নির্বাচন কমিশনে চলছে গাড়িবিলাস। একজন নির্বাচন কমিশনার দুই গাড়ি পেলেও বর্তমানে তিন নির্বাচন কমিশনার ব্যবহার করছেন ৯টি গাড়ি। এর মধ্যে বিলাসবহুল জিপ ছয়টি ও তিনটি প্রাইভেটকার ব্যবহার করছেন তারা। ৯টি গাড়ির জন্য মাসে ২ হাজার ১৯০ লিটারের বেশি তেল খরচ হচ্ছে। যার মূল্য প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বেশি। এ ছাড়া একজন নির্বাচন কমিশনের নামে ইস্যু করা গাড়ি ব্যবহার করছেন সিইসির একান্ত সচিব। একইভাবে ইসির প্রকল্পের কর্মকর্তারাও দুই-তিন গাড়ি ব্যবহার করছেন। অভিযোগ রয়েছে- ইসির দাফতরিক কাজ ছাড়াও ব্যক্তিগত এমনকি পারিবারিক কাজেও একাধিক গাড়ি ও জ্বালানির ব্যবহার হচ্ছে। সেই সঙ্গে একজন নির্বাচন কমিশনারের সন্তানরাও ঢাকার বাইরে গেলে ইসির গাড়িই ব্যবহার করেন। এদিকে নির্বাচন কমিশনারদের নামে তিন গাড়ি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সম্প্রতি ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একটি গাড়ি তো জমা দেওয়ার কথা। তবে খোঁজ নেবেন বলে জানান তিনি। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা দুই গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা একটি জিপ ও একটি প্রাইভেটকার ব্যবহার করতেন। তবে জুলাইয়ে সব নির্বাচন কমিশনারদের নতুন গাড়ি দেওয়া হলেও তিন নির্বাচন কমিশনার এখন তাদের আগের ব্যবহারিত গাড়ি জমা দেননি। তারা বর্তমানে আগের জিপসহ তিনটি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে একটি জিপ প্রকল্পের, একটি জিপ ও একটি কার ইসির নিজস্ব। জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ গাড়ি দেওয়া হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে। পরে তিনি তার ব্যবহারিত একটি জিপ ইসিতে জমা দিয়েছেন। একইভাবে জুলাইয়ে নতুন গাড়ি দেওয়ার পরে একজন নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে একটি জিপ মৌখিকভাবে নিয়েছে ইসি সচিবালয়। তবে সেই গাড়ি এখন ব্যবহার করছেন সিইসির একান্ত সচিব। ইসি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বর্তমানে ব্যবহার করছেন তিনটি গাড়ি। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেট্রো-গ-৩৪-৮০২০ (কার), ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-০৮১৮ (জিপ) এবং ঢাকা-মেট্রো-ঘ-১৮-৭৩৪৩ (জিপ) নম্বরের গাড়ি। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম নামেও রয়েছে তিনটি গাড়ি, ঢাকা মেট্রো-গ-৩৪-৮০২১ (কার), ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-০৭৪১ (জিপ) এবং ঢাকা-মেট্রো-ঘ-১৮-৭৩৪৪ (জিপ)। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর নামেও চলছে তিনটি গাড়ি। এগুলো হলো ঢাকা মেট্রো-গ-৩৪-৮১০০ (কার), ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৮-০৮১৭ (জিপ) এবং ঢাকা-মেট্রো-ঘ-১৮-৭৩৪৬ (জিপ) নম্বরের গাড়ি। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনটি গাড়ির মধ্যে একটি জিপের (প্রকল্পের) তেল আনলিমিটেড (৩০০ লিটারের ওপরে) ও প্রাইভেটকারের জন্য অকটেন ১৮০ লিটার ও অপর জিপরে জন্য ২৫০ লিটার তেল পান একজন নির্বাচন কমিশনার। তাদের হিসাবে ২৫০ লিটার ডিজেলের দাম (৬৫ টাকা) ১৬ হাজার ২৫০ টাকা, ১৮০ লিটার অকটেনের দাম ১৬ হাজার ২০ টাকা ও ৩০০ লিটার ডিজেলের দাম ১৯ হাজার ৫০০ টাকা, তবে নির্বাচন কমিশনাররা ৩০০ লিটারের বেশি ব্যবহার করলেও অতিরিক্ত তেল খরচও পাবেন। সব মিলে তিন নির্বাচন কমিশনারের ৯টি গাড়ির জন্য এক মাসে তেল খরচ হচ্ছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩১০ টাকার বেশি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ব্যবহার করেন দুটি গাড়ি। এর মধ্যে একটি পরিবহন পুলের। আর একটি নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ব্যবহার করেন দুটি গাড়ি। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-মেট্রো-গ-৩৪-৮০১৯ (কার) ও ঢাকা-মেট্রো-ঘ-১৮-৭৩৪৫ (জিপ)। তিনি কারের জন্য পান ১৮০ লিটার অকটেন আর জিপের জন্য পান ২৫০ লিটার ডিজেল। তবে তিনি নতুন গাড়ি পাওয়ার আগে ঢাকা-মেট্রো-ঘ-১৫-০৮১৬ নম্বরের গাড়ি ব্যবহার করতেন। ওই গাড়ির তেল ছিল আনলিমিটেড। গত ১৩ জুলাই তাকে নতুন গাড়ি দিয়ে ঢাকা-মেট্রো-ঘ-১৫-০৮১৬ নম্বরের গাড়িটি মৌখিকভাবে নিয়ে নেয় ইসি সচিবালয়। এরপরে এই গাড়ি দেওয়া হয় সিইসির একান্ত সচিব আবুল কাশেম মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামকে। তবে এখনো এই গাড়ি তেল খরচ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের নামেই দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।