দ্বিগুণের বেশি খরচে বাপেক্সেরই আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রের কূপ খননের ভার তুলে দেয়া হচ্ছে বিদেশি কোম্পানি গ্যাজপ্রমের হাতে। তিন কূপ খুঁড়তে গ্যাজপ্রমকে দিতে হবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বেশি। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবটি এখন সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ওঠার অপেক্ষায়। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলছেন, এটা বাপেক্স বোর্ডেরই সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বাপেক্সের ওপর।
দ্বীপ জেলা ভোলায় ১৯৯৫ সালে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স। যেখান থেকে ২০০৯ সালে শুরু হয় গ্যাস উত্তোলন।
তবে বাপেক্সের আবিষ্কার এ গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় দুটি অনুসন্ধান কূপ ও একটি উন্নয়ন কূপ খননের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রমের হাতে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বিশেষ আইনের আওতায় বিনা দরপত্রে গ্যাজপ্রমকে এ কাজ দেয়ার সব প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। শিগগির এ প্রস্তাব ওঠতে যাচ্ছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। প্রস্তাবে প্রতি কূপে খননের জন্য গুনতে হবে ২১ মিলিয়ন ডলারের বেশি, যা টাকার অংকে প্রায় ১৮০ কোটি। যেখানে প্রতি কূপের জন্য বাপেক্সের পেছনে ব্যয় হতো ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা। ফলে তিন কূপ খননে বিদেশি কোম্পানির পেছনে রাষ্ট্রকে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক প্রকৌশলী সুফি বলেন, ভোলায় কাজ করতে বাপেক্স অনেক সাহায্য করেছে। দরকার পরলে টেন্ডার করে অন্য কোনো কোম্পানিকেও দেয়া যেতে পারত।
ভূতত্ত্ববিদ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, এটার সঙ্গে আমরা কেবল মাত্র নাইকো চুক্তিটাকেই তুলনা করতে পারি।
তবে বেশি অর্থ ব্যয়ে বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে কূপ খননের সিদ্ধান্তের ভার বাপেক্সের ওপর চাপালেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এটা তো মন্ত্রণালয়ের কাজ না, এটা বাপেক্সের কমিটির কাজ। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যদিও পদাধিকার বলে জ্বালানি সচিব বাপেক্সের পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকায় প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে কতটা স্বাধীন, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
বর্তমানে ভোলা থেকে দৈনিক ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা থাকলেও জাতীয় সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে যুক্ত নয় দ্বীপ জেলাটি। এ অবস্থারও মধ্যে কেন চড়া মূল্যে কূপ খনন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।