(বাম দিক থেকে প্রথম সারিতে) দবিরুল ইসলাম চৌধুরী, আবু আহমদ, লুৎফুর রহমান, (বাম দিক থেকে দ্বিতীয় সারিতে) মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, সৈয়দ আফসার উদ্দিন, ওলি খান, (বাম দিক থেকে তৃতীয় সারিতে) সাজ্জাদ মিয়া, নিলীমা রহমান।
যুক্তরাজ্যের রানির জন্মদিনে এবার ৭ বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক ও এক বাংলাদেশি নাগরিক খেতাব পেয়েছেন।
এদের মধ্যে চারজনকে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই), তিনজনকে মেম্বার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (এমবিই) এবং একজনকে মেডালিস্ট অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (বিইএম) খেতাব দেওয়া হয়েছে।
এর বাইরে ব্রিটিশ হাই কমিশনে কর্মরত একজন বাংলাদেশিকেও এমবিই খেতাব দেওয়া হয়।
এবারই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত এ বিশেষ সম্মাননা পেলেন।
যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় শনিবার খেতাবপ্রাপ্ত মোট এক হাজার ৪৯৫ জনের নাম ঘোষণা করা হয়।
সাধারণত প্রতিবছর জুন মাসে রানির জন্মদিনে সমাজের নানা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য দেশব্যাপী ও বিদেশে কর্মরত ব্রিটিশ নাগরিকদের বিভিন্ন খেতাব দেওয়া হলেও চলতি বছর কোভিড-১৯ মহামারীর ১০ অক্টোবর এ খেতাবের ঘোষণা দেওয়া হলো।
এবার কোভিড-১৯ এর সময় অবদান রাখায় ৪১৪ জনকে খেতাব দেওয়া হয়।
এছাড়া মোট খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে ৭৪০ জন অর্থাৎ ৪৯ শতাংশ নারী এবং ১৩ শতাংশ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। প্রথমবারের মতো বিপুল সংখ্যক এশিয় ও কৃষ্ণাঙ্গ রানির খেতাব পেয়েছেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক খেতাব প্রাপ্তদের মধ্যে সবার আগেই নাম আসে দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর। তিনি দেশে-বিদেশে করোনাভাইরাস সংকটকালে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য চার লাখ ২০ হাজার পাউন্ড তহবিল সংগ্রহ করেন। ওবিই খেতাবপ্রাপ্ত দবিরুল নিজ বাসস্থানের সামনের গার্ডেনে রোজায় একমাসব্যাপি হেঁটে এ তহবিল সংগ্রহ করেন।
ওবিই খেতাবপ্রাপ্তরা হলেন- শতবর্ষী ব্রিটিশ বাংলাদেশি দবিরুল ইসলাম চৌধুরী, ব্রিটিশ হোম অফিসে কর্মরত আবু আহমদ, রাজনীতিবিদ লুৎফুর রহমান ও প্রিন্সেস ট্রাস্ট চ্যারিটিতে কর্মরত মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন।
এমবিই খেতাবপ্রাপ্তরা হলেন- শিক্ষক সৈয়দ আফসার উদ্দিন, ব্যবসায়ী ও শেফ ওলি খান এবং ব্রিকলেনের মসজিদের চেয়ার সাজ্জাদ মিয়া।
এছাড়া বিইএম খেতাব পেয়েছেন নিলীমা রহমান।
ওবিই খেতাবপ্রাপ্ত লুৎফুর রহমান মানচেস্টার সিটি কাউন্সিলে লেবার দলীয় নিবার্চিত কাউন্সিলর। বর্তমানে তিনি ম্যানচেস্টার সিটি কাউন্সিলের কালচার অ্যান্ড লেজারের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য লুৎফুর এ সম্মাননায় ভূষিত হন। তিনি ২০০৮ সালে প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ২০১২, ২০১৬ এবং ২০১৮-তে ম্যানচেস্টারের লংসাইট ওয়ার্ড থেকে বার বার নির্বাচিত হয়েছেন।
লুৎফর রহমান ১৯৮০ সালে তার পরিবারের সাথে বাংলাদেশ থেকে ম্যানচেস্টারে আসেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি ম্যানচেস্টারের বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক এবং কমিউনিটির বিভিন্ন খাতে সফলতার সাথে কাজ করেন । বিশেষত যুবসমাজের উন্নয়নে, লাইব্রেরির উন্নতি, ক্রীড়া এবং বিনোদনে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
ব্রিটিশ বাংলাদেশি নিজাম উদ্দিন প্রিন্সেস ট্রাস্ট চ্যারিটিতে সিনিয়র হেড অব মোজাইক অ্যান্ড কমিউনিটি ইন্টেগ্রেশন। সোশ্যাল মোবিলিটি অর্থাৎ সামাজিক গতিশীলতা এবং কমিউনিটি সম্প্রীতিতে অবদানের জন্য তিনি ওবিই খেতাব পান।
ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্টুডেন্ট ইউনিয়নের নিবার্চিত সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন তরুণ-তরুণীদের জন্য কাজ করেন। কম বয়সী তরুণ-তরুণী তাদের সম্ভাবনা বিকশিত করার ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন তা দূরীকরণে তিনি নানাভাবে সহায়তা করে আসছেন। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পাবলিক পলিসিতে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী নিজাম উদ্দিন লন্ডন মেয়রের দক্ষতা সম্পর্কিত স্টেকহোল্ডার অ্যাডভাইসরি গ্রুপের সদস্য এবং মালবেরী অ্যাকাডেমি শর্ডিচের একজন গভর্নর।
ব্রিটিশ বাংলাদেশি আবু আহমদ যুক্তরাজ্যে হোম অফিসে কাউন্টার টেরোরিজম কমিউনিকেশন অ্যান্ড এনগেইজমেন্ট ইউনিটের প্রধান। পাবলিক সার্ভিসে অবদানের জন্য তাকে ওবিই খেতাব দেওয়া হয়।
সৈয়দ আফসার উদ্দিন লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের ওকল্যান্ড সেকেন্ডারি স্কুলের একজন শিক্ষক। ১৯৯৫ সাল থেকে ওই স্কুলে পূর্ণকালীন বাংলা শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। । পাশাপাশি তিনি বাংলা ভাষার পরীক্ষক হিসেবে প্রায় ১৯ বছর দায়িত্ব পালন করেন। বারায় শিক্ষা ও কমিউনিটি সেবার জন্য তাকে এমবিই খেতাব প্রদান করা হয়। সৈয়দ আফসার উদ্দিন বর্তমানে লন্ডনের চ্যানেল এস টিভির একজন সংবাদ পাঠক । এর আগে তিনি লন্ডনে বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার জন্যও কাজ করেছেন।
পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে অবস্থিত ব্রিকলেন মসজিদ ট্রাস্টের সভাপতি সাজ্জাদ মিয়া। কমিউনিটিতে সেবা দেওয়ার জন্য তাকে এমবিই খেতাব দেওয়া হয়। টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক কাউন্সিলর সাজ্জাদ মিয়া দীর্ঘদিন থেকে কমিউনিটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছেন। যেকোনও কমিউনিটি ইসু্যতে ক্যাম্পেইনে তিনি সামনে থাকেন। সাজ্জাদ মিয়া বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠনের সাথেও জড়িত রয়েছেন।
ব্যবসায়ী, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল, শেফ হিসেবে সুখ্যাতি রয়েছে ওলি খানের। তিনি হসপিটালিটি ও দেশে বিদেশে চ্যারিটি খাতে অবদান রাখার জন্য এমবিই খেতাব পান। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে তার বিশেষ অবদানের জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। লুটন শহরের বাসিন্দা শেফ ওলি খান বাংলাদেশি কমিউনিটিতে সুপরিচিত এবং তার রেস্তোরাঁ, টেকওয়ে ও প্রপার্টি ব্যবসা রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতে ব্রিটিশ কারি ফেস্টিভালে অংশ নিয়েছেন। শেফ ওলি খান গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে বিশ্বের বৃহত্তম অনিয়ন বাজি (পেঁয়াজু) রান্না করে নাম লিখিয়েছেন গত বছর।
বিইএম খেতাবপ্রাপ্ত নিলীমা রহমান উত্তর ইংল্যান্ডের সাউথ শিল্ডের বাসিন্দা। তিনি ব্যাংকে কাজ করেন। কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময়ে ফিনান্সিয়াল সেক্টরে এবং স্থানীয় কমিউনিটিকে সেবা দেওয়ার জন্য তাকে বিইএম খেতাব দেওয়া হয়।