জেলা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী এক নেতা ও তার পরিবারের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেতে কাফনের কাপড় পড়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন এক দম্পতি। মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার এবং পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন ফতুল্লা ইউনিয়নের সস্তাপুর মধ্যপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী মো. নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী।
এ সময় বাঁচার আকুতি জানিয়ে ওই দম্পতি গণমাধ্যমের সামনে বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহরিয়া রেজা হিমেল প্রথমে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। যদি টাকা না দেই তাহলে বসতবাড়ি থেকে উৎখাত করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। আর চাঁদা দাবির ঘটনা যদি জানাজানি হয় বা আইনের আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করি তাহলে পরিবারসহ হত্যা করে লাশ গুম করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিবে বলে বলেছে।
ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন, ‘মো. শাহজালাল ও মো. শাহজাহান দুই জন আমার সস্তাপুর মধ্যপাড়াস্থ ভোগদখলে থাকা ভূমিতে জোরপূর্বক দখল করতে চায়। তারা বিভিন্ন সময় আমার জমি দখল করবে বলে আমাকে হুমকি প্রদান করে আসছে। পরবর্তীতে গত ৮ অক্টোবর তাদের ভাতিজা ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার রেজা হিমেল, তার চাচা মজিবুর রহমান, জুয়েল, মো. জাকির সহ ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এসে আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় আমাকে আমার বাড়ি থেকে উৎখাত করে দেয়ার হুমকি দেয়।’
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, এই মাসের ৮ তারিখে আমাকে হুমকি দিয়েছে। এই পর্যন্ত অনেক বার আমার বাড়িতে হামলা করেছে। ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার রেজা হিমেল হুমকি দিয়ে বলেছিল যে আজকে তোকে এমন টুকরা টুকরা করতাম ঢাকা মেডিকেলেও রাখতো না।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহরিয়ার রেজা হিমেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে গত ৪ অক্টোবর তিন সন্তান নিয়ে এক দম্পতি হিমেলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছিল। রিকশা গ্যারেজ মালিক শফি প্রধান, তার স্ত্রী মেহেরুন নেছা ও তিন ছেলে সন্তানকে নিয়ে ওই মানববন্ধন করার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এর পর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ আসতে শুরু করে।
এই প্রসঙ্গে শফি প্রধান জানান, ছাত্রলীগ নেতা হিমেলের চাচা মজিবুর ও তার বাহিনীর লোকজন তুচ্ছ ঘটনায় আমার তিনটি সন্তানের সামনে আমাকে এলোপাথাড়ি মারধর করে। এতে আমার ছেলেরা আমাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। ওই সময় পার্শ্ববর্তী সজলসহ কয়েকজন এগিয়ে আসলে সজলের একটি আঙ্গুলে কোপ দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং আরও একজনকে কুপিয়ে তারা চলে যায়। এ ঘটনায় আমার ছেলে বাদল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় হিমেলের চাচা মজিবুর ও তাঁদের বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
তিনি জানান, মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে হিমেল তার চাচা মজিবুর ও জুয়েল নানা ভাবে হুমকি দিতে থাকে। উপরন্তু আমাদের শায়েস্তা করতে এক নারী দিয়ে আমার ছেলে বাদলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছে। আমার ছেলেরা ফেরি করে কাপড় বিক্রি করে সংসার চালায়। আমি পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই।
এদিকে স্থানীয় লোকজন হিমেল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, ‘হিমেলের শেল্টারে তার চাচা মজিবুর ও জুয়েল এলাকায় সাধারণ মানুষদের অনেক অত্যাচার করেন। সস্তাপুরে অনেক পরিবারকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা দিয়েছে। সাইনবোর্ড লাগিয়ে বাড়ি ঘর দখল করেছে। ফতুল্লার সস্তাপুর, শিবু মার্কেট, কোতোয়ালেরবাগ সহ আশপাশ এলাকা মূলত হিমেলের নিয়ন্ত্রণে। সেখানে পান থেকে চুন খসলেও হিমেলকে অবহিত করতে হয়।
এ ব্যাপারে হিমেল জানান, তাকে ও তার পরিবারকে হেয় করতে এসব মিথ্যা অপপ্রচার। দেশে আইন আছে, পুলিশ-র্যাব আছে। আমরা এত অত্যাচার করলে কি তারা বসে থাকতো।