দুই সহোদর। নাম মিঠু ও পাপন। মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে তাদের জীবনে যে পরিবর্তন এসেছে, তা সব কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। একেবারে হোটেলবয় থেকে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। শুধু বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিকই হননি, সরকারি দল আওয়ামী লীগের পদপদবিও বাগিয়ে নিয়েছেন। ক্ষমতা ও টাকার জোরে পুরো সদরঘাট এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।
গড়ে তুলেছেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনীর বহর, যাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দুই সহোদর সদরঘাটের অঘোষিত রাজায় পরিণত হয়েছেন। ‘ক্যাসিনো সম্রাটের’ হাত ধরে তাদের এই অবিশ্বাস্য উত্থান। হাজী সেলিম যাদের রাজনীতিক। টর্চার সেলের মৃত্যুপুরী দেখার ভয়ে কেউ তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না। নানা কারণে প্রশাসনও নীরব। এই অবস্থায় বহু মানুষ তাদের ভিটেমাটি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে পথে বসেছে।
দুই ভাইয়ের মধ্যে পাপন ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এবং মিঠু কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সদস্য। তবে পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে বড় ভাই সোহাগ এখনও সদরঘাটের কুলি সরদার হিসেবে কাজ করছেন। ছোট ভাই মিহির একসময় বিএনপি রাজনীতি করলেও এখন লঞ্চে রুটি বেচে সংসার চালান। সদরঘাট এলাকায় মিঠু ও পাপনের সন্ত্রাসী রাজ্যের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্যের আদ্যোপান্ত বেরিয়ে আসে যুগান্তরের মাসব্যাপী অনুসন্ধানে।
আস্তানায় সরেজমিন : ২৪ অক্টোবর। বেলা ২টা। সদরঘাট টার্মিনাল সংলগ্ন ৪ সিমসন রোডে সাউথ সিটি কমপ্লেক্স শপিং সেন্টারে হাজির যুগান্তর অনুসন্ধান টিম। আন্ডারগ্রাউন্ডে জাহাজের নানা ধরনের যন্ত্রাংশ আর লেদ মেশিনের বেশকিছু দোকান। তিন সারিতে অবস্থিত দোকানগুলোর বেশির ভাগই বন্ধ। তবে খোলা আছে শেষ প্রান্তের রঙিন কাচঘেরা একটি সুপরিসর দোকানঘর। কাচের শার্টার ভেতর থেকে বন্ধ। ঘরে কী হচ্ছে, বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। আশপাশে উৎসুক যুবকদের ঘোরাফেরা দেখে বোঝা যায়, এটি আর পাঁচটা সাধারণ দোকানের মতো নয়। এখানে বিশেষ কিছু হচ্ছে, যা খুবই গোপন।
দেখা যায়, কিছুক্ষণ পর পর এদিক-সেদিক তাকিয়ে সেখানে ২/৩ জন করে লোকজন ভেতরে ঢুকছেন। তবে একবার যারা ঢুকছেন, দীর্ঘসময় পরও তারা আর বের হচ্ছেন না। মাঝেমধ্যে যারা বেরিয়ে আসছেন, তারা জুয়াড়িদের কেউ নন। এভাবে দীর্ঘক্ষণ পর বেলা ৩টার দিকে একসঙ্গে চারজন বের হলেন। তাদের একজন অপরজনকে বলছেন, আজকে ২০ হাজার টাকা হেরে গেলাম। দিনটা খারাপ। কার মুখ দেখে যে বার হইছিলাম! অপরজন তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, চিন্তা করিস না। কাল জিতবি। ঘণ্টাখানেক পর একসঙ্গে আরও তিনজন বের হয়ে দ্রুত ভবনের বাইরে চলে গেলেন।
কাচঘেরা দোকানটি সম্পর্কে আশপাশের কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করতেই সন্দেহের চোখে তাকালেন তারা। কিছুক্ষণ পর স্বাস্থ্যমান এক যুবক এগিয়ে এলেন। বললেন, আপনারা কোথা থেকে এসেছেন, এই দোকানের খোঁজ করছেন কেন? তাকে বলা হয়, জাহাজের ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ কিনতে এসেছি। উত্তর শুনে তার সন্দেহ দূর হল না। আপনাদের জাহাজের নাম কী, মেকানিক কই ইত্যাদি জানতে চাইলেন বেশ জোরগলায়। একপর্যায়ে বললেন, এখানে ইঞ্জিনের পার্টস পাবেন না। ঝামেলায় পড়বেন। এখান থেকে দ্রুত চলে যান। না হলে বিপদ হবে। কিছুটা হতাশ হলেও পিছু হটতে নারাজ অনুসন্ধান টিম।
কৌশল পরিবর্তন করে ক্যাসিনোর সামনে থেকে সরে আরেকটি দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় অনুসন্ধান টিম। এই দোকানের নম্বর বি-২০। নাম মেসার্স তামিম তিশা এন্টারপ্রাইজ। দোকানটি পাপন-মিঠুর ক্যাসিনোর সঙ্গে লাগোয়া। দোকানের মালিক ইউসুফ আলী ভূঁইয়া নিশ্চিত করেন পাশের দোকানটি হচ্ছে যুবলীগ নেতা পাপনের ক্যাসিনো। যুগান্তরকে তিনি বলেন, ‘হ্যাগো ক্যাসিনো জুয়া সম্পর্কে আমি কী বলব। সবাই তো সব জানে। হ্যারা সরকারি দলের লোক। অনেক ক্ষমতা। বড় বড় নেতাগো ছবি টাঙ্গানো আছে ভিতরে। বহুদিন ধরে চলতাছে (জুয়া)। কেউ তো হ্যাগোরে কিছুই কয় না।’
সূত্র বলছে, পাপনের মিনি ক্যাসিনো ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয় হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে। এখানে যুবলীগ দক্ষিণের নেতাদেরও আনাগোনা আছে নিয়মিত। কোতোয়ালি থানা পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে ক্যাসিনো চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময়ও এটি বন্ধ হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি ইমরান হোসেন বাতাসি যুগান্তরকে বলেন, সিমসন রোডে পাপনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে শুনেছি। তবে কীসের ব্যবসা, তা আমি জানি না। আমি তার ওখানে কখনও যাইনি। তবে ওয়ার্ড যুবলীগের কোনো অফিস সেখানে নেই।
ক্ষমতার দাপট : শুধু ক্যাসিনো নয়। পুরো সদরঘাট এলাকা জিম্মি পাপন ও মিঠুর হাতে। দুই শতাধিক যুবককে নিয়ে নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছে তারা। সরকারি দলের পরিচয়ে তাদের সব ক্ষমতার উৎস। বাস্তবতা হল, পাপন-মিঠুর বিরুদ্ধে কথা বললে নির্যাতনের হাত থেকে রেহায় নেই কারও। গোপন আস্তানায় ধরে নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। এরপর করা হয় এলাকাছাড়া। তাই ভয়ে কেউ মুখ খোলে না।
নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী যুগান্তরের কাছে পাপন-মিঠু বাহিনীর নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। তিনি জানান, তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে তাকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বলেন পাপন। কিন্তু তিনি এতে রাজি হননি। একদিন তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যাসিনোর ভেতরে আটকে রেখে বেধড়ক পেটায় পাপনের লোকজন। কোনোমতে ছাড়া পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘স্যার, আমার বাচ্চাগুলান ছোট ছোট। পাপনের ডরে এলাকায় থাকতে পারি না। ব্যবসা-বাণিজ্য যা আছিল সব বন্ধ। বাসা থেইক্ক্যা বাইর হইলে বউটা ডরে কান্দে, কয়-চলো আমরা অন্য কোথাও চইল্লা যাই। জীবন বাঁচলে কিছু না কিছু কইরা খাওন যাইব। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য ফালাইয়া এহন আমি কই যামু, কন স্যার।’ নির্যাতনের শিকার এই ব্যবসায়ীর আহাজারির ভিডিও রেকর্ড যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত আছে।
স্থানীয় বখাটে, অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে মাঝে মাঝে এলাকায় শোডাউন দিয়ে ক্ষমতার জানান দেন পাপন। পাপন-মিঠু বাহিনীর প্রধান সহযোগীর নাম নুর ইসলাম। লক্ষ্মীবাজারে র্যাবের সোর্স কানা মান্নান হত্যা মামলার আসামি নুর ইসলাম এলাকায় দাগী সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চুরি ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
পাপন-মিঠুর ভাতিজা সোয়েব আরও বেপরোয়া। সদরঘাটে চোরাই মোবাইল ফোন বিক্রি চক্রের সঙ্গে জড়িত সোয়েব স্থানীয় থানা পুলিশ এবং ডিবির সোর্স হিসেবে কাজ করেন। বিভিন্ন স্পট থেকে চাঁদা আদায়ের দায়িত্ব তার। এছাড়া পাপন-মিঠু বাহিনীর অন্যতম সহযোগী হিসেবে সক্রিয় রয়েছে এলাকার পরিচিত এমদাদুল মীর, আজিজ ওরফে বড় আজিজ, রতন, খাজা মো. শাওন, খোকন, শওকত, কালু শিকদার, সাগর, নূর ইসলাম, মনু, ফিরোজ, কালাম, তাহের, ডিশ সহিদ ওরফে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহিদ, হজরত আলী, মির্জা শান্ত প্রমুখ।
সূত্র বলছে, কামাল মিয়া নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী মিঠু-পাপনের শেল্টারদাতা হিসেবে কাজ করেন। কামাল মিয়া সরাসরি রাজনীতি করেন না। তবে যখন যে দল ক্ষমতায়, তখন সে দলে ভিড়ে যেতে সিদ্ধহস্ত কামাল মিয়া কোতোয়ালি এলাকার বেশ কয়েকটি বড় মার্কেটের মালিক।
রাতারাতি নেতা : পুরান ঢাকার বিক্রমপুর গার্ডেন সিটি, গুলশানারা সিটি, আম্বিয়া টাওয়ার, ওয়াইজঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাজনৈতিক পোস্টার এবং ব্যানারের ছড়াছড়ি। বেশির ভাগ সাইনবোর্ডে মিঠুর বড় বড় ছবি। পরনে পাঞ্জাবি ও মুজিবকোট। এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানাতে মিঠুর পক্ষ থেকে এসব পোস্টার ও ব্যানার লাগানো হয়েছে।
অথচ এলাকার অনেকে জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগেও সদরঘাটে অন্যের ফুটফরমাশ খাটতেন তারা। কিন্তু ক্যাসিনো সম্রাটখ্যাত বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে রাতারাতি তাদের ভাগ্য বদলে যায়। সরকারদলীয় রাজনীতিতে ঢোকার টিকিট পেয়ে যান দুই ভাই। একপর্যায়ে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী টাকার কুমির খ্যাত দুই ভাই এনু-রুপনের সহায়তায় সদরঘাটে মিনি ক্যাসিনো গড়ে তোলে দুই সহোদর। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তারা বিপুল অর্থবিত্তের মালিক। দামি গাড়িতে চড়েন। যাত্রাবাড়ী এলাকায় আবাসিক হোটেলের ব্যবসা, সদরঘাট ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেটে কোটি টাকা মূল্যের একাধিক দোকান আছে তাদের নামে। কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় ৪ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সূত্রাপুরে আঞ্জুমানের অফিস সংগলগ্ন এলাকায় কিনেছেন মূল্যবান ফ্ল্যাট। এছাড়া কেরানীগঞ্জ ও পুরান ঢাকা এলাকায় আছে একাধিক প্লট।
চার ভাইয়ের মধ্যে রাজনীতির সুবাদে দুই ভাইয়ের ভাগ্যবদল হলেও বাকি দুই ভাইয়ের এখনও নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। বড় ভাই সোহাগ সদরঘাটে কুলি সরদার। তার ছোট ভাই বিএনপি কর্মী মিহির সদরঘাট এলাকায় লঞ্চে রুটি বিক্রি করেন। পাপনের মেজো ভাই মিহির যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি আগে বিএনপি করতাম। কিন্তু এখন রাজনীতি করি না। লঞ্চে রুটি সাপ্লাইয়ের ব্যবসা কইরা চলতাছি। আমার বড়টা সোহাগ। সে সদরঘাটে কুলি আছিল এটা ঠিক না। তবে সে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে জাহাজ মালিকের হাজিরা খাটে।’
ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি : এলাকার ইন্টারনেট, ক্যাবল টিভির ব্যবসা, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, সদরঘাট টেম্পু স্ট্যান্ড, সদরঘাট থেকে যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা ও গুলিস্তান যাতায়াতকারী যানবাহন, সদরঘাট টার্মিনাল ভবনের বিপরীতে ফুটপাতে ফলের দোকান, ওয়াইজঘাট বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ঘড়ি ও পুরান কাপড়ের মার্কেট, বেড়িবাঁধের বিপরীতে ফুটপাতে জুতার মার্কেট, দোকান বেচাকেনা, কাপড়বাহী গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি, মালবাহী কাভার্ড ভ্যান ও অবৈধ বন্ড কাপড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়ে জড়িত পাপনের লোকজন।
৯ নভেম্বর সারা দিন সদরঘাট, ইসলামপুর পাটুয়াটুলী এবং ওয়াইজঘাট এলাকায় ঘুরে পাপন-মিঠু চাঁদাবাজির ভয়াবহ তথ্য মেলে। সরেজমিন দেখা যায়, সদরঘাট নৌটার্মিনাল ঘিরে গিজ গিজ করছে ফুটপাতের দোকান। হকারদের হাঁকডাকে সরগরম পুরো এলাকা। নর্থব্রুক হল রোড লালকুঠি মার্কেটে রসুন, পেঁয়াজ ও আদার বিশাল আড়ত। সামনের রাস্তায় ভ্যানে করে ফল বিক্রি করছেন হকাররা। এসব ভ্যান থেকে ৯০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। সদরঘাট বিআইডব্লিউটিএ’র ১ নম্বর টার্মিনাল ভবনের সামনে চিত্তরঞ্জন এভিনিউয়ে হকারদের ভিড়ে পা ফেলা দায়। মল্লিক টাওয়ার, গ্রেটওয়াল মার্কেট, শরিফ মার্কেট, সায়মুন প্লাজা, ইস্ট বেঙ্গল ইন্সটিটিউট সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে শত শত হকার। ফুটপাত বলতে এ এলাকায় দৃশ্যমান কিছুই নেই। সবই দখল হয়ে গেছে। মোটা অঙ্কের মাসোহারার বিনিময়ে হকারদের নিয়মিত পসরা নিয়ে বসার অনুমতি দিয়েছে চাঁদাবাজরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হকার বলেন, ‘চান্দা না পাইলে পাপনের পোলাপান পিডাইয়া তুইল্ল্যা দিব। তখন কান্নাকাটি কইর্যা লাভ হইব না। একজন হকারকে তুলতে পারলে ডাবল লাভ। চান্দাও বেশি পাইবো আবার আরেকজনরে ফুটে বসতে দিলে নগদে ২/৩ লাখ টাকাও পাইব।’
অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাহাজের তেল চুরি, তেল সরবরাহ, জাহাজের ক্যান্টিন ব্যবসা থেকে শুরু করে সদরঘাট এলাকায় এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে পাপন-মিঠুর চাঁদাবাজি নেই। বিক্রমপুর গার্ডেন সিটি, গুলশানারা সিটি মার্কেটে প্রতিদিন কয়েক শ কাভার্ড ভ্যান যাতায়াত করে। প্রতিটি কাভার্ড ভ্যান থেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে পাপনের লোকজন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বাসগুলো রাতে লঞ্চের যাত্রী নিতে সদরঘাট চলে আসে। এসব বাস থেকেও চাঁদা তোলে পাপন বাহিনী।
জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুর রহমান মিয়াজী যুগান্তরকে বলেন, ‘পাপন-মিঠু’র ক্যাসিনো সম্পর্কে একবার বাবুবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আমাকে বলেছিল। তাছাড়া তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা সম্পর্কেও আমার কাছে বিভিন্ন সময় লোকজন এসে কথা বলেছে। কিন্তু আপনারা জানেন, জনপ্রতিনিধি হলেও আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সাংবাদিক হিসেবে আপনারা যা সহজে বলতে পারেন, আমরা হয়তো সেটা বলতে পারি না। এসব অনিয়ম বন্ধে সাংবাদিক হিসেবে আপনাদের সাহসী উদ্যোগ প্রয়োজন।’
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, কোতোয়ালি এলাকায় ক্যাসিনো চলছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। তবে ক্যাসিনো থাকলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ সব সময়ই এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাবেদ হোসেন মিঠু যুগান্তরকে বলেন, চাঁদাবাজি এবং ক্যাসিনো ব্যবসার অভিযোগ সঠিক নয়। আমি স্থানীয় একাধিক বৃহৎ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি। রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষরা উদ্দেশ্যমূলক অভিযোগ করতে পারে। কিন্তু এসবের কোনো ভিত্তি নেই।
আপনারা কোতোয়ালি এবং সূত্রাপুর দুই থানায়ই খোঁজ নিতে পারেন আমাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না। অথবা কেউ চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়েছে কি না। রাজনীতি করলে মানুষ নানা ধরনের কথাবার্তা বলে। আমরা যদি খারাপ লোক হতাম, তাহলে কি দলে পদপদবি পেতাম।
কখন থেকে রাজনীতি শুরু করেছেন জানতে চাইলে মিঠু বলেন, এই ধরেন, অনেক আগে থেকে। আগে আমি শ্রমিক করতাম, মানে শ্রমিক লীগ। এখন আওয়ামী লীগ করি। তবে জাবেল হোসেন পাপনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।