বাবা-মা-বোন এবং নানীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বাংলাদেশি-কানাডিয় মিনহাজ জামান (২৪)। কানাডার অন্টারিয়ো আদালতে গত বৃহস্পতিবার মিনহাজের এই স্বীকারোক্তির তথ্য অবহিত করেন তার আইনজীবী এডেলে মনাকোর। এরপরই সেন্ট্রাল ইস্ট কারেকশনাল সেন্টার থেকে ভিডিওতে কানাডা তথা উত্তর আমেরিকায় নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন মিনহাজ।
টাঙ্গাইলের সন্তান মিনহাজ তার নানী ফিরোজা বেগম (৭০), বাবা মনিরুজ্জামান (৫৯) এবং ২১ বছর বয়সী একমাত্র বোন মেলিসা জামানকে হত্যার প্রথম ডিগ্রি এবং মা মমতাজ জামানকে (৫০) হত্যার জন্যে দ্বিতীয় ডিগ্রির অভিযোগ স্বীকার করেছেন।
গত বছরের ২৭ জুলাই বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এই চারজনকে হত্যা করেন অন্টারিয়োর মারখাম রোডের নিজ বাড়িতে।
মিনহাজ আদালতে জানান, ক্যাস্টেলমোর অ্যাভিনিউতে নিজ বাড়িতে গত বছরের ২৭ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে তার মাকে খুন করেন। এরপর পরিবারের অপর সদস্যদের হত্যার পরিকল্পনা করেন। বিকেল ৪টার দিকে তার নানীকে খুন করেন। এরপর ছোটবোন মেলিসা কর্মস্থল থেকে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন মিনহাজ। মেলিসা কাজ করতেন ফুড ব্যাসিক্স নামক একটি সংস্থায়। মেলিসা না ফেরা পর্যন্ত মিনহাজ ভিডিও গেমে ব্যস্ত রাখেন নিজকে। রাত ১১টায় বোন বাসায় ফেরার সাথে সাথে তাকেও হত্যা করেন।
বাবা ট্যাক্সি চালিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ চালাতেন। গভীর রাতে নিজের শিফট শেষ করে বাসায় ফেরার সাথে সাথে বাবাকেও খুন করেন। তার ছোটবোন পড়তেন স্থানীয় একটি ইউনিভার্সিটিতে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। এর কদিন আগেই মা-বাবার ২৫তম বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মিনহাজ সকলকে স্বাগত জানিয়েছেন চমৎকার ভাষায়।
৯ ঘণ্টার ব্যবধানে পরিবারের সকলকে হত্যার পর মিনহাজ পুলিশের অপেক্ষায় বাসায় ছিলেন। কারণ, ভিডিও চ্যাটিংয়ের সময় দেশ-বিদেশের অন্তত দুই বন্ধুকে পরিবারের সবাইকে হত্যার ছবি প্রদর্শন করেন। তাদের একজন মিনেসোটা থেকে কানাডার পুলিশকে তথ্যটি অবহিত করলে সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয় মিনহাজদের বাসা। এজন্যে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হয়েছে। মিনহাজের বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণার আগে ২৬ অক্টোবর নতুন তারিখ ধার্য করা হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, মিনহাজ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ভর্তি হন। কিন্তু পরের বছর তিনি সকল বিষয়েই ফেল করেন। এক সময়ের মেধাবী ছাত্র মিনহাজ ভিডিও গেমসহ নানা ইভেন্টে আসক্ত হওয়ায় ক্লাস ফলো করতে সক্ষম হননি। এ অবস্থায় মিনহাজ হতাশায় ভোগেন এবং মা-বাবার কাছে নিজের এমন অবস্থার তথ্য প্রকাশের পরিবর্তে ইউনিভার্সিটির ক্লাসের কথা বলে প্রতিদিনই বাসা থেকে বের হয়ে নিকটস্থ মলে অথবা ব্যায়ামাগারে সময় কাটিয়েছেন।
এভাবেই অতিবাহিত করেন ৪ বছর। মা-বাবা-বোন জেনেছেন গত বছরের ২৮ জুলাই তার গ্র্যাজুয়েশন হবে। এমন একটি শুভক্ষণের প্রতীক্ষায় ছিলেন সকলে। এমন লাগাতার মিথ্যাচার ঢাকতেই মিনহাজ সকলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে আদালতকে অবহিত করেছেন।
মা-বাবা-বোন-নানীকে হত্যার পর মিনহাজ মিনেসোটার সেই বন্ধু ডিভন্টে নিকলসনকে ডিসকোর্ডে রক্তাক্ত লাশের ছবি প্রেরণ করেন। সে সময় মিনহাজ লিখেন, ‘আমি আমার পুরো পরিবারকে জবাই করেছি। এখন আমি যদি বাঁচতে পারি তাহলে বাকিটা জীবন জেলেই কাটাতে হবে।’
বন্ধুটি জানতে চাইলে মিনহাজ তাকে লেখেন যে তিনি বাসায়ই আছেন। সবশেষে বাবাকে হত্যা করে পুরো বাড়ি মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছেন বলেও উল্লেখ করেন মিনহাজ।