ধর্ম-বর্ণসহ নানা ধরনের সংস্কার ও জাতিগত ভেদাভেদ ভুল প্রেম-ভালাবাসার টানে বাংলাদেশে ছুটে আসছেন অনেক বিদেশি তরুণী। এটি এখন বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচয়ের সূত্র ধরে ঘর ছেড়েছেন ভালোবাসার টানে।
সকল ভেদাভেদ ভুলে সাত সাগর তের নদী পাড়ি দিয়ে উড়ে এসেছেন বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে। ভালোবাসার টানে ঘর ছাড়ার ঘটনা সমাজে অহরহ ঘটলেও বর্তমান যুগে দেশ ছাড়ার বিষয়টি যুক্ত হয়েছে। বিষয়গুলো মিডিয়ার বদৌলতে আলোচিত হয়েছে। অনেকেই প্রেমের টানে দেশ ছাড়লেও হয়নি কোন সংসার।
আবার অনেকেই স্ত্রীর সাথে বিদেশ পাড়ি জমিয়ে চুটিয়ে করছে সংসার, হয়েছে সন্তানও। সুখে কাটছে তাদের দাম্পত্য জীবন। বিদেশ থেকে পাড়ি জমিয়ে প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসা এ রকম কয়েকজন দম্পতির খোঁজখরব নিয়ে তুলে ধরা হচ্ছে পাঠকের উদ্দেশ্যে-
১. ফাতেমা- আশিকুরের সুখের সংসার বছর পাঁচেক হলো বিয়ে করেছেন বাংলাদেশের আশিকুর রহমান ও মালয়েশিয়ার কলেজছাত্রী ফাতেমা বিনতে আবদুর রহমান। জানা গেছে, কাজের সন্ধানে ২০১১ সালে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান আশিকুর। বছর দুয়েক পর সেখানে পরিচয় ঘটে ফাতেমার সঙ্গে। আশিকুর ২০১৫ সালে দেশে আসেন। এরপর তার মালয়েশিয়া ফিরতে দেরি হচ্ছিল। ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায় ফাতেমার। প্রেমিকের টানে চলে আসেন ঢাকায়। এরপর ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী মাহবুব হাসানের চেম্বারে বিয়ে করেন দুজন। আশিকুরের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মান্দিবাগ গ্রামে। বিয়ের পর স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে গেছেন আশিকুর। বর্তমানে দুজনেই মালয়েশিয়ায় থাকেন। দুই সন্তান তাঁদের।
২. সুখে আছেন এলিজাবেথ আর মিঠুন বিশ্বাসের সঙ্গে ২০১৫ সাল থেকে সুখে আছেন এলিজাবেথ আর মিঠুন। মিঠুনের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেম হয় মার্কিন তরুণী এলিজাবেথের। ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি প্রেমের টানে চলে আসেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহের এক গ্রামে। ৯ জানুয়ারি এলিজাবেথকে বিয়ে করেন মিঠুন বিশ্বাস। ভালো চলছে তাদের সংসারজীবন। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মানে দুজনে সুন্দর জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এখন বসবাস ভার্জিনিয়া শহরে। দুজন দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন বলে জানিয়েছেন মিঠুনের ভাই পলাশ বিশ্বাস।
৩. ভেঙে গেছে সাহেদ ও লুসির সম্পর্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্রাজিলের লুসি ক্যালেন ও বাংলাদেশের সাহেদ আহমেদ প্রণয়ের শুরু। ভালোবাসার টানে ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন লুসি। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ধর্মান্তরিত হয়ে সাহেদকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর স্ত্রীর সঙ্গে ব্রাজিলে পাড়ি জমান সাহেদ, কিন্তু সেখানে গিয়ে ভিন্ন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। জানতে পারেন এর আগেও স্ত্রী লুসির বিয়ে হয়েছিল। এমনকি সন্তানও রয়েছে তার। সাহেদ বুঝতে পারেন। তিনি চরমভাবে প্রতারিত হয়েছেন। লুসির সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন তিনি।
৪. প্রেম এখনো অটুট থাইকন্যা সুপুত্তোর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় নওগাঁর ছেলে অনিক খানের। অনিকের সরলতা দেখে প্রেমে পড়ে যান সুপুত্তো। অবশেষে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিবারের অনুমতি নিয়ে মাত্র পাঁচ দিনের জন্য বাংলাদেশে আসেন তিনি। অনিকের পরিবারের কাছে নিজেউ বিয়ের প্রস্তাব দেন। তবে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি তখন শূন্যহাতেই ফিরে যেতে হয় তাকে। মাস তিনেক পর আবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন সুপুত্তো। এ যাত্রায় অনিকের পরিবারের সম্মতি পেয়ে যান তিনি। মুসলমান হলেন নাম পাল্টে রাখা হয় সুফিয়া খাতুন। নাটোরের আদালতে বিয়ে হয় তাদের। ৩৬ বছর বয়সী সুফিয়া থাকেন লাইল্যান্ডেই। এখন ফাস্ট ফুডের ব্যবসা করেন। এদিকে নওগাঁয় অনিক ইলেকট্রনিকস পণ্যের একটি দোকান চালান। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেন সুফিয়া। বছরে বার দুয়েক নওগাঁ আসেন।
৫. ফিরে গেলেন জুলিয়া প্রেমের কারণে মালেয়শিয়া ছেড়ে টাঙ্গাইলের সখীপুরের মনিরুল ইসলামের কাছে ছুটে এসেছিলেন জুলিজা বিনতে কামিস। ফেসবুকে তাদের প্রেমের সূচনা। ২০১৭ সালে বিয়ে হয় তাদের। তবে মনিরুলের কপালে সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বিয়ের সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে জানতে পারেন, মালয়েশিয়ায় জুলিজার আরও একটি সংসার রয়েছে। তবে মজার ব্যাপার হলো মালয়েশিয়ার ওই তরুণীর আগের স্বামীও ছিলেন বাংলাদেশি। তার চারটি সন্তান আছে। বাংলাদেশে আসার পর ১৭ দিনের মাথায় সাবেক স্বামীর কাছে ফিরে যান জুলিজা।
৬. জীবিকার তাগিদে সিঙ্গাপুরে প্রবাসজীবন শুরু করেন কুড়িগ্রামের ছেলে রুবেল। চাকরি নেন কাচের কারখানায়। একই কারখানায় রুবেলের মতো প্রবাসী শ্রমিক ছিলেন ফিলিপাইনের ফ্লোডিলিজ এভিল টপিয়া। এই পরিচয় সূত্র ধরেই ভালোবাসার ফানুস ওড়ান দুজনে। তবে ভালোবাসার আকাশে কালো মেঘের ছায়া দেখা দেয় রুবেলের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে এলে। ২০১৭ সালে বাধ্য হয়ে দেশে ফেরেন রুবেল। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ হতে থাকে তাদের।
ব্রেকিংনিউজ