জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সংস্থাটি থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে পাঠানো হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী স্বাক্ষরিত চিঠিতে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার স্ত্রী মাহমুদা হোসেন লতার নাম উল্লেখ করে তাদের যাবতীয় ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি দাবি করেন, একটি পক্ষ রাজনৈতিকভাবে তাকে হয়রানি করছে। তিনি নিজেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার জিকে শামীমসহ বিভিন্ন প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকা-ের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা পাচার এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বছর ১৮ই সেপ্টেম্বর থেকে দেশব্যাপি শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানের পর থেকেই এমপি রতনের নাম উঠে আসে। দুদক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিক অভিযোগপত্র জমা পড়ে তার বিরুদ্ধে। গত ১৪ই নভেম্বর দৈনিক মানবজমিনে ‘হাওরের শাহানশাহ’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
এরপরই এমপি রতনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক।
অভিযোগ রয়েছে, এমপি রতন ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঠিকাদারীর, সরকারি অর্থ আত্মসাত, নৌপথে চাঁদাবাজিসহ নানা অবৈধ কর্মকা-ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। রাজধানী ঢাকা, সুনামগঞ্জ, ধর্মপাশা, নেত্রকোনা ও মোহনগঞ্জে ১৩টি বাড়ির মালিক। এর মধ্যে ধর্মপাশায় নিজ গ্রামে ১০ কোটি টাকায় ‘হাওর বাংলা’ নামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়িটির অধিকাংশ জমি সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের এক ব্যক্তির কাছ থেকে দখল করা। সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুরে জেলা পুলিশ লাইনসের বিপরীতে সাত কোটি টাকায় বাড়ি কিনেন রতন। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘পায়েল পিউ’। বাড়িটি এক লন্ডন প্রবাসীর কাছ থেকে কিনে নেন তিনি। ধর্মপাশা উপজেলা সদরে তার আরও সাতটি বাড়ি রয়েছে। মোহনগঞ্জ উপজেলা সদরেও রয়েছে দুটি বাড়ি। নেত্রকোনা জেলা শহরেও একটি বাড়ি রয়েছে। নেত্রকোনা শহরে তার মা-বাবার নামে মেডিকেল কলেজ করার জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি ক্রয় করেছেন তিনি। এছাড়া ঢাকার গুলশানের নিকেতনের কয়েকটি ফ্ল্যাটের মালিক রতন।