চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) মেং ওয়ানঝুকে নিয়ে সম্ভাব্য সমঝোতা চুক্তি নিয়ে তার আইনজীবী ও মার্কিন বিচার বিভাগের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। চুক্তি হলে কানাডা থেকে চীনে ফিরতে পারবেন মেং। খবর বিবিসি।
২০১৮ সালে কানাডায় গ্রেফতার হন তিনি, সেই থেকে উত্তর আমেরিকার এ দেশটিতেই অবস্থান করছেন ৪৮ বছর বয়সী প্রভাবশালী এ কর্মকর্তা। ভ্যাঙ্কুভারে বিমান পরিবর্তনের সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। অবশ্য বর্তমানে জামিনে মুক্ত মেং ভ্যাঙ্কুভারেই অবস্থান করছেন। সেখানে তার একটি বাড়িও রয়েছে। এ সপ্তাহেই তার গ্রেফতার হওয়ার দুই বছর পূর্ণ হলো।
সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে সবার আগে সংবাদ প্রকাশ করা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, মুক্তি পেতে ভুল স্বীকার করতে হবে মেংকে। ইরানের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। সেই নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে মেংয়ের বিরুদ্ধে। মেং ভুল তথ্য দিয়ে এইচএসবিসি ব্যাংককে ভুলপথে পরিচালিত করার মধ্য দিয়ে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
গ্রেফতারের পর থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বহিঃসমর্পণ এড়াতে আইনি লড়াই করে যাচ্ছেন। এখন তিনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন, যদিও ভ্যাঙ্কুভারের বাইরে যেতে পারছেন না।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে জো বাইডেন জয়লাভ করেন। এরপর মেংয়ের মুক্তির বিষয় নিয়ে তার আইনজীবী ও যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।
মেং মনে করেন না যে তিনি কোনো ভুল করেছেন। কাজেই যা সত্য নয় তাকে সত্য বলতে তিনি মোটেও ইচ্ছুক নন বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এসেছে।
অভিযোগে বলা হয়, ইরানভিত্তিক শীর্ষ কোম্পানি স্কাইকমের সঙ্গে হুয়াওয়ের সম্পর্ক আড়াল করে এইচএসবিসিসহ আরো কিছু ব্যাংককে ভুল তথ্য দিয়েছেন হুয়াওয়ে ও মেং। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, স্কাইকমকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকান নিষিদ্ধ পণ্য, প্রযুক্তি ও সেবা ইরানে পৌঁছে দিয়েছে হুয়াওয়ে।
হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেইয়ের মেয়ে মেং সব সময়ই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন এবং তার গ্রেফতারকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিযোগ করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন হুয়াওয়েকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে অন্য কারণে। তারা মনে করে, হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তি চালায় চীন। যদিও এ অভিযোগ সব সময়ই অস্বীকার করে এসেছে হুয়াওয়ে।
এমনকি গত বছর শেনঝেন-ভিত্তিক টেলিকম কোম্পানিটিকে কালো তালিকাভুক্তও করে যুক্তরাষ্ট্র এবং হুয়াওয়ের ফাইভজি নেটওয়ার্ক বয়কট করতে অন্য দেশগুলোকে চাপ সৃষ্টি করেছে তারা।
এখন হুয়াওয়ের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি কোনো প্রযুক্তি পণ্য বিক্রি করতে চাইলে আমেরিকান কোম্পানিকে আগে নিবন্ধন নিতে হবে।
মেংয়ের গ্রেফতার নিয়ে চীন ও কানাডার মধ্যেও কূটনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের পর কানাডা থেকে ক্যানোলা বীজ আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে চীন এবং গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দুজন কানাডিয়ানকে আটক করেছে দেশটি, যে ঘটনার সুরাহা এখনো হয়নি।
চীনের এ পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তার যুক্তি, চীন ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক সংকটে হাতিয়ার হিসেবে ওই দুই ব্যক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।