ভুয়া বিল ভাউচারে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে.এম.নূরুল হুদাসহ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বারের ১০ আইনজীবী এ অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি দেয়া হয়েছে দুদক চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করেন। আইনজীবীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শিশির মনির জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে সংশ্লিষ্টরা অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা ব্যতীত ৭ কোটি ৪৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা খরচ,আতœসাত কিংবা সহ সরকারের আর্থিক ক্ষতি সাধন কিংবা অপচয় করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বরে দেশের ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ আনেন। ওই অভিযোগে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ করে তদন্তের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বরাবর করা আবেদনের বিষয়টি গত ১৯ ডিসেম্বর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হয়। বলা হয়, অভিযোগের বিষয়টি সরকারপ্রধানকে জানানো হবে। সেই সঙ্গে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনারদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে অথবা নৈতিক কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহবান জানান তারা। তবে এ আহবানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টরা সাড়া দেন নি। তবে বিষয়টি ৪২বিশিষ্ট নাগরিকের ‘ব্যক্তিগত মতামত’ বলে অনানুষ্ঠানিক মন্তব্য করেন কোনো কোনো কমিশনার। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৪২ বিশিষ্ট নাগরিকের ওই অভিযোগ ও আবেদনকে ‘বিএনপির অপচেষ্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেছিলেন,নানা অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে মূলত বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের এই চেষ্টা হালে পানি পাবে না।
৪২ বিশিষ্ট নাগরিকের আবেদনের পরপর এবার দুদকে অভিযোগ দায়ের করলেন দশ আইনজীবী। অ্যাডভোকেট শিশির মনির ছাড়াও অন্য আইনজীবীরা হলেন, মো.আসাদ উদ্দিন, মোহা.মুজাহিদুল ইসলাম, মো. জুবায়েদুর রহমান, মো. আব্দুস সবুর দেওয়ান, আর রেজা মো. আমির, আব্দুল্লাহ হিল মারূফ ফাহিম, জিএম মুজাহিদুর রহমান,মুস্তাফিজুর রহমান এবং অ্যাডভোকেট মো জহিরুল ইসলাম।
অভিযোগের সঙ্গে গত ৩ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘প্রশিক্ষণ ভাতা নিয়ে ঘুম হারাম ইসি’র শীর্ষক একটি প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত পদ ছাড়াই ‘বিশেষ বক্তা’,‘কোর্স পরিচালক’ ও ‘কোর্স উপদেষ্টা’ হিসেবে ভাতা নেয়া, নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি এবং খাত পরিবর্তন করে ভাতা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ২নির্বাচন কমিশনারগণ, নির্বাচন কমিশন সচিব, সদ্য সাবেক সচিব এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকে জড়িত ছিলেন মর্মে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। উল্লেখিত ব্যক্তিরা সরকারের ৭ কোটি ৪৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা খরচের মাধ্যমে সরকারি অর্থের ক্ষতিসাধন করেছেন। উল্লিখিত দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এ ধরণের কর্মকান্ডের দ্বারা দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৫১১/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি দমন আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
আবেদনে উপরোক্ত অভিযোগ আমলে নিয়ে উল্লিখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ১৭(ক), ১৭(খ), এবং ১৭(গ) ধারা অনুযায়ী অনুসন্ধান, মামলা দায়ের এবং তদন্ত পরিচালনার অনুরোধ জানানো হয়েছে।