দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে ‘হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’র মহাপরিচালক প্রকৌশলী আশরাফুল আলম এবং তার স্ত্রীকে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পেছনে এ বাবদ তার খরচ হয়েছে ২০ কোটি টাকার বেশি।
গুঞ্জন উঠেছে, এ অর্থ সংস্থাটির অনুসন্ধান কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট উপ-পরিচালক, পরিচালক, মহাপরিচালক থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত ভাগবাটোরা হয়েছে। দুর্নীতির দায় থেকে অব্যাহতি দিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘাটে ঘাটে সক্রিয় ছিল একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ কারণে আশরাফুল দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সুপারিশ করেও সেটি প্রত্যাহার হয়ে যায়।
সুপারিশ করা হয় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দানের। অব্যাহতি দানের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদনটি কমিশনে জমা পড়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্যাকেজ ডিলের আওতায় বিদায়ী কমিশনকে দিয়েই অনুসন্ধানের সমাপ্তি ঘটাতে এখন তোরজোড় চলছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার একজন কমিশনার দায়মুক্তির ওই ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানা গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয় ২০১৯ সালে। তখন তিনি গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী। এখন ‘হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’র মহাপরিচালক। গণপূর্তে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। অনুসন্ধানের (নথি নং- ০০.০১.০০০০.৫০১.০১.০৬১.১৯) দায়িত্ব দেয়া হয় দুদকের অনুঃতদন্ত-১ এর সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামানকে। এই ডেস্কটির দায়িত্বে রয়েছেন- মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব।
অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম, তার স্ত্রী সাবিহা আলমের সম্পদ বিবরণী চাওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাই করেন সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তা। তাতে দেখা যায়, আশরাফুল আলমের আইএফআইসি ব্যাংকের লালমাটিয়া শাখায় (সঞ্চয়ী হিসেব নম্বর-১০২৫১৭৯১৫৫০৩১) জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত সম্পদ রয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭১৫ টাকা। একই ব্যাংকের বনানী শাখার ৮ লাখ টাকার এমআইএস (নং-১০১৬১৯২) রয়েছে। এফডিআর (নং-০০০০১৫৯১৩৩২০০) রয়েছে ৮ লাখ টাকার। আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান শাখায় রয়েছে ১২ লাখ টাকার এমআইএস (নং-১০০২-১৭৯১৫৫-২৩৬)।
দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে আশরাফুল আলম ৪২ লাখ ৫৫ হাজার ৩১৩ টাকা ব্যাংকে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। বিবরণী যাচাইকালে ৪৭ লাখ ৩৫ হাজার ২৮ টাকার তথ্য বেরিয়ে আসে। এখানে তিনি ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৫.১২ টাকার তথ্য গোপন করেন। সম্পদ বিবরণীতে আশরাফ পৈত্রিক, ক্রয়কৃত এবং হেবা দলিলে প্রাপ্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে ৫৫ লাখ ৮ হাজার ৬৭২ টাকার সম্পত্তি রয়েছে- মর্মে উল্লেখ করেন। যাচাইয়ে বেরিয়ে আসে ৮১ লাখ ৮৯ হাজার ১০৭.৪৬ টাকার সম্পদ। ২৬ লাখ ৮০ হাজার ৪৩৫.১২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন।
নিজের ৬টি আয়ের উৎস উল্লেখ করেন তিনি। এগুলো হচ্ছে- অতীত কৃষি আয় ১,৫০,০০০/-, বেতন-ভাতা প্রাপ্ত ৯৪,৩২,৫২০/-, পরামর্শ ফি বাবদ আয় ২,৩৫,০০০/-, পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত জমির মূল্য ১,০০০০০/-, উপহার হিসেবে প্রাপ্ত আসবাবপত্রের মূল্য ৮০,০০০/-, উপহার হিসেবে প্রাপ্ত স্বর্ণালঙ্কার মূল্য ২,৮৯.২০০/-। সব মিলিয়ে মূল্য দেখান ১ কোটি ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭২০ টাকা। কিন্তু যাচাইকালে ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭২৩.৪৬ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসবহিভর্‚ত সম্পদ বেরিয়ে আসে তার।
মালিকানাধীন স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে বগুড়া সোনাতোলা উপজেলাধীন দিগদাইর মৌজায় ১২ শতক জমিতে (দলিল নম্বর : ৩১৪৭, তারিখ : ২৬/০৮/২০১৩) ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা গোপন করেন। একই মৌজায় ৬ শতক জমিতে (দলিল নং ২০৬৫/ তারিখ : ২৬/০২/২০১৩) ৬৩ হাজার ২৬০ টাকা গোপন করেন। দিগদাইর মৌজায় আশরাফুল আলম এবং তার স্ত্রী সাহিবা আলমের যৌথ নামে কেনা ১৮৩ শতক জমির (দলিল নং-৩৫৩০, তারিখ : ২৫/০৮/২০১৪) মূল্যে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ১৮০ টাকা গোপন করেন।
একই এলাকায় ১১.৫০ শতক জমি ক্রয়ের মূল্য গোপন করতে তিনি ‘হেবা দলিল’-এর আশ্রয় নেন। এই দলিলেও তিনি ২১৬ টাকা গোপন করেন। সোনাতোলা উপজেলার ফুলবাড়ি মৌজায় ০৪৫০ অযুতাংশ জমিক্রয়ে (দলিল নং-১৫৮২, তারিখ : ২৫/০১/২০০০) ৪৬ হাজার ৬৪ টাকার তথ্য গোপন করেন। আশরাফের সম্পদ বিবরণীতে দলিলে উল্লেখিত মূল্যের ভিত্তিতে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৯ টাকার সম্পত্তি মূল্য দেখান। যাচাইকালে বেরিয়ে আসে এ সম্পদের দলিল মূল্যই ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৭৯ টাকা। অর্থাৎ ২২ লাখ ৭২০ টাকা তিনি হিসাব বিবরণীতে গোপন করেন।
আশরাফুল আলমের স্ত্রী সাবিহা আলমের স্থাবর সম্পত্তি মধ্যে ঢাকার পশ্চিম ধানমন্ডি রোড-৮/এ, বাড়ি-৩২২, নং-১/সিতে রয়েছে- ‘একান্ত ভ‚বন’ নামে ১৪২০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। আয়ের উৎস দেখানো হয়েছে ‘ব্যবসায়িক, টিউশনি, উপহার হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ’। ২০০৩ সালের ২৩ অক্টোবর কেনা এই ফ্ল্যাটের দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ২৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। ‘অতীত আয়, ব্যাংক সুদ এবং বাড়িভাড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থ’ দিয়ে এটি কেনা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয় বিবরণীতে। কিন্তু দলিলে উল্লেখ রয়েছে ২৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এখানে কমা দেখানো হয় ২৭ হাজার টাকা।
তবে ধানমন্ডির এই ফ্ল্যাটটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। ঢাকার গুলশান আবাসিক এলাকার রোড-৪৯, বাড়ি-২১ এ অবস্থিত ৫/এ নম্বর ফ্ল্যাটটির মালিকও সাবিহা আলম। সম্পদ বিবরণীতে এটি ক্রয়ের উৎস দেখানো হয়েছে, অতীত আয়, বাড়িভাড়া, ব্যবসায়িক আয়, টিউশনি এবং উপহার লব্ধ অর্থ। ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল ফ্ল্যাটটি (দলিল নং-৩০৮২) কেনা হয়। ২ হাজার ৫০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটটির দলিল মূল্য দেখানো হয় মাত্র ৮৩ লাখ ২২ হাজার ৩২২ টাকা। যা অবিশ্বাস্য ধরনের কম। বগুড়া সোনাতলা উপজেলার শিহিপুর মৌজায় রয়েছে ৫ বিঘা জমি (খতিয়ান নং-৮০৮)।
রাজউকের উত্তরা প্রকল্পে রয়েছে আড়াই কাঠার প্লট (সেক্টর -১৬/সি, বøক-০২, প্লট নং-২০)। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ কেনা এই প্লটটির (দলিল নং-২৫৬৮) দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ১১ লাখ ৩ হাজার ৩৫৯ টাকা। উৎস দেখানো হয়েছে উপহার থেকে প্রাপ্ত অর্থ। বগুড়া পৌরসভায় স্নিগ্ধা আবাসিক এলাকায় রয়েছে ৩ তলা ভবন (বাড়ি নং-১২৭/সি)। এটির জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। ভবন নির্মাণ ব্যয় দেখা হয়েছে ১৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ১০ লাখ ৯ হাজার টাকা গোপন করা হয়েছে।
সাবিহা আলমের আয়ের উৎসবিহীন সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে রাজধানীর ইস্টার্ণ হাউজিংয়ে আড়াই কাঠার প্লট (নং-এন-১০, রোড নং ৫/২) রয়েছে। ২০০৭ সালের ২৭ অক্টোবরে তিনি এটি কেনেন। মূল্য দেখান ৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। দাখিলকৃত বিবরণীতে এটির তথ্যও সম্পূর্ণ গোপন করা হয়।
বগুড়া সোনাতোলা দিগদাইর মৌজায় ১৮৩ শতক (দলিল নং-৩৫৩০) জমি রয়েছে। এটি আশরাফুল আলম ও সাবিহা আলমের যৌথ নামে কেনা। এটির মূল্যে ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ১৮ টাকা গোপন করা হয়। একই মৌজায় ২১ শতক জমির মালিক সাবিহা আলম। ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল এটি কেনা (দলিল নং-১৭৩১) হয়। এখানে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৫০ টাকা গোপন করা হয়েছে। একই মৌজায় ১১.৫ শতক জমির (দলিল নং-২১০৯) মূল্য ৫২ হাজার ৬২৩ টাকা গোপন করা হয়। এভাবে একই মৌজায় যথাক্রমে ১৬ শতক, ১১ শতক , ৪শতক জমিতে তিনি যথাক্রমে: ১ লাখ ২৬ হাজার, ১ লাখ ৫ হাজার ২০০ এবং ৭৭ হাজার ২৫৪ টাকা গোপন করেন।
যাচাইকালে দেখা যায়, সাবিহা আলম স্থাবর সম্পত্তিতেই ৩৬ লাখ ৮ হাজার ৯২৮ টাকা গোপন করেন। এসব সম্পদ ক্রয়ে অর্থের উৎসও দেখাতে পারেননি তিনি। সাবিহার নিজ নামে ১ কোটি ৮২ লাখ ৯২ হাজার ৬০৯ টাকার স্থাবর সম্পদ কেনেন। এছাড়া তিনি ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়রি পর্যন্ত ২ কোটি ১৩ লাখ ৬,৫১১ টাকার অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেন। যাচাইয়ে দেখা যায়, তিনি স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে ৩৬ লাখ ৮ হাজার ৯২৮ টাকার সম্পদ গোপন করেছেন।
সূত্রমতে, দুদকের সহকারী পরিচালক (অনু: ও তদন্ত-১) মো. সাইদুজ্জামান গত বছর ২৮ ডিসেম্বর আশরাফুল আলম ও সাবিহা আলমের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবিহা আলমের নিজের কোনো উপার্জন না থাকা সত্তে¡ও স্বামী আশরাফুল আলমের অবৈধ উপায়ে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ দ্বারা নিজ নামে জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৮২ হাজার ৬৩৫ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিন আইন-২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) এর ৪(২), (৩) এবং দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন। আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭২৩.৪৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারায় পৃথক মামলা রুজুর অনুমোদন চাওয়া হয় প্রতিবেদনে।
কিন্তু প্রতিবেদনটি জমা দেয়ার কিছু দিনের মধ্যেই রহস্যজনকভাবে প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করা হয়। সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান প্রত্যাহার করে নতুনভাবে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা পান। নতুন এই ‘নির্দেশনা’ আসে কমিশনের শীর্ষ পর্যায় থেকে। অনুসন্ধান কর্মকর্তার ওপর ‘উপরের চাপ’ও আসতে থাকে। কমিশনে এই মর্মে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, কথিত ‘নির্দেশনা’ এবং ‘চাপ’টি আসে মূলত: মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে। আশরাফুল আলমের পক্ষে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করে। আশরাফুল আলম এবং তার স্ত্রীকে দুদকের ‘দায়মুক্তি সনদ’ পাইয়ে দিতে ঘাটে ঘাটে ঢালা হয় এই অর্থ। এই লেনদেন সম্পন্ন হয় দুদকের বাইরে। যদিও কোনো অনৈতিক লেনদেনেরই প্রমাণ থাকে না। কিন্তু মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে ঘুষ দিয়েছেন- পুলিশের একজন সাবেক কর্মকর্তার এমন দাবির ভিত্তিতে সংস্থার একজন সিনিয়র পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কমিশন। যদিও ‘লেনদেনকৃত ঘুষ’র অর্থ আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়নি। আশরাফুল আলমও ২০ কোটি টাকার বিনিময়ে দুদকের দায়মুক্তি সনদ খরিদ করেছেন- মর্মে গুঞ্জন রয়েছে। এ লেনদেনের কোনো অডিও ক্লিপ নেই। কিন্তু ক্লু হিসেবে দুই ব্যক্তির মাঝে সম্পাদিত একটি ‘অঙ্গীকারনামা’কে ভিত্তি ধরা যেতে পারে। এটি স্বাক্ষরিত হয় আশরাফুল আলমের শ্যালক সদরুল ইসলাম সায়মন এবং জনৈক ‘রিন্টু আনোয়ার’র মধ্যে। এটি সম্পাদিত হয় ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর।
এতে বলা হয়, ‘আমি মো. সদরুল ইসলাম সায়মন (জাতীয় পরিচয়পত্র নং; ১৯৮৩২৬৯২৫৩০০৭২৫২৩), মো. আশরাফুল আলম পিতা-মৃত কাশেম আলী আকন্দ, মাতা আমেনা খাতুন, জাতীয় পরিচয়পত্র নং (স্মার্ট কার্ড : ১৯২২৪৬৩৯২০) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদফতর (রংপুর জোন), গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ফ্ল্যাট নং-৫/এ, বাড়ি নং-২১, রোড-৪৯, গুলশান-২, ঢাকা, এর প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতিতে সহযোগিতা করার জন্য জনাব রিন্টু আনোয়ার, ৩৪, বিজয়নগর, আমি মো. আশরাফুল আলমের সম্মতি, অনুরোধ এবং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রিন্টু আনোয়ারের অফিস ৩৪, বিজয়নগর, চতুর্থ তলার সভায় উপস্থিত হয়ে আমার নামীয় অ্যাকাউন্টের ২০ কোটি টাকার (বিশ) তারিখবিহীন একটি চেক অগ্রীম হিসেবে উক্ত অঙ্গীকারনামার সাথে নিন্মে স্বাক্ষরকারীগণের উপস্থিতিতে নিজ হাতে স্বাক্ষর করে প্রদান করিলাম। যাহার চেক নং-১০৩৮৯৬, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, লক্ষীপুর শাখা, রাজশাহী।
উল্লেখ্য যে, প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে মো. আশরাফুল আলমের পদোন্নতি চিঠি প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তারিখ দিয়ে জনাব রিন্টু আনোয়ার উক্ত চেক নগদায়ন করে নিতে পারিবেন এবং এখানে আরও উল্লেখ্য যে, আমার উক্ত চেক মো. আশরাফুল আলমের পদোন্নতির চিঠি প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে যদি নগদায়ন না করে দেই, তবে জনাব রিন্টু আনোয়ার আমার প্রদেয় উক্ত চেকটি ‘ডিজ অনার’ করিয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। আমি সজ্ঞানে সুস্থ মাথায় নিম্নলিখিত সাক্ষীগণের সামনে স্বাক্ষর প্রদান করলাম।’
‘অঙ্গীকারনামা’য় স্বাক্ষরকারী সদরুল ইসলাম সায়মনের ঠিকানা ‘বাড়ি-৮/৩, রোড-৪/এ, ৫ম তলা, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা’ উল্লেখ করা হয়। আশরাফুল আলমের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়- রোড-৪৯, বাড়ি-২১, ফ্ল্যাট নম্বর ৫/এ। দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এই ফ্ল্যাটটির মালিক আশরাফুল আলমের স্ত্রী সাবিহা আলম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, কথিত এই অঙ্গীকারনামায় ‘পদোন্নতি’র বাবদ লেনদেনের কথা উল্লেখ থাকলেও এটি সম্পাদিত হয়েছে দুদক থেকে দায়মুক্তির ‘প্যাকেজ ডিলিং’কে আড়াল করার লক্ষ্যে পদোন্নতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আশরাফুল আলমের শ্যালক সদরুল ইসলাম সায়মন। সায়মনের বন্ধু রিন্টু আনোয়ার। রিন্টু আনোয়ার নিজেকে লেখক, সাংবাদিক ও সংগঠক হিসেবে পরিচয় দেন। একসময় তিনি জাতীয় পার্টি করতেন। এ দল থেকে তিনি এমপি নির্বাচনও করেছেন।
আশরাফুল আলম দম্পতির সম্পদ অনুসন্ধান সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক মহাপরিচালক (বিশেষ অনু:-তদন্ত) সাঈদ মাহবুব ইনকিলাবকে বলেন, এটি এখনও অনুসন্ধানাধীন। ২০ কোটি টাকার ‘প্যাকেজ ডিলের’ আওতায় আশরাফুল আলম দম্পতিকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে, দুদকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এ অর্থের ভাগ পেয়েছেন- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এদিকে ‘অঙ্গীকারনামা’য় উল্লেখিত সায়মনের মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার ফোন করা হয়। ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। এতে তিনি সাড়া দেননি।
উৎসঃ ইনকিলাব