সাইদুর রহমান ছিলেন নাইটগার্ড। সেখান থেকে ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। শনিবার (৩০ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র পদে বিজয়ী হন।
নব নির্বাচিত মেয়র সাইদুর একটি কলেজের নাইট গার্ড ও পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি দলের বিপক্ষে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন।
মুন্ডুমালা পৌরসভার নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুর রহমান ৫ হাজার ৪৫৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমির হোসেন আমিন নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৯৮ ভোট।
স্থানীয়রা জানান, মুন্ডুমালা পৌরসভায় সাইদুর রহমান দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়ে চমক দেখালেন। তার বাড়ি পৌর সদরের মুণ্ডুমালা মহল্লায়। তিনি মুণ্ডুমালা মহিলা কলেজের নৈশপ্রহরী।
এর আগে, মুণ্ডুমালা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের প্রায় ১০ জন দলীয় প্রার্থী মাঠে নামেন। কিন্তু মনোনয়ন পান মুণ্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং একাধিক বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আমির হোসেন আমিন।
বর্তমান মেয়র গোলাম রাব্বানী আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি আর নির্বাচন করবেন না। দলের সবাই আমির হোসেনকেই দলীয় প্রার্থী হিসেবে মেনে নেন। গত ৩১ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাইদুর রহমান মনোনয়নপত্র জমা দেন।
তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুণ্ডুমালা পৌরসভার বর্তমান মেয়র গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘সাইদুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাকে প্রার্থী হতে নিষেধ করা হয়েছিল। তারপরও তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। এ কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয় দল থেকে।’
এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি তানোর উপজেলার দুবইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সমাবেশে স্থানীয় সাংসদ ও আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক চৌধুরী নির্বাচনে সাইদুরের পরাজয় নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন দলীয় নেতাকর্মীদের।
তিনি বলেছিলেন, ‘সাইদুরের মতো একটা লোক মেয়র হওয়া মানে আমাদের মুখে চুনকালি মাখা। সে নাকি একটা কলেজের প্রফেসর। আসলে সে কলেজে রাতের পাহারাদারের চাকরি করে। সে মেয়র হলে এ রকম একটা লোকের কাছ থেকে আমার আপনার চারিত্রিক সার্টিফিকেট নিতে হবে। একবার ভাবুন ব্যাপারটা।’
এমপি আরও বলেন, পৌর আইন অনুযায়ী সে পৌরসভার নির্বাচন করতে পারে না। তথ্য গোপন করে নির্বাচনে গেছে। মানে স্বামী হবে মেয়র, বউ হবে ঠিকাদার। আপনারা কী হবে বুঝতে পারছেন?’
নব নির্বাচিত মেয়র সাইদুর রহমান বলেন, ‘গণজোয়ার কখনো ঠেকানো যায় না। জনগণের চাপে আমি মেয়র প্রার্থী হয়েছিলাম। এরপর আমাকে নানাভাবে বাধা দেয়া হয়েছে। এমনকি দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতারাও আমার বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়ে আমাকে বহিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেদের সিদ্ধান্তেই রায় দিতে পেরেছে জনগণ।’
মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় নৈশ প্রহরীর চাকরি ছেড়ে দেবেন বলেও জানান তিনি।