সরকার প্রথম দফায় ৩ কোটি ৪০ লাখ করোনা ভ্যাকসিন দেশে আনতে চায়। প্রাথমিক হিসাবে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দাম হতে পারে দুই ডলার করে। তবে এসব ভ্যাকসিন দিতে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য দুই থেকে আড়াই ডলার খরচ হতে পারে। এ অর্থ ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, টিকাদান কেন্দ্রে আনা-নেওয়া ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় হবে। সে হিসাবে ৩ কোটি ৪০ লাখ ভ্যাকসিন দিতে মোট ৮৭৭ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা হিসেবে) ব্যয়ের একটি প্রাথমিক হিসাব কষেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গতকাল মঙ্গলবার সরকার গঠিত কভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটি তাদের প্রথম সভায় টিকা দিতে এ ব্যয়ের পরিমাণ তুলে ধরে বলে জানান কমিটির এক সদস্য। সভায় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সভাপতিত্ব করেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন সদস্য দেশ রূপান্তরকে জানান, টাস্কফোর্স কমিটি ৬০ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীকে সবার আগে টিকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে এরপরই অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছেন করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মী ও মাঠে কাজ করা প্রথম সারির সাংবাদিকরা।
টাস্কফোর্স কমিটি করোনার টিকা দেশে আনার পর সংরক্ষণ ও দেওয়া পর্যন্ত মোট ব্যয়ের একটি খসড়া বাজেটও তুলে ধরেছে সভায়। তবে এ ব্যয়ের পরিমাণ চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান কমিটির এক সদস্য। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনার টিকা দিতে মোট কত ব্যয় হবে, তা নিয়ে কোনো কংক্রিট আলোচনা হয়নি। কাজে চলছে। তবে আমরা ভ্যাকসিনের দাম যদি দুই ডলার করে হয়, তবে অপারেশন ব্যয় দুই থেকে আড়াই ডলার ধরেছি মাথাপ্রতি পার ডোজে। এর মধ্যে ভ্যাকসিন রাখা, আনা-নেওয়াসহ সব খরচ ধরা হয়েছে।
এর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে টাকা চেয়ে আবেদন করবে টাস্কফোর্স কমিটি। এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভ্যাকসিন দিতে যে খরচ হবে, সে টাকার জন্য আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে আবেদন করব। টাকার পরিমাণটা চূড়ান্ত হয়নি। আরও কিছু হিসাব আছে। সেগুলো শেষ হলে আবেদন করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী অর্থের জন্য আবেদনের বিষয়টা অনুমোদন করেছেন। বলেছেন চূড়ান্ত ড্রাফট তৈরি করতে। চলতি মাসের মধ্যে ড্রাফট চূড়ান্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে পাঠাতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ড্রাফট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অনুমোদন দিলেই আমরা টাকার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করব। আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আবেদন জমা নেওয়া শুরু হবে। আবেদন করার জন্য তারা গাইড লাইন দিয়েছে। আবেদন করার অনুমতি পেলেই আমরা গ্যাভিতে (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন) অন্তর্ভুক্ত হতে পারব। আমরা চাইছি শুরুতেই আবেদন করতে।
এ ব্যাপারে কমিটির সদস্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. শামসুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, সভায় ভ্যাকসিনের ব্যাপারে আমরা বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছি। ভ্যাকসিন কেনার ব্যাপারে কোনো মত দিইনি। কারণ সরকার একটা কিনবে আর গ্যাভি দেবে। কতটুকু কিনবে, কার থেকে কিনবে, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এটা টাস্টফোর্সের কাজ নয়। টাস্কফোর্সের কাজ হলো ভ্যাকসিন প্রয়োগ প্ল্যান তৈরি করা। ভ্যাকসিন এলে রাখব কোথায়, কোল্ড চেইন ক্ষমতা, দেব কীভাবে, কোন কোন স্পট থেকে দেওয়া হবে, কাদের আগে দেওয়া যেতে পারে এসব বিষয় নিয়ে গত তিন দিন আমরা বেশকিছু কাজ করেছি। এখনো এসব কাজ চূড়ান্ত হয়নি। টাস্কফোর্স গঠনের পর কী করা হয়েছে, সেটা জানানোর জন্য গতকালের সভা হয়। আমরা প্রথম একটা ড্রাফট তৈরি করেছি। সেটা উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী। নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
সভায় টিকা রাখার ব্যাপারে নতুন করে কোল্ড চেইন তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে এক সদস্য বলেন, ভ্যাকসিন রাখার জন্য যেসব সরঞ্জাম লাগবে তার একটা তালিকাও আমরা দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য প্রথম দফায় ৩ কোটি ৪০ লাখ ভ্যাকসিন আনা। সেগুলো রাখার জন্য ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। সেটার প্রক্রিয়াও দিয়েছি। যারা ভ্যাকসিন দেবেন, সেখানে ভ্যাকসিন আনা-নেওয়ার খরচ, প্রচুর জনশক্তি লাগবে। মাঠে দিতে হবে ফেরত আনতে হবে। কোল্ড চেইন রক্ষা করতে হলে জনশক্তি লাগবে।
কোল্ড চেইনের ব্যাপারে এ সদস্য আরও বলেন, সভায় বলা হয়েছে কোল্ড চেইন বাড়াতে হবে। আমাদের ধারণক্ষমতা আছে। তবে সেটা আরও বাড়াতে হবে। যদি এমন হতো এ ভ্যাকসিন আমরা আগামী এক মাস দেব, তাহলে যে কোল্ড চেইন আছে, তা দিয়েই হয়ে যেত। কিন্তু এটা বছরজুড়ে দিতে হবে। এখন রাজধানীতে স্বাস্থ্য বিভাগের যে কোল্ড চেইন, সেখানে ৪০ ভাগ ফাঁকা থাকে। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোল্ড চেইন ধারণক্ষমতা কম। সেখানে বর্তমানে ১০-২০ ভাগ ফাঁকা থাকে। সেটা বাড়ানো হচ্ছে। যেসব জেলায় ধারণক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, সেখানে ৪০ ভাগ ফাঁকা আছে এখনো। তবে বেশিরভাগ জেলায় ধারণক্ষমতা কম।