এর আগে সরকারি প্রকল্পের আওতায় ঘাস চাষ, কাজুবাদাম ও কফি চাষ শেখাসহ নানা কারণে বিদেশ সফরের আয়োজন থাকলেও এবার আলুর বীজ চাষ দেখতে বিদেশ যাবেন নয় কর্মকর্তা। এ সফরে ব্যয় হবে ৭৮ লাখ ১৮ হাজার টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এতে প্রতিজনের পেছনে খরচ হবে প্রায় ৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা করে। ‘জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিবীজ উন্নয়ন ও বর্ধিতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই সুযোগ রাখা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আলু চাষ কী এমন বিষয় যেটি দেশে ভেতর থেকে জানা সম্ভব নয়, বিদেশ যেতে হবে? এ ধরনের ব্যয় অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। পরিকল্পনা কমিশনকে বিশেষভাবে পর্যালোচনা করে দেখা উচিত, এমন ব্যয় জনগণের কোনো উপকারে আসবে কিনা। যারা বিদেশে যাবেন তারা ফিরে এসে আলু চাষ বাড়াতে কি ধরনের ভূমিকা রাখবেন সেটিই প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার।’
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে এটি উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- আলুর ২০ লাখ ও উদ্যান জাতীয় ফসলের ৫০ হাজার প্লান্টলেট উৎপাদন, কৌলিসম্পদের ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্টিং এবং দেশি জাতের ফল ও সবজি ফসলের কৌলিসম্পদ সংরক্ষণ, দানাশস্য ও বীজআলুর ভাইরাসসহ অন্যান্য ধ্বংসাত্বক রোগব্যাধি শনাক্তকরণ কার্যক্রম চালু করা, টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি ভবন নির্মাণ, এক হাজার বর্গমিটার সিডলিং হাউজ নির্মাণ, ৪৫০ বর্গমিটার নেট হাউজ গ্লাস হাউজ নির্মাণ, এক হাজার বর্গমিটার গ্রিন হাউজ, ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি ও কেমিক্যালস সংগ্রহ করা, বীজ উৎপাদনে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ে ৫ হাজার ৩১০ জন কৃষক, বীজ ডিলার, বেসরকারি বীজ উৎপাদকদের এবং ৩০০ জন কমৃকর্তাকে প্রশিক্ষণ, এবং জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত প্লান্টিং মেটিরিয়াল বীজ কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয় করার জন্য এক হাজার ৪২টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন ও ২০০টি মাঠ দিবস বাস্তবায়ন।
সূত্র জানায়, নিম্নমানের বীজ ও ভাইরাস সংক্রান্ত রোগের কারণে এদেশে ফসলের একর প্রতি উৎপাদন হার আশানুরূপ নয়। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত ভাইরাসমুক্ত ও মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারে ফসল উৎপাদন হার প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এর আগে বাস্তবায়িত জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি বীজ উন্নয়ন, বর্ধিতকরণ, মান নিরূপন ও প্রযুক্তি বিস্তার প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয় টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি স্থাপনসহ ১২ লাখ মানসম্পন্ন অনুচারা উৎপাদন করা হয়। অনুচারা উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে ২০১৬-১৭ সময়কাল থেকে বিএডিসি কোনো বীজ আলু আমদানি করছে না। বর্তমানে বিএডিসিতে টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে ছয় লাখ প্ল্যান্টলেট হতে বছরে সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন উন্নত ও রোগমুক্ত আলুবীজ উৎপাদন ও কৃষক পর্যায়ে বিতরণ সম্ভব হচ্ছে। চাহিদা থাকায় এ লক্ষ্যমাত্রা বছরে ৬০ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এজন্য বছরে অতিরিক্ত আরও ছয় লাখ প্লান্টলেট উৎপাদন করতে হবে। জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে আলুসহ উদ্যান ফসলের রোগমুক্ত মানসম্মত বীজ উৎপাদনের জন্য বিএডিসির অবকাঠামোগত সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্লান্টলেট উৎপাদনের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- বিদ্যমান তিনটি টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরিতে ২০২৪ সালের মধ্যে আলুর ২০ লাখ অনুচারা উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের বীজ আলুর চাহিদা পূরণ করে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা হবে। উদ্যান জাতীয় ফসলের ৫০ হাজার অনুচারা উৎপাদন করে বিএডিসির বিদ্যমান উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্র ও অ্যাগ্রোসার্ভিস সেন্টারে সরবরাহ করা হবে। এছাড়া সিড হেলথ ও মলিকুলার ল্যাবরেটরিতে বীজের রোগব্যাধি শনাক্তকরণ ও বিএডিসির বিভিন্ন ফসলের কৌশলসম্পদ বিশ্লেষণ, বিশুদ্ধকরণ, উন্নয়ন ও জার্মাপ্লাজম সংরক্ষণ এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীব প্রযুক্তি, টিস্যু কালচার, ফসল উৎপাদনের কৌশল ইত্যাদি বিষয়ে সর্বাধুনিক এবং সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের ৩০০ কর্মকর্তা ও ৫ হাজার ৩১০ কৃষককে জ্ঞান উন্নয়ন ও দক্ষতা বাড়ানো।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্বল্প সময় ও পরিসরে অধিক পরিমাণ উচ্চফলনশীল ও জলবায়ু অভিযোজনশীল বীজ রোপণের মাধ্যমে সামগ্রিক উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। কৃষক পর্যায়ে মানসম্মত ও রোগমুক্ত বীজ বিতরণ করা হলে ফল এবং সবজির উৎপাদন ও ফলন বাড়বে। ফলে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ আমদানি ব্যয় কমে যাবে। এছাড়া ফসলের উৎপাদনশীলতা বেড়ে গেলে কৃষকের আয় বৃদ্ধিও পাবে। যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’