যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের দিকে এখন সারা বিশ্বের নজর। কিন্তু এখনও অনেক ভোট গোনা বাকি রয়েছে।
এরই মধ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন এবং তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন। কিন্তু এখনও বৈধভাবে দেয়া কয়েক লাখ ভোট গণনাই করা হয়নি।
বিবিসি বাংলা জানায়, বিরোধী শিবিরের অনেকেই এমন পরিস্থিতির আশংকা করেছিলেন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন যখন দাবি করছেন যে তিনি জয়ের পথে রয়েছেন, তখন ট্রাম্প ভোট জালিয়াতি এবং ব্যালট চুরির ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলেন।
ভোট গননায় বিলম্ব দেখে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
নির্বাচনকে ঘিরে যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সেটিই এখন বাস্তবের দিকে এগুচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, যা বিরোধীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করবে এবং দেশ একটা দীর্ঘ ও তিক্ত আইনি লড়াইয়ের দিকে নিয়ে যাবে।
বাস্তবেই হুঁশিয়ারি দিলেন ট্রাম্প
প্রচারণার সময়ই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন, নির্বাচনী ফলের ব্যবধান যদি খুব কম হয়, তিনি তার বিজয় ছিনিয়ে নেবার লক্ষ্যে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ আনবেন।
বুধবার সকালে তিনি প্রমাণ করলেন তার সেই হুঁশিয়ারি শুধু মুখের কথা ছিল না, সেটা তিনি কাজে পরিণত করতে চান। কয়েক লাখ বৈধ ব্যালট গণনা বাকি থাকতেই তিনি নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করলেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এই নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রস্তুতই ছিলাম। এবং সত্যি কথা বলতে কি, আমরা আসলেই জিতেছি।
’ কোনো তথ্য উপস্থাপন না করেই তিনি বলেন ভোটে ‘জালিয়াতি’ হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের জাতির জন্য এটা বিশাল এক জালিয়াতি। আমরা এখন যথাযথভাবে আইন ব্যবহার করতে চাই। কাজেই আমরা বিষয়টা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যেতে চাই এবং আমরা সব ব্যালট গোনা বন্ধ করতে চাই। ’
তার ডেমোক্র্যাট প্রতিপক্ষ জো বাইডেনও বলেন, ‘প্রতিটি ভোট গোণা শেষ না হওয়া পর্যন্ত’ এই নির্বাচন শেষ হবে না। ’ তিনিও জোর দিয়ে বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা জয়ের পথে রয়েছে। ‘
ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প আর জো বাইডেনের মধ্যে কে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে আইনি লড়াইয়ের সম্ভাবনা বাড়ছে।
আইনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি
দুই প্রার্থীই এখন ভোট পুনঃগণনার দাবি করতে পারেন, বিশেষ করে যেখানে ফলাফলের ব্যবধান খুবই কম হবে।
এবছর যেহেতু অনেক বেশি ভোট পড়েছে ডাকযোগে, তাই এসব ডাকে পাঠানো ব্যালটের বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলারও বিধান যুক্তরাষ্ট্রের আইনে রয়েছে।
দুই দলেরই প্রচারণা টিম থেকে জানানো হয়েছে নির্বাচনের পর আইনি লড়াইয়ের জন্য তারা ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। এবং দুই দলই আইনজীবীদের বড় দল তৈরি রেখেছে ভোট গণনা নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জ লড়ার জন্য।
এইসব আইনি চ্যালেঞ্জ শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনি কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে।
২০০০ সালের নির্বাচনে যেমনটি ঘটেছিল, সেবার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ছিলেন জর্জ ডাব্লিউ বুশ এবং ডেমোক্র্যাট দলের আল গোর। সেই নির্বাচনে ফ্লোরিডায় ভোট পুনর্গণনার আবেদন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বন্ধ হয়ে যায় এবং বিজয়ী ঘোষণা করা হয় বুশকে।
জালিয়াতি যেখানে বিরল ঘটনা
যুক্তরাষ্ট্রের বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, অতীতের বিভিন্ন জাতীয় এবং রাজ্য ভিত্তিক নির্বাচন নিয়ে চালানো অসংখ্য জরিপে দেখা গেছে আগে টুকটাক বিচ্ছিন্ন প্রতারণার ঘটনা ঘটলেও, নির্বাচনী জালিয়াতির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে বিরল।
ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিস নামে একটি সংস্থা ২০১৭ সালে চালানো তাদের এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে, যাতে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে কারচুপির হার ০.০০০৯% এর চেয়েও কম।
দেশটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের প্রধান এলেন ওয়েইনট্রাউব এবারের নির্বাচনের আগে বলেন, ‘ডাকযোগে ভোটদানে জালিয়াতি বা প্রতারণার সুযোগ আছে বলে যে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। ’
দীর্ঘ জটিলতার আশঙ্কা
কিন্তু ফলাফল নির্ধারণী ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে যদি ফলাফলের ব্যবধান খুবই কম হয়, তাহলে আইনি চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনা খুবই বেশি বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক এডওয়ার্ড বি ফলি নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে বলেন, ‘পরাজিত প্রার্থী পরাজয় স্বীকার করে না নেয়া পর্যন্ত এই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কোন সমাধান আমরা দেখব না। পরাজিত প্রার্থী হার মেনে নিয়ে বিজয়ীকে যতক্ষণ না অভিনন্দন জানাচ্ছেন, ততক্ষণ ধরে নিতে হবে ফলাফল নিয়ে বিতর্কের নিষ্পত্তি হতে হবে আদালতের রায়ে। ’
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই লড়াই শেষ পর্যন্ত যদি আদালতে গড়ায়, তাহলে সেটা বেশ দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে এবং নানাধরনের জটিলতা তৈরি করতে পারে।
যেহেতু আমেরিকায় ভোট গ্রহণ ও নির্বাচন প্রশাসনের দায়িত্ব রাজ্যগুলোর কর্তৃপক্ষের অধীন তাই প্রাথমিকভাবে ব্যালট নিয়ে কোনো অভিযোগ মোকাবেলার দায়িত্ব থাকবে অঙ্গরাজ্য প্রশাসনের হাতে।
আদালতের রায়ই চূড়ান্ত
কোনো পক্ষ ব্যালটের ফলাফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলে তারা ভোট পুনঃগণনার আবেদন জানাতে পারবেন নির্বাচন প্রশাসনের কাছে, বা তাকে আইনি চ্যালেঞ্জও জানাতে পারবেন অঙ্গরাজ্যের আদালতে।
অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ফলাফল অনুমোদন করে বা ফলাফল সার্টিফাই করে স্বাক্ষর দেবার পরই সেই ফলাফল চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
ব্যালট নিয়ে সংশয় বা প্রশ্ন থাকলে অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষকে ফল অনুমোদন করার আগে তা জানাতে হবে। অঙ্গরাজ্য স্তরে ফল সার্টিফাই করার জন্য জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া আছে, সেটা অঙ্গরাজ্য ভেদে আলাদা।
অঙ্গরাজ্যের আদালত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য মামলা সুপ্রিম কোর্টে পাঠাতে পারেন আবার সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের কাছে অভিযোগকারীর মামলা নিয়ে যাবারও বিধান রয়েছে।
এবং সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনি আদালত তাই এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের বিধানই চূড়ান্ত