‘ওয়ান্স বিট্রেয়ার অলওয়েজ বিট্রেয়ার’। ২৪শে সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার ফেসবুকে সর্বশেষ মন্তব্য করেছেন। তবে সেপ্টেম্বর মাসে তিনি তার স্যুটেড ও স্টাইলিশ আলোকচিত্র আগের থেকে নিয়মিত এবং ঘন ঘন পোস্ট করছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
২৪শে সেপ্টেম্বরে ষোলটি ছবি পোস্ট করেছেন। এতে ৩ হাজার ৩শ কমেন্ট, ২ হাজার ৪শ শেয়ার এবং ২৩ হাজার লাইক পড়েছে।
‘ওয়ান্স বিট্রেয়ার অলওয়েজ বিট্রেয়ার’। মানে ‘একবার যে বিশ্বাসঘাতক, সে সর্বদাই বিশ্বাসঘাতক’। রাজনৈতিক মহলে কথাটা তাৎপর্যপূর্ণ। নানা প্রশ্ন।
তিনি কি তার সংগঠনের দিকে তাকিয়ে বলেছেন। নাকি বিরোধী শিবিরের দিকে তাকিয়ে বলেছেন, সেটা কারও পক্ষে হলফ করে বলা সম্ভব নয়।
তবে পাঠক মন্তব্য করেছেন, অ্যাবসোলিউটলি স্যার। একজন মোশতাক, সর্বদা মোশতাক।
অ্যাডোনিস হাসান লিখেছেন , ‘তাহলে কি এক-এগারো পরবর্তী নেত্রীর বিরুদ্ধে বিট্রে করাটা এখনো প্রযোজ্য আপনার জন্য ?’
বাংলাদেশ রাজনীতি থেকে উইট এন্ড হিউমার উঠে গেছে। গণমাধ্যম থেকে রাজনৈতিক কার্টুন উঠে গেছে। রাজনীতিতে হাস্যরস নেই। অনেকে তাই বলছেন, ওকে ফ্যাশন সেদিক থেকে একটা নির্দোষ আমোদপ্রমোদের মঞ্চ হয়ে উঠেছে। মি. কাদেরের ফেসবুকে নানাজনের নানা মন্তব্য। কেউ প্রশংসা করছেন। কেউ সমালোচনা করছেন। কেউ স্যাটায়ার করছেন। এটা লক্ষণীয় যে, বাক স্বাধীনতাকে সম্ভবত অনুমোদন দিচ্ছেন মন্ত্রী। কারণ অনুমান করা চলে যে, তিনি নিন্দুকদের শায়েস্তা করতে পেইড কাউকে হয়তো নিয়োগ দেননি। অনেকের মতে, সেটা দিলে তা বোঝা যেত। যারা নিন্দা করছেন, তাদের মন্তব্যের পরপরই পাল্টা মন্তব্য দেখা যেত। কেউ গালি দিলেও তার পাল্টা গালি সেখানে নেই।
করোনাকীর্ণ বিষন্ন রাজনৈতিক পরিবেশে তাই তার ওকে ফ্যাশন হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক বিনোদনের একটা ঝরনা, মন্তব্য করেন অনেকে।
মুহাম্মদ শিফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘মোস্ট হ্যান্ডসাম পারসন ইন আওয়ার কান্ট্রি, এন্ড এন্ড ম্যান অফ ইনস্পিরেশন। ইয়ং জেনারেশন ফলো ইউ স্যার। আই এম ইওর প্রাউড ফ্যান’।
তিনি টেলিফোনে কথা বলছেন এমন একটি ছবি ২৪শে সেপ্টেম্বরের পোস্টে আছে। পাঠকের মন্তব্য : ‘হ্যালো, আন্টি আমি তো বাসায় নেই’।
এদিন আরেকটি ছবিতে তিনি সোফায় দু’ পা প্রসারিত করে বসে আছেন। সামিউল আহমেদ মন্তব্য করেছেন, ‘ মুসলমানি দেওয়ার কিছুক্ষণ পরের অবস্থা। ’
একটি ছবিতে তাকে সাদা পোশাকের স্কুল ছাত্রীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে । শান্ত মন্তব্য করেছেন, ‘‘ইয়েস এভরিওয়ান বিট্রেআর লাইক মাই এক্স গার্লফ্রেন্ড’।
১৭ই সেপ্টেম্বরে সেতু মন্ত্রীর মন্তব্য ছিল : ‘হিউজ চ্যালেঞ্জেস অ্যাহেড।’ লক্ষণীয়, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ এই মন্তব্যটিকেও রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন।
হলুদ টাই পরিহিত ওবায়দুল কাদের ১৭ই সেপ্টেম্বর ষোলটি ছবি পোস্ট করেছেন । ৪ হাজার ৭শ কমেন্টস। ১৯০০ শেয়ার। ৩০ হাজার লাইক। ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে তিনি আবার দশটি ছবি পোস্ট করেন এবং এবারেও একই শিরোনাম : হিউজ চ্যালেঞ্জেস অ্যাহেড। এর অর্থ- সামনে বিপুল চ্যালেঞ্জ।
সাব্বির আহমেদ লিখেছেন, ভারতের রয়েছে হৃত্ত্বিক রোশন। আমাদের আপনি আছেন স্যার । ইউ আর দ্যা টু স্টাইল আইকন অফ আওয়ার কান্ট্রি । আই ফিল ব্লেস টু বরন ইন ইয়োর টাইম।
২০শে সেপ্টেম্বর সেতু মন্ত্রীর মন্তব্য : ‘লাইফ উইল নট বি দে সেম এগেইন।’ জীবন আর কখনও আগের মতো হবে না। কেউ বলছেন, এটা করোনা–কথা। কেউ বলছেন, রাজনীতিও আর আগের মতো হবে না।
এদিন তেরটি ছবি । ২৮০০ কমেন্টস । ১০০০ শেয়ার । ২২ হাজার লাইক। সুপ্রিম কোর্টের একজন নারী ব্যারিস্টার রোমান হরফে বাংলায় মন্তব্য করেছেন: ‘ না না তা তো সেইম হবে না স্যার । আপনি থাকতে প্রতিদিনই তো নতুন বিনোদন।’
এদিনের পোস্টের সঙ্গেই দেখা যাচ্ছে শাড়ি পরিহিত এক তরুণী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে করমর্দন করছেন।
জনৈক প্রান্ত আলম মন্তব্য করেছেন ইংরেজিতে :
‘গার্লস অলওয়েজ টাচ গোল্ড।’
এরপর হৃদয় হাসান মন্তব্য করেছেন, ‘কাকু, ছবি যে এখন একা একা তোলেন’।
একদল তরুণী পরিবেষ্টিত সেলফি তোলার মতো একটি পোস্ট সম্পর্কে জনৈক ইমরান খান মন্তব্য করেছেন : ‘স্যার আপনার পোজগুলো দেখে আমি ইন্সপায়ার্ড হই’।
ফয়সাল রাকিব লিখেছেন , ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মৌমাছি।’
জহির আহমেদ লিখেছেন, ‘কখন যে আমাদের সময় শেষ হইবো।’ জনাব কাদেরের ঘড়ি দেখা ছবি ছিল এটি। একজন ‘উটমানী’ মন্তব্য করেছেন ইংরেজিতে: ‘ আপনার আলোকচিত্রী কি প্রতি মুহুর্তের ছবি তুলতে ক্লান্ত বোধ করছেন না ? আমি বলতে চাইছি, তিনি (আলোকচিত্রী) নিশ্চয়ই অনেক বেশি ক্লান্ত বোধ করছেন। আমি কল্পনা করতে পারি না যে, তার দিনগুলো কিভাবে কাটে। কারণ তাকে তো অব্যাহতভাবে তার ছবি তুলে যেতে হয়। তাই বলছি আলোকচিত্রীকে ধন্যবাদ দিন। আমিও অবশ্য সেই গরীব বেচারার জন্য খুবই দুঃখবোধ করছি। দিনের শেষে তার হাদুটো নিশ্চয়ই ব্যাথায় ভারি হচ্ছে।’
আরেক জন মন্তব্য করেছেন, ‘আপনি কখন কাজ করেন ? অর্ধেক সময় তো ফটোশুটে কেটে যায় । ক্রেজি ম্যান।’
ছবির জনক
জনৈক আব্দুর রহমান মন্তব্য করেছেন: ‘‘ইউ আর ফাদার অফ ফটোজ। কিপ গোইং’।
এদিনের পোস্টে এক তরুনীর সঙ্গে তার করমর্দনের ছবি ৬ দিন আগে পোস্ট করা । দুজনই হাসছেন । পারভীন সুলতানা সামা মন্তব্য করেছেন, ‘চোখ যে মনের কথা বলে’।
হিউজ চ্যালেঞ্জ টাইম অ্যাহেড।
এটা লক্ষণীয় যে, ২১শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদায়ী ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ। সেদিনও তিনি বলেছেন: ‘‘হিউজ চ্যালেঞ্জ টাইম অ্যাহেড’।
তেরোটি ছবি। ২২ মন্তব্য। ৬১০টি শেয়ার । ২৫ হাজার লাইক।
২৩শে সেপ্টেম্বর তিনি মন্তব্য করেছেন : ‘লাইফ উইল নট বি দ্যা সেম এগেইন’। লাল টাই পরিহিত তেরোটি ছবি । ৩ হাজার কমেন্টস । ১ হাজার শেয়ার এবং ২৫ হাজার লাইক।
ওবায়দুল কাদের চলতি মাসের গোড়ায় লিখেছিলেন: ‘সব থেকে খারাপ অবস্থা এখনো আসেনি’। এটা করোনাকালের নাকি রাজনীতিকালের তাও এক ধাঁধাঁ।
এদিনের পোস্ট করা ছবিতে কমেন্ট এসেছে ১ হাজার। শেয়ার হয়েছে ৪৬৮। লাইক এসেছে ১৫০০০।
৯ই সেপ্টেম্বর তিনি নয়টি ছবি পোস্ট করেছেন। পনেরশো কমেন্ট। ছয় শতাধিক শেয়ার। ২০ হাজার লাইক। এদিন তার মন্তব্য ছিল, ‘প্যানডেমিক ইজ ফার ফ্রম ওভার’।
১১ই সেপ্টেম্বর তিনি ছবি পোস্ট করেছেন ১৪ টি । কমেন্ট পড়েছে ২ হাজার। শেয়ার হয়েছে এগারোশো এবং লাইক পড়েছে ২৭০০০। এদিন তার মন্তব্য ছিল , ‘আই ওয়ার্ক হার্ড বিকজ আই লাভ মাই ওয়ার্ক’।
১২ই সেপ্টেম্বর । এদিনও তিনি স্টাইলিশ ছবি পোস্ট করেছেন। কমেন্টস পড়েছে ২১০০। ১২০০ শেয়ার। লাইক পড়েছে ৬৪ হাজার। মোজাম্মেল হক লিখেছেন, ‘‘আপনার দিন রাতের পরিশ্রমের ফলে দেশে বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনার মত সবাই কাজ করলে বাংলাদেশ ইউরোপ হয়ে যেত। আপনার সুস্থ জীবন কামনা করছি’।
এদিন তার কমেন্ট ছিল , ‘ দেয়ার ইজ নো সাবস্টিটিউট ফর হার্ডওয়ার্ক’।
১৪ই সেপ্টেম্বর তিনি মন্তব্য করেছেন , ‘ লাইফ ইজ মাই স্কুল’ ।
ব্লু টাই পরিহিত ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে মিমি করিম লিখেছেন, ‘‘আপনি আমার আইডল। যখনই আপনাকে দেখি, আগের থেকে আমার ভালো অনুভূতি জাগে এবং কাজে অনেক বেশি উৎসাহ পাই। আমি দেখি, জীবন অত্যন্ত সুন্দর । জাস্ট এনজয় ইট’।
১৫ই সেপ্টেম্বর তার মন্তব্য ছিল: হিউম্যানিটি ইজ মাই বুক। এদিন বারোটি ছবি। ১৭শ কমেন্টস । সাড়ে ৬ হাজার শেয়ার, ৪৬ হাজার লাইক।
টাইটানিক এবং মোনালিসা
আরেক জন মন্তব্য করেছেন: ‘‘আমি ফেসবুক ব্যবহার করি, কিন্তু এত অসাধারণ ছবি কখনোই দেখিনি। কবে শেষ কেঁদেছি মনে পড়ে না। কিন্তু সত্যি আজ এই ছবিটা দেখে কান্না আটকে রাখতে পারলাম না। মনকাড়া ডিজাইন আর চমৎকার ফিনিশিং এর মাধুর্যের সাথে নিখুঁত পিক্সেলের দারুণ সাম্য এই ছবিটিকে প্রাণ দিয়েছে,আবার মায়াভরা চাহনি দিয়েছে এক আবেগঘন সৌন্দর্যের ইংগিত। এই ছবিটি যদি না থাকত তবে রবীন্দ্রনাথ আর নজরুল সাহিত্য রচনা করতে পারতেন না, মাইকেল মধুসূদন দত্ত বুঝতে পারতেন না তার ভুল। এই ছবি একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছে দেশকে স্বাধীন করার প্রেরণা, যুগিয়েছে উদ্যম। আগের দিনের আলেকজান্ডার দি গ্রেটের কথা মনে আছে? উনার যুদ্ধ জয়ের রহস্য ও কিন্তু এই ছবিটিই। রহস্যজনক হলেও সত্য, মোনালিসার ছবিতে মোনালিসাকেও ঠিক এভাবেই হাসতে দেখা যায়। টাইটানিকের কথা মনে আছে? টাইটানিকের সাথেও এই ছবির এক বিরাট সংযোগ রয়েছে। সত্যিই, স্যালুট আপনাকে!!! আবারো এই মনোমুগ্ধকর ছবির জন্য ধন্যবাদ…..!!!ইতিবাচক’।