সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়াকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি আদেশে এ কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে সাজানো দরপত্রে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপতালের জন্য বেশি দামে ভারী যন্ত্রপাতি কিনে প্রায় ছয় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে উত্তম কুমার বড়ুয়াসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়- ঢাকা-১ এ ১৬ মার্চ দুদকের সহকারী পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলার অপর আসামি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠান মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাবাধিকারী মুন্সী ফররুখ হোসাইন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে জানানো হয়, হাসপাতালের পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে হাসপাতালের জন্য ৮টি ওটি লাইট প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে (প্রতিটি ওটি লাইট কেনার জন্য ব্যয় করা হয়েছে ৭৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা) ক্রয় করেছেন। এর মাধ্যমে সরকারের মোট ৪ কোটি ৫৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছেন। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুটি কবলেশন মেশিন প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে ক্রয় করেছেন এবং এর মাধ্যমে সরকারের মোট ৭৮ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুটি এনেসথেশিয়া মেশিন উইথ ভেন্টিলেটর প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে ক্রয় করেছেন এবং এর মাধ্যমে সরকারের মোট ১ কোটি ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছেন। এই তিন ধরনের সরঞ্জাম ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারের মোট ৬ কোটি ৪০ লাখ ৩১ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছেন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে ডা. উত্তম বড়ুয়া ক্রয় পরিকল্পনা প্রস্তুতকালে পিআইপিআর-২০০৮ এর তফসিল-৫ যথাযথভাবে অনুসরণ করেননি; কী কী সরঞ্জাম কতটি ক্রয় করা হবে, সম্ভাব্য ইউনিট প্রাইজের প্রাক্কলিত মূল্য কত ইত্যাদি তথ্য ক্রয় পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়নি এবং সর্বোপরি ক্রয় পরিকল্পনা এইচওপিই কর্তৃক অনুমোদিত না হওয়ায় পিপিএ-২০০৬ এর ১১(৩) ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, ভারী যন্ত্রপাতি কেনার এখতিয়ার না থাকার পরও উত্তম কুমার ক্রয় নীতিমালা ভঙ্গ করে রাজস্ব, উন্নয়ন ও থোক বরাদ্দ বাজেটের অর্থ দিয়ে দুটি সাজানো উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করেন। উত্তম কুমার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকৃত সরবরাহকারীদের দরপত্রে অংশ গ্রহণের সুযোগ না দিয়ে তৃতীয় মধ্যস্বত্বভোগী ঠিকাদার মুন্সী ফররুখ হোসাইনের সাজানো দর গ্রহণ করেন। এরপর দুদকের অনুসন্ধানে মেডিকেল যন্ত্রপাতির প্রকৃত আমদানিকারক, সরবরাহকারী এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে এসব যন্ত্রপাতির প্রকৃত মূল্য যাচাই করে ওই অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানানো হয় এজাহারে।