পা, হাত আর চোখের যাদু দেখাতে থাকেন। কালো বোরকায় ঢাকা ফর্সা শরীর অমাবস্যার চাঁদের মতো উঁকি দিতে থাকে। কখনও কখনও শাড়ি পরে শুরু করেন। রঙিন আলোয় তার শরীর, গোলাপী ঠোঁট দর্শকদের মধ্যে ভীষণ আবেদন ছড়িয়ে দেয়। মনে হয় যেনো আরব্য রজনীর কোনো নর্তকী। ধীরে ধীরে ভাঁজ খোলে আনন্দ ছড়িয়ে দেন। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে এক এক করে খুলেন নিজের পোশাক। ছুড়ে দেন পছন্দের পুরুষের নাকে-মুখে।
এভাবে ধীরে ধীরে উষ্ণতা ছড়াতে থাকেন। বিটের তালে তালে রাতভর থেমে থেমে পুরো শরীর প্রদর্শন করেন।
এই তরুণীর সঙ্গ পেতে, একটু কাছে পেতে নক করেন অনেকেই। কিন্তু প্রতি রাতে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি একান্তে সময় দেন না তিনি। অবশ্য এজন্য অর্থ গুনতে হয় বেশ। তাই বিত্তশালী ছাড়া সবার ভাগ্যে জুটে না ভার্সিটি পড়ুয়া কুড়ি বছরের এই তরুণীর সান্নিধ্য। মিম নামের এই তরুণীর নানা রূপ। এই পরিবেশে যেমন খোলামেলা। বাইরে একদম অচেনা। রাত শেষে ভোর। দেখে বুঝার উপায় নেই এই মেয়েটি সারারাত নিজের রূপ-সৌন্দর্যে উষ্ণতা ছড়িয়েছে। তার পুরো শরীর ছিলো প্রায় উন্মুক্ত। নাচ, গান থেকে লঞ্চের কেবিনে তিনিই সময় কাটিয়েছেন কয়েকজনের সঙ্গে। ভোরে বোরকা পরে প্রস্তুতি নেন বাসায় ফেরার। বাসা যাত্রাবাড়ী। মা, বাবা, ভাই, বোন সবাই আছে। বাড়তি টাকা রুজির জন্যই বেছে নিয়েছেন এই পথ।
একটা সময় ছিলো ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে কমার্শিয়াল পার্টিতে ডান্স করতেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক আগেই সেগুলো বন্ধ। তারমধ্যে করোনার প্রকোপ। সব মিলিয়ে খারাপ যাচ্ছিলো সময়। মিম অবশ্য থেমে থাকেননি।
বাবু নামে এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে খোঁজ পান নতুন মাধ্যমের। সদরঘাট থেকে প্রতি বৃহস্পতিবারে যাত্রা করে প্রমোদতরী। গন্তব্যহীন এই লঞ্চ রাতভর জলে ভাসে। লঞ্চের ভেতরে থাকে বিলাসী আয়োজন। নাচ, গান, মদ, জুয়া..। ওয়েস্টার্ন পোশাক পরে জুয়াড়িদের পাশে বসে থাকলেও বকশিশ মেলে। খেলার ফাঁকে ফাঁকে জুয়াড়িরা হাত বুলিয়ে দেন নরম শরীরে। তরুণী হাসিমুখে সেবা দিয়ে প্রাণবন্ত রাখার চেষ্টা করেন। মদ, বিয়ারের গ্লাসটা এগিয়ে দেন। এরকম অন্তত ১৫-১৬ জন তরুণীর মধ্যে মিম একজন।
মিম নাচ জানেন ভালো। ফিল্মে অভিনয়ের জন্য নাচ শিখেছেন। অভিনয়ও করেছেন দু-একটি ফিল্মে। কিন্তু তা আর মুক্তি পায়নি। নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মিম। নিজের বিলাসী চাহিদা পরিবারের মেটানো সম্ভব না বলেই লেখাপড়ার পাশাপাশি বেছে নেন এই কর্ম। মিমের প্রতি প্রচ- আকর্ষণ পরিচিত পুরুষদের। চরম আবেদন ছড়িয়ে দেন তিনি।
নির্দিষ্ট অর্থ দিলেই মিমকে মেলে লঞ্চের কেবিনে। পরিবারের সবাই জানে মিম (ছদ্মনাম) ডিজে। আয়োজকদের কমিশন বাদ দিয়ে একরাতে তার আয় ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। সপ্তাহে এমন একটি রাত পান তিনি। তবে মিম জানান, সম্প্রতি লঞ্চ পার্টিতে যাচ্ছেন না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ির কারণেই তা বন্ধ আপাতত।
গত ১২ই ফেব্রুয়ারি বুড়িগঙ্গা নদীতে একটি লঞ্চে অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ, জুয়া ও মাদক গ্রহণের দায়ে ৪৯ নারীসহ ৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় অভিযুক্ত বিলাসবহুল ‘এমভি রয়েল ক্রুজ-২’ নামের লঞ্চটিও জব্দ করা হয়। লঞ্চে মাদক ছাড়াও পাওয়া গেছে, দুটি জি-লুব্রিকেটিং জেল, দুই বোতল ভিগোসা শরবত, এক বোতল তনু লায়ন ফ্রট সিরাপ, ৫০ গ্রামের এক বোতল শুভ আজমেরি গোল্ড সিরাপ। র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাহফুজুর রহমান জানান, লঞ্চে জুয়া, মদ, অশ্লীল-অসামাজিক কর্মকা- হতো। খবর পেয়ে অভিযান চালায় র্যাব।উৎসঃ মানবজমিন