তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় কারা অধিদপ্তরের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক বজলুর রশীদ জামিন পেয়েছেন।
ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন বৃহস্পতিবার জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন।
গত ২২ অক্টোবর মামলায় বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন একই বিচারক। ওই দিন বজলুর রশীদের পক্ষে তার আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। বিচারক জামিন শুনানির জন্য ২৯ অক্টোবর দিন রেখেছিলেন।
এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকায় তার মুক্তিতে বাধা নেই বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। তবে তার জামিনে ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করেছেন মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
আদেশে জামিনের পক্ষে কী যুক্তি দেখানো হয়েছে জানতে চাইলে এ আদালতের পেশকার মতিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তা আমি বলতে পারব না। আমি নথিপত্র দেখিনি। আসামিপক্ষে জামিন চাওয়া হয়েছে, বিচারক তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।”
এদিন বজলুর রশীদের পক্ষে জামিন শুনানি করেন ব্যারিস্টার শেখ ইফতেখার, এসকে আবু সাঈদসহ অন্য আইনজীবীরা। দুদকের পক্ষে মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জামিনের বিরোধিতা করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আগামী ২২ নভেম্বর পর্যন্ত জামিনের আদেশ দেন বিচারক। ওই দিন মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন রাখা হয়েছে।
জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন কি না জানতে চাইলে মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, “জামিনের বিষয়টি কমিশনকে জানিয়েছি। পরবর্তীতে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক নাসির উদ্দীন গত ২৬ অগাস্ট বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন। বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বজলুর রশীদ রূপায়ন হাউজিং এস্টেট থেকে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী রোডের ৫৫/১ (পুরনো) ৫৬/৫৭ (নতুন) নির্মাণাধীন স্বপ্ন নিলয় প্রকল্পের ২৯৮১ বর্গফুট আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। এরইমধ্যে তিনি অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য বাবদ তিন কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এ অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় বাবদ বজলুর রশীদ যে টাকা পরিশোধ করেছেন, এর সপক্ষে কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি। এমনকি তিনি অ্যাপার্টমেন্টের ক্রয় সংক্রান্ত কোনো তথ্য তার আয়কর নথিতে দেখাননি। পরিশোধিত ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা জ্ঞাত আয় উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। সব মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদক আইনের ২৭ (১) ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়।
গত বছরের ৬ অক্টোবর দৈনিক যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপুল পরিমাণ ঘুষের টাকা স্থানান্তর করতে ডিআইজি প্রিজনস (হেডকোয়ার্টার্স) বজলুর রশীদ অভিনব এক পন্থা বেছে নিয়েছেন। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে শতাধিক ধাপে তিনি পাঠিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। টাকা তুলেছেন তার স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহার।
এজন্য প্রকৃত ঠিকানা গোপন করে স্ত্রীর নামে সিম তোলা হয়েছে এবং সরাসরি নিজে টাকা না পাঠিয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির মাধ্যমে ওই টাকা পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
এরপর এই কারা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দুদকের তলবে হাজির হলে ২০ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই দিনই দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে। পরে তাকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
১৯৯৩ সালে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বজলুর রশীদ ঢাকায় কারা সদর দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ডিআইজি হিসেবে এর আগে সর্বশেষ ছিলেন রাজশাহীতে।
তার বিরুদ্ধে মামলায় বলা হয়, ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য রূপায়ন হাউজিং এস্টেটের সঙ্গে বজলুর চুক্তি করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৭ জুন পর্যন্ত ৫৪ হাজার টাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে চেকে পরিশোধ করেন। আর বাকি তিন কোটি ৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা নগদে পরিশোধ করেন।
বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে অভিযোগপত্রে।