ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চরমোনাইয়ের প্রয়াত পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীমকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল আলম হানিফের বক্তব্যের সমালোচনা করেছে দলটির সহযোগী সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ। শনিবার (১২ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ কি বেশি জানেন’— এমন প্রশ্ন সংগঠনের নেতাদের।
চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ ফজলুল করীম ২০০৬ সালে মারা যান। সম্প্রতিকালে এক অনুষ্ঠানে মাহবুবুল আলম হানিফ চরমোনাই পীর প্রয়াত সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীমকে রাজাকারের সহযোগী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
এ বক্তব্যের প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদের নেতারা বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (সাবেক ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন)-এর প্রতিষ্ঠাতা আমীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম ৭১ সালে পাকিস্তানের সহযোগিতা করে চরমোনাই মাদরাসায় আশ্রয় নেয়া মা-বোনদের গণিমতের মাল বলে ফতোয়া দিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এই বক্তব্য কাল্পনিক, অসত্য, বাস্তবতা বিবর্জিত, নির্লজ্জ মিথ্যাচার, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ।’
তারা বলেন, ‘সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.)-এর ইন্তেকালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তোফায়েল আহমেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ চরমোনাইতে অনুষ্ঠিত জানাজায় শরিক হয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন।’
‘তবে কি আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা একজন রাজাকারের সহযোগীর ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করেছেন? তোফায়েল আহমদ ও আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ সাহেব রাজাকারের সহযোগীর জানাজায় অংশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন? তারা গোপালগঞ্জ ও বরিশাল অঞ্চলের মানুষ হয়ে এ তথ্য জানলেন না, ৫০ বছর পরে এসে জানলেন হানিফ? হানিফ সাহেবের উচিত সৈয়দ ফজলুল করীমের ইন্তেকালে শেখ হাসিনার দেওয়া বিবৃতি ও জানাজায় দেওয়া তোফায়েল আহমেদের বক্তব্য ভালো করে পড়ে নেওয়া’— বলেন ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের নেতারা।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘সে সময় ইসলাম বিরোধীদের ঢালাও মিথ্যা অভিযোগের জবাবে ঢাকায় এক আয়েজিত বিশাল জনসমুদ্রে সৈয়দ ফজলুল করীম স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি স্বাধীনতার বিপক্ষে নই, স্বাধীনতার পক্ষে ছিলাম। চরমোনাই মাদরাসা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল ছিল। এর পরেও কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে, আমি স্বাধীনতাবিরোধী ছিলাম তবে প্রয়োজনে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলতে রাজি আছি।’
বিবৃতিদাতারা হলেন—ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদের সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির, সহসভাপতি মুহাম্মাদ নূরুজ্জামান সরকার ও সেক্রেটারি আরিফ বিন মেহের উদ্দিন।
সম্প্রতি রাজধানীর পুরানা পল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক মতবিনিময়ে ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ‘আমার বাবা ও দাদা এদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় অপরাধমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দেশব্যাপী মাহফিলের মাধ্যমে লাখো অপরাধীকে সোনার মানুষে পরিণত করেছেন। এ জন্য চরমোনাই পীর সাহেবদেরকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দিয়ে অভিযোগ তোলা দুঃখজনক।’
পূর্বপশ্চিমবিডি