জনি রায়হান
রাজধানীর ভাটারা এলাকার নিজ বাসা থেকে মডেল সাদিয়া নাজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। সাদিয়া আত্মহত্যা করেছেন বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভাটারা এলাকার ওই ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন মডেল সাদিয়া। এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়েও ঠিকঠাক হয়ে আছে। কিছু দিন পরে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু কী কারণে হঠাৎ করেই আত্মহত্যা করলেন এই মডেল। তা তদন্ত করছে পুলিশ। তবে সাদিয়ার ঘর থেকে একটা সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সেই সুইসাইড নোটে আত্মহত্যার নানা রকমের কারণ উল্লেখ করেছেন মডেল সাদিয়া নাজ।
পুলিশ সূত্র জানায়, ভাটারা এলাকার ওই ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন মডেল সাদিয়া। তার বাবা মা সবাই খুলনায় থাকেন। গতকাল রাত ১১টার পর থেকে মেয়ের সাথে ফোনে কোনো যোগাযোগ করতে পারছিলেন না সাদিয়ার বাবা।
পরে বাধ্য হয়েই আনুমানিক রাত ৩টার দিকে ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন দিয়ে পুলিশের সহায়তা চান তিনি। এরপর ভাটারা থানা পুলিশের দায়িত্বরত এসআইকে পাঠানো হয় সাদিয়ার বাসার ঠিকানায়।
ওই এসআই তার সংগীয় ফোর্সসহ সাদিয়ার বাসায় গিয়ে দরজা বন্ধ পায়। এরপর তার আত্মীয়-স্বজনের এবং অন্য প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতেই দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেই ফ্যানের সঙ্গে শাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় সাদিয়ার মরদেহ দেখতে পায়। পরে লাশটি নিচে নামায় পুলিশ।
‘যা আছে সেই সুইসাইড নোটে’
সাদিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) আতিকুল রহমান সাদিয়ার ঘর থেকে অন্যান্য আলামতের সাথে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সাদিয়ার মরদেহ উদ্ধারের পরে তার ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে তিনি মারা যাওয়ার আগে বিভিন্ন বিষয় লিখে গেছেন।
সূত্রমতে, সুইসাইড নোটে সাদিয়া লিখেছেন তার মা ছোটবেলাতেই তাকে রেখে অপর আরেকজনকে বিয়ে করে চলে গেছেন।
এরপর সৎ মায়ের ঘরে থেকে নানা রকমের চাপে বড় হয়েছেন তিনি। এরপর তার আগে একটি বিয়েও হয়েছিল। কিন্তু সে সংসার ভেঙে গেছে অনেক দিন আগে।
পরে পারিবারিকভাবে তার পছন্দ করা আরেকজনের সাথে সাদিয়ার বিয়ে ঠিকঠাক করা হয়েছে। কিন্তু সেটা নিয়েও নানা রকমের চাপে ছিলেন।
তাই সুইসাইড নোটে তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি আর এই চাপ সহ্য করতে পারছি না।’
শাওন শান নামে সাদিয়ার এক আত্মীয় জানান, গত রাত পৌনে ৩টার দিকে আমাদের বাসায় খবর আসে। আমরা গিয়ে দেখি ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সাদিয়া। এরপর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়, পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর জানান, ভাটারা এলাকার নিজ বাসা থেকে সাদিয়া নাজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সাদিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সাদিয়া নাজ বারিস বরষা নামে একটি ফ্যাশন হাউজের ফটোশুট করেছিলেন। ফটোশুটের ছবিগুলো এখনো প্রকাশিত হয়নি। এই হাউজের কর্ণধার বারিস হক শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বিদায় জানালো আরও একটি সম্ভাবনাময়ী তাজা প্রাণ। তরুণ মডেল আমার খুব প্রিয় সাদিয়া নাজ। গতকাল রাতে আত্মহত্যা করেছে। মরদেহ এখনো ছাড়া হয়নি। শেষ দেখা দেখতে পাব কিনা জানি না। সবাই দোয়া করবেন।’
স্মৃতিচারণ করে বারিস হক লিখেছেন, ‘আমার ফ্যাশন হাউজের প্রথম ফটোশ্যুট করেছিলাম এই মেয়েটাকে নিয়ে। এখনো ছবিগুলো প্রকাশ করিনি। সাদিয়া বড়দের খুব সম্মান করত, যখন যা কাজের জন্য বলেছি কখনো পারিশ্রমিকের কথা নিজে থেকে বলেনি। যথাসময়ে বেস্ট আউটপুট দিয়ে কাজ করেছে। সবসময় চাইতাম মেয়েটা এগিয়ে যাক। কিন্তু আজ সকালের এই সংবাদ আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে।’