বাংলাদেশি-আমেরিকানদের মতো অপেক্ষাকৃত ছোট ভোটিং ব্লকগুলো এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফলাফলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। এমনটাই মনে করছেন জরিপ বিশ্লেষকরা। তবে এ ধরনের কমিউনিটিগুলোর অনেকেই বলছে যে, তারা এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আগ্রাসী প্রচার দেখতে পাচ্ছে না।
নিউইয়র্কের মতো রাজ্যগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি-আমেরিকান বাস করেন। মিশিগান ও পেনসিলভেনিয়ার মতো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জায়গাগুলোতেও তাদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এ দুই রাজ্যে প্রধান দুই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ছিল খুবই সামান্য।
মিশিগানের হ্যামট্রাম্ক কাউন্সিলের একজন নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট সদস্য মোহাম্মদ হাসান বলছেন, বাংলাদেশি আমেরিকান ভোটাররা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন দিতে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কমিউনিটিতে খুব কমই উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে।
নিজ থেকে জো বাইডেনের পক্ষে প্রচারণা চালানো মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ।’ তিনি বলছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ এখনও পর্যন্ত তার কাছে যাননি।
২০১৬ সালের নির্বাচনের পর ন্যাশনাল এশিয়ান আমেরিকান সার্ভে-র সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৩১ শতাংশেরও কম বাংলাদেশি-আমেরিকানের নির্বাচনের ব্যাপারে কোনও দলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।
এবারের নির্বাচনে মিশিগানকে একটি ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সেখানে আনুমানিক ২০ হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত বাংলাদেশি-আমেরিকান ভোটার রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই হ্যামট্রাম্ক অঞ্চলের বাসিন্দা। ২০১৬ সালে রাজ্যটিতে মাত্র ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন ট্রাম্প।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশি-আমেরিকানদের মতো অপেক্ষাকৃত ছোট কমিউনিটি বা ভোটিং ব্লকগুলো যদি পুরো শক্তি নিয়ে ভোট দেয় তাহলে তা বিজয়ী প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান বদলে দিতে পারে।
২০১৬ সালে বাংলাদেশি-আমেরিকানরা ব্যাপকভাবে হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন দিয়েছিল। তবে এবার ডেমোক্র্যাটরা এখানে আরও বেশি ভোটার উপস্থিতি প্রত্যাশা করছেন।
মোহাম্মদ হাসান জানান, তিনিও এই বছর বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করেছেন।
তিনি বলেন, অনেকে আছেন যারা করোনাকালীন বেকারত্বের সময়ে দেওয়া সুবিধার কারণে ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন। তাদের অনেকেই আগে মাসে যা আয় করতো তার চেয়ে তাদের করোনাকালীন বেকার ভাতার পরিমাণ বেশি ছিল। তারা আশা করছেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলে তারা আবারও এমন সুবিধা পেতে পারেন।
প্রথম কোনও বাংলাদেশি-আমেরিকান এবং মুসলিম-আমেরিকান মার্কিন রাষ্ট্রদূত এম ওসমান সিদ্দিক। তার প্রত্যাশা, ট্রাম্পের অধীনে চার বছরের অভিজ্ঞতা এই সম্প্রদায়কে বিপুল সংখ্যায় ভোটকেন্দ্রে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রাজনৈতিক প্রচারে জড়িত এম ওসমান সিদ্দিক বলেন, আমরা কমিউনিটিকে এ ব্যাপারে সচেতন করছি যে, তাদের ভোটের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি মনে করেন যে, তরুণ প্রজন্মের বাংলাদেশি-আমেরিকানরা অত্যন্ত অনুপ্রাণিত। এটি তাদের মা-বাবাদেরও ব্যক্তিগতভাবে বা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটদান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
মিশিগানে সক্রিয় অলাভজনক এশিয়ান আমেরিকান ফ্যামিলিজের রাইজিং ভয়েসেস-এর সহ-সভাপতি ফাতেমা হক। তিনি বাংলাদেশি-আমেরিকান ভোটারদের উৎসাহ বাড়াতে ফোন ব্যাংকিং ও অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ফলে এবার মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রচারণা চালানোর সুযোগ নেই। এছাড়া ভাষা ও প্রযুক্তি পুরনো প্রজন্মের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফাতেমা হক বলেন, ‘আমি বাংলা কথা বলি। তাই ফোন কলগুলো তাদের জন্য কার্যকর। তবে তারা জুম এবং আরও অনেক বড় ভোটার সচেতনতামূলক ইভেন্টগুলোতে যুক্ত হতে পারছেন না।’
তিনি প্রবীণ পুরুষ ও নারীদের মধ্যে উচ্চ ভোটের প্রত্যাশা করছেন। তবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জোরালো লিঙ্গ বিভাজনের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছেন তিনি।
ফাতেমা হক জানান, ২০ বছরের ছেলেদের তুলনায় একই বয়সী মেয়েদের ভোটদানের প্রবণতা বেশি হতে পারে।
বাংলাদেশ-আমেরিকার এক তরুণ চিকিৎসক, যিনি ইতোমধ্যে ভোটাভুটিতে ভোট দিয়েছিলেন, তিনি বলছেন, তার অনেক বন্ধু যারা প্রাথমিক নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডার্সকে সমর্থন করেছিলেন, তারা বাইডেনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে বলে মনে হয় না।
তিনি বলেন, এমনকি অনেকে এটাও বলছেন যে, ট্রাম্প যেভাবেই হোক জিতবেন। তাই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কী লাভ! নিজের পেশাগত বিধিনিষেধের কারণে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি পেশায় চিকিৎসক এ নারী।
কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মদ হাসান বিশ্বাস করেন যে, ডেমোক্র্যাটরা যদি বাংলাদেশি ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে সিরিয়াস হয়, তাহলে তাদের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে আগ্রাসী প্রচারণা চালাতে হবে।
তিনি বলেন, ‘লোকজন যদি কেনাকাটা ও খাবারের জন্য বের হয় তাহলে আমরা কেন রাস্তায় বেরুবো না (নির্বাচনি প্রচারণার জন্য) তার কোনও কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি না।
কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘আমি তিনবার নির্বাচিত হয়েছি। আমি জানি যে, বাঙালি কমিউনিটির জন্য ফোন কলে নয় বরং ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগই কার্যকর।’