ইসলামি ফাউন্ডেশনের (ইফা) ৩৫৯ জন কর্মচারী ১১ মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন না। এদের মধ্যে রাজস্বখাতে ভূক্ত ১৩৫ জন ও দৈনিক ভিত্তিতে ২২৪ জন কর্মচারী রয়েছেন। নানাভাবে দেন দরবার করেও তাদের বিষয়টি ফয়সালা হয়নি। উপায়ান্তু না দেখে আন্দোলেনে নেমেছে ভূক্তভোগি কর্মচারীরা। তবে আন্দোলন চলকালেই ঘটে গেছে অপ্রীতিকর ঘটনা। বকেয়া বেতন ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি আদায়ের পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচীতে ইফার কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। কর্মচারী খাদিজা ইসলামকে লাথি মেরে বাচ্চা নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে। সেই নারী এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ইফার মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ বলেন, লাথি মারার ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে। আমরা তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখছি। এরপর বিষটি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ধাক্কাধাক্কি হতে পারে। তবে লাথি মেরেছে বলে মনে হয় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পূর্বে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অডিট রিপোর্টে এসব বিষয় উঠে আসলে, তাদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। এখন আমরা অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি, যেন তাদেরকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া যায়। অন্যদিকে রাজস্ব খাতের কর্মচারীরা মামলা করেছেন। সেই মামলায় কী রায় আসে তার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা গেছে, দৈনিক ভিত্তিতে কর্মরত কর্মচারী খাদিজা ইসলামের স্বামী রুবেল হাওলাদার। মাদারীপুরের কালকিনি থানার সাহেবরামপুর ইউনিয়নে। ১১ মাস বেতন ছাড়াই কাজ করছেন তিনি। গত রোববার রাজধানীর আগারগাঁও ইফা কার্যালয়ে আসেন ধর্ম সচিব নূরুল ইসলাম। ইফার ৩৫৯ ভুক্তভোগী কর্মচারীরা সচিবের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে যায়। এর মধ্যে ছিলেন খাদিজা। সচিবের কাছে অভিযোগ জানানোর অপরাধে ঘটনাস্থলেই ইফার সহকারি পরিচালক (প্রশাসন বিভাগ) মো. মশিউর রহমান ভূঁইয়া দুই মাসের অন্তস্বত্ত্বা খাদিজার তলপেটে লাথি মারে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ফ্লোরে শুয়ে পড়েন এবং ব্লিডি হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খাদিজাকে রাজাধানীর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখনও শঙ্কামুক্ত নয় তাকে জরুরি বিভাগ থেকে গাইনী বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। তার দুই মাসের বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে।
আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা জানান, খাদিজার তল পেটে ইফা কর্মকর্তার লাথি মারা ও বাচ্চা নষ্ট করে দেয়ার বিরুদ্ধে বিচারের দাবিতে কর্মচারীরা কর্মসূচি পালন করছে। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে খাদিজার দেবর ও ইফায় কার পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা সোহেল বলেন, ভাবি গত ১১ মাস ধরে বেতন পান না। সচিবের কাছে বেতনের দাবি করতে যাওয়ায় তলপেটে লাথি মারে কর্মকর্তা। পেটে দুই মাসের বাচ্চা ছিল নষ্ট হয়ে গেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মো. মশিউর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আপনারা ডিজি স্যারের (মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ) সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। তার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে। আমি নারীর শরীরে টাচই করিনি। কিভাবে কী হয়েছে আমি বলতে পারি না।
ইফা কর্মচারী কল্যাণ সমিতির দাবি, কোভিড-১৯ কঠিন সময়ে ৩৫৯ কর্মচারী পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে জীবন যাপন করছে। এ প্রসঙ্গে ইফার ভুক্তভোগি কর্মচারীদের পক্ষে কাজ করা প্রশাসন বিভাগের ড্রাইভার হায়দার আলী বলেন, বেতন না পেয়ে নিদারুণ কষ্টে আছি আমরা। ছেলে পেলে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় পড়ে গেছি। প্রায় ১৭ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। ৭ বছর কাজ করার পর আমি রাজস্ব খাতে নিয়োগ পেয়েছি। এখন নানা অজুহাতে বেতর বন্ধ রাখা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি। কিন্তু আমরা তো কম শিক্ষিত মানুষ। এতো কিছু কেমনে জানব।