান আমলে সারা পাকিস্তানে আদমজী, ইস্পাহানি, দাউদ ইত্যাদি ২০টি
পরিবার হাজার কোটি টাকার মালিক ছিল, বাংলাদেশে এখন হাজার হাজার কোটি টাকার
মালিক অসংখ্য। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট ও দুর্নীতির জন্য অনেকেরই আঙ্গুল ফুলে
কলাগাছ, নয় বটগাছে পরিণত হয়েছে।
ব্যাংকিং খাতে দূর্ণীতি
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহ খুব সম্ভবতঃ সবচেয়ে দুঃসময় পার করছে। শাসক
দলের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংকগুলোয় জনগণের সঞ্চিত অর্থের লুটপাট ও সীমাহীন
দূর্ণীতিই, এই খাতকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
ব্যাংকের দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে
পাচার হয়েছে। এদের অনেকেই এখন কানাডাসহ বিশ্বের অনেক দেশে রাজকীয় জীবন যাপন
করছে।
টিআইবি’র সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১৮০টি দেশের
ভিতর ১৪৯তম কমদূর্ণীতিগ্রস্থ দেশ। এমন বাংলাদেশতো স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে
মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সড়ক যোগাযোগ
দেশে অনেক নতুন সড়ক ও মহা সড়ক হয়েছে-তা সত্যি আশাব্যাঞ্জক। বঙ্গবন্ধু সেতু,
গোমতী সেতু, বুড়িগঙ্গার উপর অনেক স্থানে সেতু নির্মিত হয়েছে। চীনের ঋণ সহায়তা ও
বাংলাদেশের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজও শেষ পর্যায়ে। এটি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায়
উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে।
তবে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব সম্ভবতঃ এখন বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় দক্ষিন এশিয়ার
দেশগুলোর ভেতর সবচেয়ে প্রাণঘাতি দেশ হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রতি বছর
২০,৭৩৬ থেকে ২১,৩১৬ মারা যায় (বিশ্বব্যাংক, ২০১৭)।এটা সত্যি দুঃখজনক। শাসক
দলের অনিয়ন্ত্রনাধীন পরিবহন সংগঠনের জন্যই মূলতঃ বাংলাদেশের সড়ক মৃত্যুর হার
এতো বেশী। দেশবাসির প্রত্যাশা নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ।
ঢাকা শহরে যানযট
ঢাকা শহর এখন বিশ্বের সবচেয়ে যানযটযুক্ত শহর। ঢাকা শহরে বর্তমানে দুই কোটি
লোকের অধিক বাস করছে।এই সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। যানযট নিরসনের জন্য
কয়েকটি ফ্লাইওভার নিৰ্মিত হয়েছে। দৈনিক অবজার্ভার পত্রিকার ২০১৯ সালের ৭
মার্চের এক প্ৰতিবেদন অনুযায়ী, যানযটের জন্য শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৫ মিলিয়ন
কর্মঘন্টা নষ্ট হয়, এর ফলে দৈনিক ৩৭০ মিলিয়ন টাকার ক্ষতি হয়।
যানযটের অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে অদক্ষ ও নিরক্ষর ড্রাইভার, ত্রূটিপূর্ণ সিগন্যাল
সিস্টেম, অপ্রস্থ রাস্তা ঘাট, যান বাহন নিয়ন্ত্রণে অপর্যাপ্ত জনবল, যত্রতত্র
পার্কিং ও ড্রাইভারদের ওভারটেকিং প্রতিযোগিতা। যানযট থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য
দ্রুত কার্য্যকরী ব্যবস্থা না নিলে, ঢাকা অচিরেই স্থবির নগরীতে পরিণত হবে।
জি ডি পি, মাথা পিছু আয় ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
বাংলাদেশের সাধারন জনপ্রতি জিডিপি ২০২০ সালের জন্য প্রায় ২২১৪ মার্কিন ডলার,
এটি একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনা ভাইরাসের কারণে
বিশ্ব অর্থণীতিতে যে মন্দা দেখা দিয়েছে, তার ফলে, বাংলাদেশের জিডিপিও অনেক কমে
যাবে বলে যে আশঙ্কা করা হয়েছিলো, তা মোটামোটি ভাবে উৎরে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।
তবে দিন দিনই বৈদেশিক ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে। ২০১৮ সালে বৈদেশিক ঋণ ছিল
৩৩.১৮বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২৮১৪.৩৩ বিলিয়ন বাংলাদেশী টাকা, যা, বাংলাদেশের
জিডিপি’ র ৩৪%।
বৈদেশিক মুদ্রার আয় ও স্থিতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন
ডলার, ২০২০র জানুয়ারীতে ছিল ৩০.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, আগের মাসে রিজার্ভ ছিল
৩০.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!
স্বাধীনতার পর থেকে রিজার্ভ এর পরিমান ক্রমে ক্রমে বেড়ে ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে
স্থিতি/পৌঁছেছে।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস্ হচ্ছে তৈরী পোশাক শিল্প। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার
আমলে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু, আর সময়ের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে তা
বিকশিত হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাত থেকে আসে ২৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
করোনা ভাইরাস ও অন্যান্য সমস্যার কারণে এ খাতের আয় বেশ কমে গেছে।আগামী
দিনগুলোতে আরো কমার সম্ভাবনা।
২য় খাত বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের দ্বারা প্রেরিত অর্থ/রেমিট্যান্স। ২০১৯ সালের
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্সের পরিমান ১৬৯১.৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং জানুয়ারী ২০২০
তে ১৬৩৮.৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিশ্ব অর্থণীতিতে যে মন্দা, শ্রম বাজারের সংকোচন এবং চলমান করোনা ভাইরাসজনিত
কারণে, আগামী দিনগুলোতে এ খাতে, বাংলাদেশেরও বৃদ্ধির হার হয়তো কমে যাবে।
বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি
বাংলাদেশ মূলতঃ আমদানি নির্ভর দেশ। শিল্প কারখানার যন্ত্রপাতি, গার্মেন্টস, ঔষধ
শিল্পের কাঁচামাল, ইলেক্ট্রনিক্স ও কম্পিউটার শিল্পের যন্ত্রাংশ এ সবই বিদেশ থেকে
আমদানি করতে হয়। যে দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়, দেশগুলোর শীর্ষে চীন।২০১৮-
১৯ অর্থবছরে ১০ মাসে চীন থেকে ১৩.৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম পরিমান আমদানি
করা হয়। দ্বিতীয় স্থানে ভারত। এফ বি সি সি আই(প্রেসিডেন্ট)এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৭-
১৮ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশে ৮.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম পরিমান
আমদানি করা হয়, আর ভারতে রপ্তানি হয় মাত্র ০.৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের
পণ্যসামগ্রী(তথ্যসূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন, ২৮ জানুয়ারী ২০১৮)। এ হচ্ছে বৈধ পথে
আমদানি, ভারত থেকে বৈধ পথের বাইরের আমদানি পণ্য যোগ করলে, এর পরিমান অনেক
বেশি হবে।
স্বাধীনতার পর থেকেই ক্রমে ক্রমে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতির পরিমান বিশেষতঃ চীন ও
ভারতের সঙ্গে দ্রুত বেড়ে চলেছে। দেশের অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করার জন্য এ দেশ
দুটির সঙ্গে রফতানি বৃদ্ধির কার্যক্রম হাতে নিয়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমান ধীরে ধীরে
কমিয়ে আনতে হবে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই উন্নয়ন হয়েছে, তবে এ উন্নয়ন
কোন সরকারকেরই একক কৃতিত্ব নয়, উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আগামী
দিনগুলোতে ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে এগুতে পারলে এই ধারা বেগবান হবে। স্বাধীনতার
চেতনার আলোকে দুর্নীতি মুক্ত, গণতান্ত্রিক এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চার এক সুন্দর
বাংলাদেশের প্রত্যাশায় আমরা।