অভিনেতা আবদুল কাদেরের মৃত্যুর গুজব নিয়ে বিরক্ত তাঁর পরিবার। দুদিন ধরে বিভিন্ন ওয়েব পোর্টাল ও ইউটিউব চ্যানেলে তাঁর মৃত্যুর গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সেসব দেখে অনেক মানুষ ফেসবুকে এই অভিনেতার মৃত্যু নিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন, যা তাঁর পরিবারের জন্য হয়রানিমূলক। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন কাদেরের পরিবারের সদস্যরা। এমনকি সারা রাত ঘুমাতেও পারেননি তাঁরা।
গতকাল বুধবার রাত থেকে একের পর এক ফোন আসতে থাকে কাদেরের পরিবারের সদস্যদের কাছে। দেশ-বিদেশ থেকে স্বজন ও চেনা মানুষদের কেউ কেউ তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হতে চাইছেন, কেউবা সমবেদনা জানাচ্ছেন। জীবিত একজন মানুষের মৃত্যুর খবর শুনে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। দাদার মৃত্যুর গুজব শুনে কাঁদতে থাকে অভিনেতার নাতি সাদমান এহসাস ও নাতনি সিমরীন লুবাবা। অভিনেতা আবদুল কাদেরের পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোকে জানান, গতকাল রাত থেকে তাঁরা পরিবারের কেউ ঘুমাতে পারেননি। সবাই ফোন করে আবদুল কাদেরের খবর জানতে চাইছেন। অনেকেই ফোনে কান্নাকাটি করে তাঁদের সান্ত্বনা দিয়েছেন।
জাহিদা বলেন, ‘জীবিত একটা মানুষকে এভাবে যারা মেরে ফেলছে, তারা একবার আমাদের পরিবারের কথা চিন্তা করুন। আমরা পুরো পরিবার এমনিতেই ভয়ের মধ্যে আছি, কখন কী হয়। সেখানে এ ধরনের খবরে পরিবারের সবার মনটাও ভেঙে যায়।’
অভিনেতা আবদুল কাদেরের জন্য তাঁর পরিবারের সবাই দোয়া চেয়েছেন। জীবিত একজন মানুষের মৃত্যুর গুজব না ছাড়ানোর অনুরোধও জানিয়েছেন তাঁরা। জাহিদা বলেন, ‘আমরাই গুজবের কথা শুনে কষ্ট পাচ্ছি, কাঁদছি। কিন্তু জীবিত মানুষটি যদি কোনোভাবে শুনতে পান এ খবর, তাঁর কেমন লাগবে? ভুয়া খবর ছড়িয়ে কেউ মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। এই অভিনেতার মৃত্যুর খবর শুনে অভিনেত্রী সুইটি, আজিজুল হাকিমসহ মিডিয়ার একাধিক মানুষ ফোন করেছিলেন।’
এক ভিডিওবার্তায় লুবাবাকে বলতে দেখা গেছে, ‘আপনারা কেন আমার দাদাকে নিয়ে ভুয়া নিউজ বানাচ্ছেন। তিনি তো আমাদের মাঝে এখনো বেঁচে আছেন। তাঁকে নিয়ে ভুয়া নিউজ বানালে আমাদের কষ্ট লাগে। তিনি তো আমার জানের দাদা। আমার কি কষ্ট লাগে না? ভুয়া নিউজ না বানিয়ে দোয়া করেন।’
আবদুল কাদেরের শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ না থাকায় চিকিৎসকেরা তাঁকে আজ সাধারণ বেডে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। পুনরায় পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার পর কাদেরের ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু করবেন তাঁরা। উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ ডিসেম্বর কাদেরকে চেন্নাইতে নেওয়া হয়। সেখানকার হাসপাতালে ১৫ ডিসেম্বর ক্যানসার ধরা পরে তাঁর। গত রোববার সন্ধ্যায় অভিনেতাকে ঢাকায় আনা হয়। পরদিন ২১ ডিসেম্বর তাঁর করোনা শনাক্ত হয়।
আবদুল কাদের নাটক, বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র—তিন মাধ্যমেই জনপ্রিয়। তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিক নাটকে বদি চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পান তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছিলেন কাদের।
আরও পড়ুন
ছয়টা মাস বেঁচে থাকার খুব ইচ্ছে কাদেরের
তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের একমাত্র সংগঠন টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ টেনাশিনাসের সহসভাপতি। তিনি নাটকের দল থিয়েটারের সদস্য। দলটির ৩০টি প্রযোজনায় এক হাজারের বেশি প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন তিনি। মঞ্চে তিনি অভিনয় করেছেন ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘তোমরাই’, ‘স্পর্ধা’, ‘দুই বোন’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’ নাটকগুলোয়। আবদুল কাদের বাটা বাংলাদেশের সাবেক কর্মকর্তা।