মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডকের সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ই-পিটিশন চালু করে অস্ট্রেলিয়ায় রেকর্ড সংখ্যক ভোট পাওয়ার পর আলোচনায় এসেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড। ৫ লাখ ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর পাওয়ার ইতিহাস গড়ার পর এর সঙ্গে এক বাংলাদেশির যোগসূত্র থাকার দাবি তুলেছে মারডকের মালিকানাধীন পত্রিকা ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’।
পত্রিকাটির দাবি, ‘কেভিন রুড মিডিয়া রয়্যাল কমিশন পিটিশনে অর্থ দিয়ে বিদেশ থেকে অনেক স্বাক্ষর এনেছেন। এর মধ্যে এক বাংলাদেশি ১ হাজার নাম সরবরাহ করেছেন।’
দ্য অস্ট্রেলিয়ান তাদের শিরোনামে ‘রুডের বাংলাদেশি বট’ উল্লেখ করেছে। কিন্তু অনেক প্রযুক্তি বিশ্লেষক প্রতিবেদনটিকে ভুয়া এবং বিভ্রান্তিকর বলে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রযুক্তি জগতে ওয়েব রোবটকে সংক্ষেপে ‘বট’ বলা হয়। এটি মূলত এক ধরনের স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন, যা ইন্টারনেটর মাধ্যমে কাজ করে। বিশেষ কাজের জন্য বিশেষ ধরনের ‘বট’ প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়। কিছু ‘বট’ নিজে থেকেই কাজ করে আবার কিছু ‘বট’ কাজ করে যখন কেউ ইনপুট ব্যবহার করে। কিছু ম্যালিসিয়াস ‘বট’ আছে যা কম্পিউটার হ্যাক করতে পারে।
দ্য অস্ট্রেলিয়ানের দাবি, এই বটের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ই-পিটিশনে অনেক নাম গেছে।
মারডকের গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে অনেক দেশে সমালোচনা আছে। তার সাম্রাজ্য আসলে কল্পকাহিনীর চেয়েও অনেক বড়- অস্ট্রেলিয়াসহ তিনটি মহাদেশ জুড়ে টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও প্রকাশনার জগতে তার অবাধ বিচরণ। তার নিউজ করপোরেশনের মালিকানাধীন সংস্থা আছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি, ভারত, নিউজিল্যান্ডে। দুনিয়াজোড়া এই সংবাদমাধ্যমের সুবাদেই তিনি অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী।
রুডের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েক জন শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ মারডকের সংবাদমাধ্যমে বিরুদ্ধে দেশটির সংসদকে তদন্তের আহ্বান জানিয়ে ওই পিটিশন চালু করেন। তাদের দাবি, অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে নিউজ করপোরেশন নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৬ সাল থেকে এই ধরনের ই-পিটিশন পদ্ধতি চালু হয়েছে। স্বাক্ষর সংগ্রহের পর সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে এটি যাচাই-বাছাইয়ের পর পদক্ষেপ নেয়া হয়। কমিটি চাইলে আবার প্রত্যাখ্যানও করতে পারে।
রুডের পিটিশন ৫ লাখ স্বাক্ষর পাওয়ার পর নিউজ ক্রপের মালিকানাধীন দ্য অস্ট্রেলিয়ান বলছে, ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে কমপক্ষে ১ হাজার ফেক স্বাক্ষর পড়েছে।
কুইন্সল্যান্ড প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড্যানিয়েল অ্যাঙ্গাস ‘দ্য ফিড’কে বলেছেন, ‘‘এই ধরনের প্রতিবেদন বিরক্তিকর। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ‘রুডের বাংলাদেশি বট’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।’’
নিউজটি প্রকাশ হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। দেশটির নামকরা প্রযুক্তিবিদ টিমোথি গ্রাহাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘কেভিন রুট বাংলাদেশি বটের সঙ্গে যুক্ত, এমন কোনো প্রমাণ নেই।’
‘প্রতিবেদনের শিরোনাম বিভ্রান্তিকর। কারণ পড়েই যেকারো মনে হবে, রুড বাংলাদেশ থেকে বট ব্যবহার করেছেন।’