পরীক্ষা ছাড়াই প্রকাশিত হলো উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) ফল। করোনাভাইরাসের ছোবলে পরীক্ষার হলে বসতে পারেননি ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন শিক্ষার্থী। অগত্যা পরীক্ষা ছাড়াই তাদের সবাই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন। ‘অটোপাস’ পেয়েছেন শতভাগ শিক্ষার্থী। পরীক্ষা ছাড়া এ ফলে এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এ সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে তিন গুণের বেশি। এমনকি গত এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ-৫ এর চেয়েও অনেক বেশি। এই অভূতপূর্ব ফলের পরেও নেই চিরায়ত চিত্র। ঢাক-ঢোল পেটানোর উৎসব।
মিষ্টি মুখের উল্লাস। গেল বছরের ফলে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৪৭ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষার্থী। যা মোট পরীক্ষার্থীর তিন দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর ২০২০ সালে তাহলো তিন গুণেরও বেশি। এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন শিক্ষার্থী। যা মোট শিক্ষার্থীর ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সর্বোচ্চ ফলে এগিয়ে রয়েছেন ছাত্রীরা। ৮৩ হাজার ৩৩৮ জন পেয়েছেন জিপিএ-৫ আর ছাত্র ৭৮ হাজার ৪৬৯ জন।
২০২০ সালের পহেলা এপ্রিল হওয়ার কথা ছিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ব্যবহারিক পরীক্ষাসহ তা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৩ই মে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ১৭ই মার্চ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুয়ার। বারবার পেছাতে পেছাতে শেষে ৭ই অক্টোবর ঘোষণা করা হয় ‘অটোপাস’ দেয়া হবে তাদের। এরপর ৩০শে জানুয়ারি আইন সংশোধন করে ফল প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়। এইচএসসি ও সমমানে ২০১৯ সালে পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তার আগের বছর ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
গতকাল গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী তার সামনে থাকা ল্যাপটপে বাটন চেপে ফলাফল ঘোষণা করেন। এর আগে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের নিকট থেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ফলাফল গ্রহণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর রাজধানীর স্বনামধন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সেখানে ছিল না শিক্ষার্থীদেও উপস্থিতি। কারণ আগে থেকেই নির্দেশনা ছিল ফল ঘিরে যাতে কোনো ধরনের জমায়েত না করা হয়। ভিকারুননিসা ন্যূন ও সিদ্ধেশ্বরী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে দেখা মেলে গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর। প্রধান ফটক বন্ধ, খোলা পকেট গেট। কয়েকজন শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতেও নেই কোনো উচ্ছ্বাসের ছটা।
সাধারণভাবে জেএসসি/সমমান পরীক্ষার ২৫ শতাংশ ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার ৭৫ শতাংশ বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসি-২০২০ এর ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে। জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ৭৫ শতাংশ বিবেচনা করে এইচএসসি’তে আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়। বিজ্ঞান বিভাগের জেএসসি/সমমান পরীক্ষার গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৭৫ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসি’র পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি/সমমান পরীক্ষার গণিত ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি/সমমান পরীক্ষার গণিত ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক পরপর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসি’র মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
গ্রুপ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেএসসি/সমমান পরীক্ষার গণিত ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক পরপর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসি’র মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। আংশিক বিষয়ের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অকৃতকার্য বিষয়ের নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে এভাবেই ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে জিপিএ-৫ এ এগিয়ে রয়েছে ঢাকা বোর্ড। আর সর্বনিম্ন জিপিএ-৫ পেয়েছে মাদ্রাসা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। আর সাধারণ বোর্ডগুলোর বিবেচনায় সর্বনিম্ন জিপিএ-৫ পেয়েছে সিলেট বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। নয়টি সাধারণ বোর্ডসহ ১১টি বোর্ডের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন সর্বাধিক ঢাকা বোর্ডে ৫৭ হাজার ৯২৬ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড ২৬ হাজার ৫৬৮ জন। এভাবে যথাক্রমে তৃতীয় অবস্থানে দিনাজপুর ১৪ হাজার ৮৭১ জন, যশোর ১২ হাজার ৮৯২, চট্টগ্রাম ১২ হাজার ১৪৩ জন, ময়মনসিংহ ১০ হাজার ৪০, কুমিল্লা ৯ হাজার ৩৬৪, বরিশাল ৫ হাজার ৫৬৮, সিলেট ৪ হাজার ২৪২, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে ৪ হাজার ১৪৫ ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৮ জন শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে জিপিএ-৫ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এক লাখ ২৩ হাজার ৬২০ জন, মানবিক থেকে ১৯ হাজার ৬৬৪ ও ব্যবসা থেকে ১০ হাজার ৩৩০ জন।