২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান। সেই অভিযানে আসতে থাকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ সংসদ সদস্যদের নামও। এক পর্যায়ে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যে অনুসন্ধান এখনো চলমান। তবে অনুসন্ধানে নেমে ইতোমধ্যে ৮জন সংসদ সদস্যের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ পেয়েছে সংস্থাটি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে প্রথমে নাম আসে ৫ জন সংসদ সদস্যের।এমনকি দুদকের কাছেও আসতে থাকে এদের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য। তারা হলেন জাতীয় সংসদের হুইপ চট্টগ্রামের শামসুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, নারায়ণগঞ্জ-২ এর নজরুল ইসলাম বাবু, ভোলা- ৩ এর নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ।
এ ছাড়া সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামেরও বিপুল পরিমাণ সম্পদ পেয়েছে দুদক। এমনকি এরই মধ্যে এসব সংসদ সদস্য ও তাদের নিজ নামে এবং স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।
অপরদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম পাপুলের অবৈধ সম্পদ খোঁজা শুরু করে দুদক। এরপরই তার অবৈধ সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে। সম্প্রতি সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী রাজশাহী ১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক।
এসব সংসদ সদস্যদের নিজ নামেই নয়, তাদের স্ত্রী সন্তানদের নামেও বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউ’র কাছ থেকে বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।এদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য এখন যাচাই বাছাই করছে। যেকোন সময় এসব সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলাও করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এরইমধ্যে সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার স্ত্রী মাহবুবা হোসেন লতার বিভিন্ন সম্পদের তথ্য তলব করে রাজউক, সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরসহ দশ প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে দুদক। বাকি সাত সংসদ সদস্যের স্ত্রী-পুত্রের সম্পদের তথ্য চেয়েও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দ্রুতই চিঠি দেবে দুদক।
গত সপ্তাহে নতুন করে আরও একজন সংসদ সদস্যর নাম যুক্ত হয়েছে দুদকের নথিতে। তিনি হলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নেতা এবং সংসদ সদস্য হাজী সেলিম।
এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে বর্তমান সংসদের ১১জন সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। আর অবৈধ সম্পদ তথা জ্ঞাত আয় বহিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরও ১০জন সাবেক সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। কিন্তু কোন সংসদ সদস্যদের অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি। আর বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের রয়েছে, ওমর ফারুক চৌধুরী, মাহফুজুর রহমান মিতা, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সামশুল হক চৌধুরী, নজরুল ইসলাম বাবু, পঙ্কজ দেবনাথ, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। বিকল্পধারার মাহি বি চৌধুরী, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম। আর সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বি এম মোজাম্মেল হক, কামরুল আশরাফ খান পোটন, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, শামসুল হক ভূঁইয়া, বিএনপি নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আসাদুল হাবিব দুলু, মো. শাহজাহান, আব্দুল মোমিন তালুকদার, শহিদুজ্জামান বেল্টু এবং জাতীয় পার্টির এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুদকের যে ক্ষমতা আছে দুদক সেটা কি প্রয়োগ করতে পারছে। ক্ষমতাসীন বলেন আর ক্ষমতাহীন বলেন আসলে দুদক যে তদন্ত করছে সেটা এখন এক প্রকার মানুষ দেখানো। আর দুদক অনেক কিছুই করতে চাই না কারণে করলে তাদের সমস্যা হবে।’