প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ঢাকার আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাজি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শনিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে সবার মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার পর তিনি এলএলবি ডিগ্রি করেন। ১৯৬০ সালে কলকাতা উচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন। পরে যুক্তরাজ্য থেকে বার অ্যাট ল’ করেন। তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকার উচ্চ আদালতে যোগ দেন।
১৯৭৫ সালে আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯০ সালে অ্যাটর্নি জেনারেল করা হয়েছিল তাকে। সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আলোচিত ছিলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেক রাজনীতিবিদের মুক্তির জন্য লড়েছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টে তাদের জন্য আইনি লড়াই করে আলোচনায় ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক।
আদ-দ্বীন হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তবিবুর রহমান আকাশ বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতাল সংলগ্ন মসজিদে তার জানাজার পর পল্টনের বাড়িতে নেওয়া হবে মরদেহ। সেখান থেকে নেওয়া হবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। বাদ জোহর জানাজার পর মরদেহ নেওয়া হবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। সেখানে জানাজার পর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বিকালে ব্যারিস্টার রফিককে।
ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা জটিলতায় গত ১৫ অক্টোবর আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক। তার স্ট্রোকও হয়েছিল। গত মঙ্গলবার লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয় তাকে। হাসপাতালটির মহাপরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন জানান, আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ব্যারিস্টার রফিক-উল হক মৃত্যুবরণ করেন।
নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন সম্পর্কে জীবিত অবস্থায় ব্যারিস্টার রফিক উল হক জানিয়েছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনতে পেরেছি। তার কন্যা শেখ হাসিনাকেও ওয়ান-ইলেভেনের সময় জেল থেকে মুক্ত করে এনেছি। আবার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াকেও জেল থেকে মুক্ত করতে পেরেছি। এটাই বড় পাওয়া। এখন আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।’
২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই এ দু’জনের পক্ষেই আইনি লড়াই করেন ব্যারিস্টার রফিক। শুধু এ দু’জনেরই নয়, আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল জলিলসহ অনেকের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। তিনি ওই সময় গ্রেফতার হওয়া ব্যবসায়ী নেতাদের পক্ষেও মামলা পরিচালনা করেন।
মানবিক আইনজীবী ও সাদা মনের মানুষ ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের প্রত্যাশা ছিল, একটি সুন্দর বাংলাদেশের চেহারা দেখার। সেই ভাবনায় অধীর অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো আছে বলেও মূল্যায়ন করেছিলেন। তার আশা ছিল দেশ আরও ভালো হবে। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এই দেশে একদিন হানাহানি, সহিংসতা আর রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান হবে।