হুমায়ুন ফরীদি যে চরিত্রেই অভিনয় করেছেন তা পরিণত হয়েছে স্মরণীয় ক্যানভাসে। যে রং মেখেছেন- সে রঙেই রঙিন হয়েছে সেই ছবি। হুমায়ুন ফরীদির উপস্থাপনায় সব চরিত্র না হলেও মুখে মুখে যে চরিত্রের নাম ফিরে ফিরে আসে তা নিয়ে লিখেছেন আরাফাত শান্ত।
তিনি নিজের অভিনয়কে ভাবতেন প্রার্থনা। টেলিভিশন, মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন দারুণ প্রতাপে। কাজের প্রতি ভালেবাসাই তাঁর সফলতার চাবিকাঠি। উনার কিছু খ্যাতনামা চরিত্র যা মানুষ এখনো মনে রেখেছে। সেরকম কয়েকটা চরিত্রের কথা মনে করিয়ে দেবো আজ ।
ভাঙ্গনের শব্দ শুনি/ সেরাজ তালুকদার
সেলিম আল দীন রচিত এ ধারাবাহিক নাটকে হুমায়ুন ফরীদির প্রথম দিককার অন্যতম সেরা কাজ হিসাবে বিবেচিত হয়। অত্যন্ত জনপ্রিয় হন তিনি। এর আগে সব নাটক গুলোই আফজাল হোসেনের লেখা, কিছুটা শহরের রোমান্টিক সব চরিত্র। এই নাটকের তিনি কিছুটা খল চরিত্রে বয়স্ক মোড়লের অভিনয় করছেন। বিখ্যাত ফরিদুর রেজা সাগর বলেছিলেন, তারা তখন আড্ডা মারতেন, ফরীদির এত জনপ্রিয়তা পেল যে, যেখানেই আড্ডা মারতেন সেখানেই ভীড় করতো লোকজন। গ্রামের এক লোভী মোড়ল চরিত্রে তিনি অভিনয় ট্রেডমার্ক হয়ে দাঁড়ালো। যে মোড়ল প্রতারণা করে জমি আর চর কিনে ভূমিদস্যুতে পরিণত হয়।
সংশপ্তক/ কান কাটা রমজান
এ করোনাভাইরাসের ঘরবন্দি পরিস্থিতিতে বিটিভিতে পুনরায় দেখানো হচ্ছিলো ধারাবাহিক, সংশপ্তক। কয়েকটা পর্ব দেখে মনে হয়েছিল অকারণে তো এসব জনপ্রিয় হয়নি মোটেই। অসাধারণ অভিনয় উনার। শহীদুল্লাহ কায়সারের বিখ্যাত উপন্যাস, আবদুল্লাহ আল মামুন দেন নাট্যরূপ। বিটিভির নিজস্ব প্রযোজনার অন্যতম সেরা নাটক ধরা হয় এটা, আর হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন মধ্যমনি।
দহন (চলচ্চিত্র১৯৮৫)/ মুনির
শেখ নিয়ামত আলীর পরিচালিত এ ছবিটি বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছিল তিন বিভাগে। ববিতা আর হুমায়ুন ফরীদির এত সুনিপুণ অভিনয় আর কখনও দেখা যায় নাই। সেই সময়ের যুগ যন্ত্রণা ফরীদির অভিনয়ে হয়েছে হিরন্ময়।
একদিন হঠাৎ ও কোথাও কেউ নেই/ মাস্টার ও উকিল
হুমায়ুন আহমেদ রচিত এ দুটি নাটকেই তার চরিত্র দুটো ছিল সবার অতি আপন। একদিন হঠাৎ নাটকে তিনি থাকেন প্রথাবিরোধী গৃহ শিক্ষক। যিনি তাঁর ছাত্রকে অপ্রচলিত সব বিদ্যা শেখান। ঘরে আশ্রয় নেন। মজার মজার সব কাজ করেন। আর ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকে তিনি থাকেন উকিল। যিনি অনেক চেষ্টা করেন বাকের ভাইকে ফাঁসী থেকে বাঁচাতে। তাঁর সেই অভিনয় আজো মানুষের অন্তরে।
ভণ্ড (চলচ্চিত্র ১৯৯৮) / প্রিন্স
শহীদুল ইসলাম খোকন বাংলাদেশের বানিজ্যিক চলচ্চিত্রের ইতিহাসের একটা যুগের দিকপাল ব্যক্তি। তিনি হুমায়ুন ফরীদিকে চলচ্চিত্রে আনেন। ‘দিন মজুর’ ‘সন্ত্রাস ‘ থেকে শুরু করে অসংখ্য ছবি তার পরিচালনায় অভিনয় করেছেন। বেশীর ভাগ ছবি অত্যন্ত ব্যবসা সফল। ‘ভণ্ড’ ছবিটা বিখ্যাত হয়ে থাকবে ফরীদি আর এটিএম শামসুজ্জামানের দারুণ কমেডির জন্য। খলচরিত্রের বাইরেও অসাধারণ এক হাসির উপস্থাপন করা হয়েছে এই দুই বিখ্যাত অভিনেতাকে।
পালাবি কোথায়( চলচ্চিত্র ১৯৯৭)/ মিঃ হাওলাদার
হুমায়ুন ফরীদি প্রযোজিত এটি একমাত্র ছবি। এ ছবিটা বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা জীবনঘনিষ্ঠ কমেডি ছবি। কিন্তু ছবিটা তেমন ব্যবসা করতে পারে নাই। উনি ছাড়াও চম্পা, শাবানা, সুবর্ণা মোস্তফার যা অভিনয় তা টেলিভিশনে প্রচারের পর দর্শকদের খুব আলোড়িত করেছিল। এই সিনেমা হয়তো সময়ের আগেই এসেছিল। এখন মুক্তি দিলে সাদরে সবাই গ্রহণ করতো। ছবিতে উনার অভিনয় একদম নিখুঁত।