ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসনের ওপর বেজায় চটেছেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন)।
নির্বাচনের পর তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেটরা ভবিষ্যতে তার নেতাকর্মীদের কোনো কাজে বাধা দিলে হাত-পা ভেঙে দেয়া হবে।’ এমনকি নির্বাচন কমিশন ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়ায় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকারের কাছে কৈফিয়ত তলব ও তাকে গালাগাল করেন।
এছাড়া, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করায় তার একজন কর্মীকে স্বল্পসময়ের জন্য আটক করায় চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে গালাগাল করেন নিক্সন চৌধুরী। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, ফরিদপুর শাখার জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ফরিদপুরের ডিসি, ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে অশালীন আচরণ এবং দুর্ব্যবহার করার বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয়। এতে বলা হয় শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিক্সন চৌধুরীর সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ১১ হাজারের বেশি ভোটে বিজয় লাভ করেন। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টায় নির্বাচন পরবর্তী জনসভায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিজয়ী প্রার্থী মো. কাওছার ও সংসদ সদস্য এবং তার অনুসারীরা ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েনের কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলেন। নিক্সন চৌধুরীর অনুসারীরা বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেন যা একজন সংসদ সদস্য বা সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে অকল্পনীয়।
সভায় উপস্থিত সবাই একমত হন যে, সরকারের সিদ্ধান্ত ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসনের প্রতি এহেন আচরণ অত্যন্ত অবমাননাকর। এ ধরনের হীন বক্তব্য স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে সরকারের সাফল্য সম্পর্কে ভুলবার্তা দেবে। তেমনি মাঠপ্রশাসনের সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করার পথেও চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। এ ধরনের ঘটনার প্রতিকার না হলে মাঠপ্রশাসনের সব ধরনের কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এরপর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় নিক্সন চৌধুরীর এমন আচরণের জন্য নিন্দা প্রস্তাব উপস্থাপন করলে তা পাস হয়। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত সব সদস্য এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ওই সভার রেজুলেশনের কপি বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে পাঠানো হয়েছে। অনুলিপি দেয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সব সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ সংশ্লিষ্টদের।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ রোববার রাতে যুগান্তরকে বলেন, একজন সংসদ সদস্যের কাছে এ ধরনের আচরণ আমরা কখনোই আশা করি না। ভাঙ্গার একজন নারী ইউএনওর সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলেছেন যা অবর্ণনীয়। উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। সেখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে এমন অশ্রাব্য ভাষায় ডিসিসহ জেলা প্রশাসনকে গালাগাল করতে হবে। একজন সংসদ সদস্য হয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে ‘ডিসির গালে গালে-জুতা মার তালে তালে, ডিসির চামড়া তুলে নেব আমরা’ আমার চাকরি জীবনের ২৫ বছরে এমন ঘটনা দেখিনি-শুনিনি। আমরা এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হয়েছে। তিনি নিশ্চয়ই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’