গণফোরাম থেকে পদত্যাগ করেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। রবিবার বিকেল তিনটায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে তিনি নিজেই এ তথ্য জানান।
লিখিত বক্তব্যে রেজা কিবরিয়া বলেন, আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি এবং আমার পদত্যাগপত্র দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কাছে ইতোমধ্যেই জমা দিয়েছি। এছাড়া আমি গণফোরামের দলীয় সদস্যপদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছি। অন্যদিকে জ্যেষ্ঠতা নিয়েও দলটির নেতাদের মধ্যে নতুন করে বিরোধ তৈরির খবর পাওয়া গেছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের দাবি, ড. কামালসহ বিবদমান দুই অংশের পাঁচজন করে মোট ১১ জন নেতার সমন্বয়ে দলের একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও সিলেট-২ আসনের এমপি মোকাব্বির খানের নাম তালিকায় এক নম্বরে দেওয়ায় ওই বিরোধের সূত্রপাত হয়েছে। দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদসহ সিনিয়র অনেক নেতা এই ক্রমবিন্যাস মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা মনে করছেন, সংসদ সদস্য হওয়ায় মোকাব্বির খান নিজেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন এবং আগামী কাউন্সিলে তিনি দলের সভাপতি হতে চাইছেন। এমনকি তাঁর সমর্থক বলে পরিচিত আ ও ম শফিকউল্লাহর নামও তাঁদের আগে দেওয়া হয়েছে বলে ওই অংশ জানতে পেরেছে।
সূত্রমতে, এ কারণেই দুই অংশের বিরোধ মীমাংসার ঘোষণা আটকে আছে। সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারি ড. কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েও পরে তা বাতিল করেন।
তবে জানতে চাইলে মোকাব্বির খান এই ঘটনাকে ‘বাজে কথা’ বলে মন্তব্য করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘নামের তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। যাঁরা দলের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে চান তাঁরাই এগুলো ছড়াচ্ছেন।’
মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ‘দলীয় কর্মসূচি নিয়ে আমরা সারা দেশে মাঠে আছি। তবে কিছু সমস্যার কারণে সংবাদ সম্মেলন আটকে আছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণফোরামের অন্তত দুজন নেতা জানান, ‘সিনিয়রিটি-জুনিয়রিটি দেখে নামের ক্রম ঠিক করার মতো অবস্থা ড. কামালের নেই।’ মোকাব্বির খানের প্রতি ইঙ্গিত করে তাঁরা বলেন, এসব তিনি বা তাঁর সমর্থকরাই করাচ্ছেন। সম্ভবত আগামী কাউন্সিলে তিনি দলের সভাপতি হতে চান।’
এদিকে, গণফোরামের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি মনঃপূত না হওয়ায় ড. রেজা কিবরিয়া কয়েক মাস আগে থেকেই দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পাশাপাশি সারা দেশের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রেজা কিবরিয়া। এ ছাড়া সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কঠোর বিবৃতি দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর এসব প্রস্তাবের কোনোটিই দল বা জোট গ্রহণ না করায় তিনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গণফোরামের দুই অংশের বিরোধ মেটানোর উদ্যোগে তিনি জড়িত হননি। তা ছাড়া ১১ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি দল পরিচালনা করলে সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকাও অগুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। তাই সব দিক বিবেচনা করে সম্প্রতি ড. কামাল হোসেনের কাছে চিঠি দিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন বলে জানা গেছে।
চিঠিতে তিনি পদত্যাগের কারণ ‘ব্যক্তিগত’ বলে উল্লেখ করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন