এই ছবিটা দেখলাম ফেসবুকে। দেখে দুঃখ হলো। মেডিক্যাল ট্যুরিজমে ভারতবর্ষ আয় করছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে প্রচুর মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে আসে। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার কিছু দেশ থেকেও আসে। ৫ লাখের মতো রোগী আগে প্রতিবছর। সবচেয়ে বেশি আসে বাংলাদেশ থেকে। সম্ভবত নব্বই ভাগ রোগীই বাংলাদেশের। ১০ ভাগ আফগানিস্তান, ইরাক, ওমান, মালদ্বীপ, উজবেকিস্তান, নাইজেরিয়া, ইয়েমেন, কেনিয়া, তাঞ্জানিয়া সব মিলিয়ে।
কলকাতার হাসপাতালগুলোয় দেখেছি আলাদা কাউন্টারই থাকে বাংলাদেশের রোগীর জন্য। অনেক সময় দেখা যায় হাসপাতালে স্থানীয় রোগীর চেয়ে বাংলাদেশের রোগীই বেশি। দিল্লির এপোলো হাসপাতালে তো আফগান রোগীর ভিড়ে হাঁটা যায় না। বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসে সাধারণ মধ্যবিত্ত রোগী, উচ্চ-মধ্যবিত্তরা চিকিৎসা করাতে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে যায়, আর উচ্চবিত্তরা যায় লণ্ডনে, নিউইয়র্কে।
পোস্টার হাতে দাঁড়ানো মহিলাটিকে দেখে মনে হচ্ছে, তাঁর শেকড় বাংলাদেশে। অর্থাৎ বাপঠাকুর্দা পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছেন। তিনি বাংলাদেশের মুসলমানদের ঘৃণা করেন, হয়তো সে দেশের মুসলমান দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছিল তার পরিবার। অথবা ব্যক্তিগত কোনও কারণ নয়, তিনি জাস্ট মুসলমানদের সহ্য করতে পারেন না, মুসলমানরা অসুখে বিসুখে ভুগে মরে যাক তিনি চান। বাকি যেসব দেশ থেকে মানুষ চিকিৎসা করাতে আসে ভারতবর্ষে, প্রায় সবই কিন্তু মুসলিম দেশ। মহিলার কি অন্য দেশের মুসলিম নিয়ে সমস্যা নেই, শুধু বাংলাদেশের মুসলিম নিয়ে সমস্যা?
এই ঘৃণার শেষ কবে? মুসলমান হিন্দুকে ঘৃণা করছে, হিন্দু মুসলমানকে ঘৃণা করছে। এত বিশাল একটা দেশকে কুপিয়ে দু খণ্ড করা হলো। তারপরও ঘৃণা যেমন ছিল, তেমনই আছে। হয় ধর্মকে বিলুপ্ত হতে হবে, নয় হিন্দু -মুসলমানকে মানুষ হতে হবে– মনে হচ্ছে তার আগে ঘৃণার কোনও নড়চড় হবে না।
-তসলিমা নাসরিনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে