বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানের গৃহকর্মীকে নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে ঢাকার উত্তরায়।
বুধবার দুপুরের পর ওই গৃহকর্মীর চিৎকার শুনে স্থানীয়রা জড়ো হয়ে পীর হাবিবের বাড়ির সামনে; পরে ওই গৃহকর্মীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা ওই ভবনের মূল ফটকে ভেঙে ঢুকে পড়ে গাড়ি ভাংচুর করে।
সন্ধ্যার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে ডিএমপির বিমানবন্দর জোনের সহকারী কমিশনার খন্দকার রেজাউল হাসান জানান; আর এজন্য তাদের গুলিও ছুড়তে হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই গৃহপরিচারিকাকে তার স্বজনরা এসে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের ধারণা হয়েছিল, তাকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে।”
পীর হাবিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ওই গৃহকর্মী বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন।
উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর সড়কের ছয়তলা একটি ভবনের পঞ্চম তলায় নিজের ফ্ল্যাটে থাকেন সাংবাদিক পীর হাবিব।
স্থানীয়রা জানায়, ২০ বছর বয়সের ওই গৃহকর্মী দুপুরের পর জানালা দিয়ে ‘বাঁচাও-বাঁচাও’ চিৎকার করলে আশপাশের মানুষ ছুটে আসে। ওই গৃহকর্মী একটি ফুলের টবও মাটিতে ফেলেছিলেন।
পীর হাবিব বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে ওই গৃহপরিচারিকা আইসোলেশনে ছিল। ফলে বাসায় কেউ ছিল না।”
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং পীর হাবিবের স্ত্রীকে ডেকে আনে।
পীর হাবিবুর রহমানের ছবিটি তার ফেইসবুক একাউন্ট থেকে নেওয়া।পীর হাবিবুর রহমানের ছবিটি তার ফেইসবুক একাউন্ট থেকে নেওয়া।পীর হাবিব বলেন, “পুলিশের উপস্থিতিতে গৃহপরিচারিকাকে চিৎকারের কারণ এবং তাকে নির্যাতন করা হয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হয়। সে চলে যাবে বলে এ ধরনের আচরণ করেছে বলে জানায়। তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি বলেও সে জানায়।
“পরে সে যার মাধ্যমে এসেছিল, তাকে ডেকে এনে তার কাছে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এসময় পুলিশও ছিল।”
এদিকে ওই গৃহকর্মীর চলে যাওয়ার দৃশ্য কেউ দেখেনি বলে বিকালের পর তাকে নিয়ে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
এতে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। সন্ধ্যার পর ভবন ঘিরে ফেলে উত্তেজিত জনতা। তারা বলতে থাকে, ভেতরে ওই গৃহকর্মীর লাশ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তখন সেখানে কয়েকজন পুলিশ এসে স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়ে পীর হাবিবের ফ্ল্যাটে যায়। গিয়ে তা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখে নেমে আসে।
ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ শুনে জনতা আরও উত্তেজিত হয়ে প্রধান ফটক ভেঙে ভবনে ঢুকতে থাকে। ইটও ছুড়তে থাকে। এতে গ্যারেজে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর হয় এবং ভবনের প্রায় প্রতিটি ফ্লোরের জানালার কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তখন সেখানে থাকা অল্প সংখ্যক পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়। পরে আরও পুলিশ গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সহকারী কমিশনার রেজাউল হাসান সন্ধ্যার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্থানীয় জনগণকে বোঝাতে ওই গৃহপরিচারিকাকে নিয়ে আসা হচ্ছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।”
রাতে মেয়েটিকে বাসায় এনে লোকজনকে দেখানোর পর বনানীতে তার এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠানো হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হামলার অভিযোগে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল।