জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) সপরিবারে সহযোগিতা করার দায় স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের এক দম্পতি। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ফেডারেল আদালতে বাংলাদেশি অভিবাসী এ দম্পতির অপরাধ স্বীকার করার পর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
শহীদুল গফফার (৪০) এবং তাঁর স্ত্রী নাবিলা খান (৩৫) গত বুধবার পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া আদালতে তাঁদের অপরাধ স্বীকার করেন। আদালতের নথি থেকে জানা গেছে, শহীদুল গফফার অভিবাসী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়েছিলেন। শহীদুলের স্ত্রী নাবিলা খান গ্রিনকার্ডধারী। দুজনই অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং আদালতে তাঁরা তাঁদের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন।
আদালতে শহীদুল গফফার এবং নাবিলা খানের কোনো ঠিকানা দেওয়া হয়নি। আদালতের তথ্য অনুযায়ী, নাবিলা খানের দুই ভাই, যাঁদের ‘জে কে’ এবং ‘আই কে’ নামে মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো সম্ভবত এ দুজনের নামের আদ্যাক্ষর থেকে নেওয়া। নাবিলা খানের এ দুই ভাই সিরিয়াতে গিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ দেন। এর মধ্যে ‘আই কে’ নামের ভাইটি সিরিয়ায় আইএস যোদ্ধাদের হয়ে যুদ্ধ করার সময় গত বছর মারা গেছেন।
শহীদুল গফফার এবং নাবিলা খান জঙ্গি দুই দুই ভাইকে হাজার হাজার ডলার দিয়ে সহায়তা করেছেন। জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং এ কাজের সঙ্গে নাবিলার মা বাংলাদেশ থেকে জড়িত ছিলেন বলে মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৫ সালে এ নিয়ে শহীদুল গফফার ও নাবিলা খান তৎপরতা শুরু করেন। তাঁদের সঙ্গে এ তৎপরতায় নাবিলা খানের মা জড়িত ছিলেন। নাবিলা খানের মা বাংলাদেশে বসবাসরত। তাঁকে মামলার নথিতে ‘ওয়াই-পি-কে’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে পরিবারের এমন সংশ্লিষ্টতার সময় নাবিলা খানের মা বাংলাদেশে এবং সৌদি আরবে বসবাস করছিলেন বলে মামলায় বলা আছে।
সিরিয়ায় নিহত নাবিলার ভাই ‘আই কে’ ২০১৩ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনি কলেজে লেখাপড়া করার সময় বোনের সঙ্গে বসবাস করতেন এবং ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই ছিলেন। পেনসিলভানিয়া আদালতের ইউএস অ্যাটর্নি উইলিয়াম ম্যাকসুয়াইন বলেছেন, শহীদুল গফফার ও নাবিলা খান মিলে ‘আই কে’ এবং ‘জে কে’ নামের ভাইদ্বয়কে জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন।
তাঁদের এ প্রয়াস আমেরিকার জনগণের জন্য এবং নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ফিলাডেলফিয়া ডিভিশনে কর্মরত বিশেষ এফবিআই এজেন্ট মাইকেল ড্রিস্কল বলেছেন, চরমপন্থীরা সরাসরি অস্ত্র হাতে নিচ্ছে না। যারা চরমপন্থীদের সহযোগিতা করছে, তাদের চিহ্নিত করার জন্য এফবিআই কখনো থামবে না।
নিজে থেকে আদালতে দায় স্বীকার করার কারণে শহীদুল গফফার ও নাবিলা খানের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, আড়াই লাখ ডলার জরিমানাসহ অন্যান্য শাস্তি হতে পারে।
শহীদুল গফফার ও নাবিলা খান দম্পতির বাংলাদেশের গ্রামের বাড়ি কোথায় সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ফিলাডেলফিয়া এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা তাঁদের সম্পর্কে মুখ খুলছেন না। চেনাজানা কেউ থাকলেও তাঁরা তা বলছেন না। এর আগে আকায়েদ উল্লাহ, নাসিফসহ বেশ কিছু বাংলাদেশি জঙ্গিবাদের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।