ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় ফুল বিক্রেতা পথশিশু জিনিয়াকে অপহরণকারী নূর নাজমা আক্তার ওরফে লুপা তালুকদারের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে অর্থের প্রলোভন ও বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলা তুলে না নিলে জিনিয়াকে আবারও অপহরণ করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত (১৭ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে টিএসসিতে এসে লুপা তালুকদারের মেয়ে নদী তালুকদার মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি ও টাকার প্রলোভন দেখান বলে অভিযোগ করেছেন জিনিয়ার মা সেনুরা বেগম।
উল্লেখ্য, গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ফুচকা খাইয়ে জিনিয়াকে অপহরণ করে নিয়ে যান লুপা তালুকদার নামের এক নারী। এক সপ্তাহ পরে নারায়ণগঞ্জ থেকে জিনিয়াকে উদ্ধার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর লুপা তালুকদারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এখনও কারাগারে আছেন তিনি।
জিনিয়া ও তার মা এখন থাকছেন টিএসসি এলাকায়। সেখানেই জিনিয়া ফুল বিক্রি করেন। ১৭ ডিসেম্বর রাত আটটার দিকে টিএসসির সড়কদ্বীপে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জিনিয়া ও তার মা সেনোরা বেগমের কাছে আসেন ১৭ বা ১৮ বছর বয়সের এক মেয়ে। তিনি লুপা তালুকদারের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে প্রথমে জিনিয়ার মাকে ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলেন। এতে জিনিয়ার মা রাজি না হলে তাকে এক লাখ টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখান। জিনিয়া ও তার মা সেনুরা বেগমের ভাষ্যমতে, ওই নারীর নাম নদী। তিনি লুপা তালুকদারের মেয়ে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় নদীর পুরো নাম নদী তালুকদার।
জানতে চাইলে জিনিয়ার মা সেনুরা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তিনি (লুপা তালুকদারের মেয়ে) প্রায়ই এসে আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বলেন। গত বৃহস্পতিবার দিন রাত আনুমানিক আটটা নয়টার দিকে ওই মেয়ে আসেন। আমাকে মামলা তুলে নিলে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এতে রাজি না হলে তিনি এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেন। একপর্যায়ে আমি রাজি না হলে তিনি আমাকে বলেন তার মাকে জেল থেকে বের করে আবার জিনিয়াকে তুলে নিয়ে যাবেন। এবার আর খুঁজেও পাওয়া যাবে না।
জিনিয়ার মা আরও বলেন, ১৬ বা ১৭দিন আগেও একবার এসেছিল। প্রায় তিনি কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা সঙ্গে নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে আসেন। আমি তাদের জানিয়ে দিয়েছি মামলা আমি তুলতে পারবো না। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না, এখানে ছাত্র যারা আছে তারা জানে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, জিনিয়াকে আমরা গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্যে বের করে এনেছি। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়াধীন বিষয়। যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে আইনিভাবে ভুক্তভোগীদের এগোতে বলা হচ্ছে।
তবে রমনা জোনের ডিবি পুলিশের উপ পরিদর্শক শাহজাহান মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখন এই মামলা জিনিয়ার মা চাইলেও তুলতে পারবে না৷ কারণ এই মামলার চার্জশিট ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে৷ এটি এখন আদালতের বিষয়। চার্জশিটে লুপা তালুকদার এবং তার মেয়ে নদী তালুকদারকে আসামি করা হয়েছে৷ লুপা তালুকদারের কারাগারে রয়েছেন এবং তার মেয়ে কারাগারের বাইরে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন-অর-রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জিনিয়াকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। জিনিয়াকে উদ্ধারের পর তার মা আমাদের কথা দিয়েছেন তিনি এই এলাকা ছেড়ে চলে যাবেন। তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এখনও আছেন সেটা আমাদের জানা নেই। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।