মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-কে আঁকা ব্যঙ্গচিত্র শিক্ষার্থীদের দেখানোর পর ফ্রান্সে এক শিক্ষকের শিরশ্ছেদ করেছে এক হামলাকারী। পুলিশ ওই হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করেছে। একে ইসলামপন্থি সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যায়িত করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। নিহত ওই শিক্ষক বা হামলাকারী কারোই নাম, পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। ম্যাক্রন বলেছেন, ওই শিক্ষক মত প্রকাশের স্বাধীনতা শিক্ষা দিচ্ছিলেন। হামলাকারীর উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা বিজয়ী হয়নি। এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে বলা হয়, শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে এই হামলা হয় প্যারিসের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি এলাকায় সংশ্লিষ্ট স্কুলের কাছে। এ হামলার বিষয়ে তদন্ত করছে সন্ত্রাস বিরোধী প্রসিকিউটররা। খবরে বলা হয়েছে, হামলার পরে ওই হামলাকারীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে পুলিশ। হাতে ছুরি থাকা ওই হামলাকারীকে এ সময় গুলি করে তারা। এতে সে মারা যায়।
ফরাসি কৌতুক ম্যাগাজিন শার্লি এবদোতে এর আগে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশিত হয়েছিল। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)কে নিয়ে এমন ব্যঙ্গচিত্র ইসলামে নিষিদ্ধ। ফলে ওই ম্যাগাজিনটির বিরুদ্ধে ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। ২০১৫ সালে ওই ম্যাগাজিনটির অফিসে হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে। তার বিচার চলছে এখনও। এই ম্যাগাজিনটির অফিসের বাইরে তিন সপ্তাহ আগে এক ব্যক্তি হামলা চালিয়ে আহত করেছে দু’জনকে।
বিবিসি লিখেছে, কনফ্লান্স-সেইন্ট-হনোরিন শহরে একটি সড়কের ওপর শুক্রবার বিশাল এক ছুরি হাতে এক ব্যক্তি হামলা চালায় ওই শিক্ষকের ওপর। কেটে নেয় তার মাথা। পুলিশের এক সূত্র বলেছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা হামলাকারীকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করতে শুনেছেন। শিক্ষকের মাথা কেটে নিয়ে হামলাকারী দৌড়াতে থাকে। জনসাধারণ সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেয়। তারা দ্রুত ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। পাশেই ইরাগনির কাছে ওই হামলাকারীর মুখোমুখি হয় পুলিশ। তারা তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু উল্টো সে পুলিশকে হুমকি দিতে থাকে। এ পর্যায়ে পুলিশ তাকে গুলি করে। অল্প পরেই মারা যায় সে। বর্তমানে ওই এলাকা তদন্তের জন্য সিল করে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এক কিশোর সহ চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিচার বিভাগীয় সূত্র নিশ্চিত করেছেন বার্তা সংস্থা এএফপি’কে। গ্রেপ্তার করা এই চার ব্যক্তি হামলাকারীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ওদিকে ঘটনাস্থল এড়িয়ে চলতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।
ফরাসি সম্প্রচার মাধ্যম বিএফএমটিভি রিপোর্ট করেছে যে, হামলাকারী ১৮ বছর বয়সী এক কিশোর। তার জন্ম মস্কোতে। অন্যদিকে ফরাসি পত্রিকা লা মন্ডে লিখেছে, হামলার শিকার ব্যক্তি ইতিহাস ও ভূগোলের শিক্ষক। তিনি মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে ক্লাসে মত প্রকাশের স্বাধীনতার শিক্ষা দিচ্ছিলেন। ওই ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে শার্লি এবদোর বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে এর আগে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। মুসলিম শিক্ষার্থীরা যদি এই শিক্ষাকে আপত্তিকর মনে করে, তাহলে তাদেরকে আগেই ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল ওই শিক্ষক।
শার্লি এবদো হামলার বিচার নিয়ে আলোচনার অংশ হিসেবে ওই শিক্ষক ক্লাসে এক বা একাধিক ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করেন। এ মাসের শুরুর দিকে এর বিরুদ্ধে বেশ কিছু মুসলিম অভিভাবক এর বিরুদ্ধে স্কুলে অভিযোগ দিয়েছিলেন। শুক্রবারের হামলা নিয়ে এরই মধ্যে শার্লি এবদো টুইট করেছে। তাতে বলা হয়েছে, অসহিষ্ণুতা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। দৃশ্যত আমাদের দেশ থেকে সন্ত্রাস বন্ধে কিছুই করা হয়নি। প্যারিসে বিবিসির সাংবাদিক হিউ শোফিল্ড বলেছেন, হত্যার উদ্দেশ্য যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তা হবে ফ্রান্সের জন্য অত্যন্ত হতাশার। তারা এ হামলাকে শুধু নৃশংস হামলা হিসেবে দেখবে না। একই সঙ্গে শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই হামলাকে দেখা হবে তার দায়িত্ব পালনের বিরুদ্ধে।